সর্বশেষ সংবাদ
Home / Uncategorized / লালমনিরহাটে আওয়ামী নেতার তথ্য গোপনের দ্বৈত প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিযোগ

লালমনিরহাটে আওয়ামী নেতার তথ্য গোপনের দ্বৈত প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিযোগ

রাজু মিয়া, লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলার সরকারি করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের সদ্য যোগদানকারী সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মোঃ মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং তথ্য গোপনের মাধ্যমে দ্বৈত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, মোঃ মনিরুল ইসলাম লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে এসএসসি এবং করিম উদ্দিন পাবলিক মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ সালে এইচএসসি এবং ২০০০ সালে স্নাতক (পাস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি উপজেলার দলগ্রাম দাখিল মাদ্রাসায় গত ১১/০৭/২০০২ইং তারিখে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) পদে আবেদন করে ০৪/০৮/২০০২ইং তারিখের ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্মারক নং- ১২/০২/নিয়োগ-(১), তারিখ- ০৬/০৮/২০০২ইং নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ০৮/০৮/২০০২ইং তারিখে উক্ত পদে যোগদান করে ফেব্রুয়ারি-২০০৩ মাসে এমপিওভুক্ত হন। যার ইনডেক্স নম্বর- ৬৯২৩৮৫। তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ ধারাবাহিকভাবে সোনালী ব্যাংক, কালীগঞ্জ শাখার হিসাব নম্বর-৭৬১৬/৩১ থেকে উত্তোলন করলেও কতৃপক্ষের অনুমতি কিংবা শিক্ষাছুটি ছাড়াই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০০৪ সালে স্নাতকোত্তর (শেষভাগ) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় শ্রেণি প্রাপ্ত হন। তিনি সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ এর নিকট আত্মীয় ও তাঁর পুত্র রাকিবুজ্জামান আহম্মেদ এর বন্ধু হওয়ার সুবাদে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এনটিআরসিএ পরীক্ষায় একজন ডামি প্রার্থীর বদৌলতে উত্তীর্ণ হন, যার রোল নং- ১০০০০৮৭৫৬৪/১১। ওই ডামি প্রার্থী পবিত্র কুমার রায় জেলার উত্তর দলগ্রাম স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। সনদটি মনিরুল ইসলামের হলেও ছবিটি পবিত্র কুমার রায়ের। একইসাথে তিনি ২০১১ সালে এবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৩.৬০ ফলাফলের একটি সনদ বাগিয়ে নেন। অথচ, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য বিষয়গুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করলে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।
স্বৈরাচারী হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন যখন সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে একটি করে বেসরকারি হাইস্কুল ও একটি কলেজকে সরকারি করার ঘোষণা দেন, তখন তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূতভাবে জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে তৎকালীন করিম উদ্দিন পাবলিক ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক পদে আবেদন করেন। গত ২০/১২/২০১৫ইং তারিখের গভর্ণিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্মারক নং- ৪-ক.পা.ম/৫৩৭৫/১৫, তারিখ- ২১/১২/২০১৫ইং নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২২/১২/২০১৫ইং তারিখে উক্ত পদে যোগদান করেন। ওই সময়ে আরও কয়েকজন মেধাবী প্রার্থী নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও তাঁদের রেজুলেশন পরিবর্তনের মাধ্যমে যোগদান দেখানো হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় অধিভুক্তির জন্য যাদের কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেককেই কলেজটি সরকারিকরণের প্রাক্কালে যোগদান দেখানো হয়নি।
২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে করিম উদ্দিন পাবলিক ডিগ্রি কলেজটি সরকারি ঘোষণা করা হলে তথ্য গোপন করে মনিরুল ইসলামের জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে একইসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। সরকারি বিধি ও আইন ভঙ্গ করে কিভাবে তিনি দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে যাচ্ছেন এবং একই সময়ে উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করেছেন, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ। তবে অভিযোগ ওঠেছে, মনিরুল ইসলাম উক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র দাখিল করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিভ্রান্ত করে মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে পদ সৃজন সহ যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন করেন। এমনকি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তদবির করে সরকারি কলেজের প্রভাষক পদে সদ্য যোগদান করেন। তৎকালীন সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ এর ডিও লেটার নিয়ে অবৈধ নিয়োগ সহ যোগদান করেন, যা এখনো জমাকৃত ব্যাক্তিগত ফাইলে সংযুক্ত আছে। একইভাবে অর্থমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে টাকা স্পেশালভাবে ছাড় করে সোনালী ব্যাংক, কালীগঞ্জ শাখা থেকে উত্তোলন করেছেন তিনি। এমনকি আগের প্রতিষ্ঠানের উত্তোলনকৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার ভুয়া কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করলেও তিনি আদৌ কোনো টাকা ফেরত দেননি। ৫ আগষ্টের স্বৈরাচার পতনের পর তার নামে একাধিক হত্যা মামলা থাকায় আত্মগোপনে চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকেও এখনো তিনি তাঁর মাসিক বেতন উত্তোলন করে চলেছেন। বর্তমানে তিনি পলাতক থাকায় আত্মগোপনে থেকে তাঁর লোকজনের মাধ্যমে বকেয়া অর্থ বরাদ্দের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বাজেট শাখায় তদবির করছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য মতে, কোনো শিক্ষকের একইসাথে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ নেই। এটা করলে হবে প্রতারণা ও জালিয়াতির শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মনিরুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
উত্তর দলগ্রাম স্কুল এ্যাণ্ড কলেজের শিক্ষক পবিত্র কুমার রায় প্রথমে বলতে রাজি না হলেও একপর্যায়ে বলেন, আমি হিন্দু মানুষ, ক্ষমতার জোরে মামলা-হামলার ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে আমাকে অনেকটা বাধ্য করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ রশীদুজ্জামান আহম্মেদ বলেন, দ্বৈত চাকরির বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি অবসরে আছি, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে বর্তমান প্রশাসন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন।

About shakhawat khan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস২০২৪ পালিত

সদর প্রতিনিধি জামালপুর: অদ্য ৫ অক্টোবর ২৪ জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস ২০২৪ ...