সর্বশেষ সংবাদ
Home / সারাদেশ / রংপুর বিভাগ / ঠাকুরগাঁওয়ের  আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী মৎস্যচাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ের  আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী মৎস্যচাষিরা

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের মাঝগাঁও গ্রামে পুকুর থেকে মাছ ধরছেন চাষিরা। ঠাকুরগাঁও জেলায় আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মৎস্যচাষিরা। ট্যাংক ও পুকুরে সেচ দিয়ে মাছ চাষ করে বদলেছেন ভাগ্যের চাকা। স্বল্প জমিতে স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া  ঠাকুরগাঁও জেলায় ট্যাংক পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি উঁচু, তাই খরা মৌসুমে পুকুরে পানি থাকে না। এ কারণে ট্যাংক পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন অনেকে। আবার অনেক মৎস্যচাষি পুকুরে সেচব্যবস্থা করেও খরা মৌসুমে মাছ চাষ করছেন। মাছ চাষ করে মাসে তারা ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছেন। কথা হয়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের মাঝগাঁও গ্রামের সাকিব  সঙ্গে তিনি জানান, করোনার সময় কলেজ-টিউশন কিছুই ছিল না তার। সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকতেন। ঠিক তখন সিদ্ধান্ত নেন মাছ চাষ শুরু করার। পিকেএসএফ এবং ইএসডিওর সার্বিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। প্রথমে ৫০ হাজার লিটারের একটি ট্যাংক তৈরি করে তেলাপিয়া মাছের রেণুপোনা এনে চাষের কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। আধুনিক পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় ট্যাংক তৈরি করে অনেক বেশি মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখতে থাকেন সাকিব। তার পাশাপাশি পুকুরের সেচ দিয়েও করতে থাকেন মাছের চাষ। বর্তমানে তার রয়েছে তিনটি পুকুর ও দুটি ট্যাংক, যা থেকে প্রতি মাসে তিনি আয় করছেন ১ থেকে দেড় লাখ টাকা।
সাকিবের মতোই ট্যাংক ও পুকুরে সেচ দিয়ে মাছ চাষ করে ঠাকুরগাঁও জেলায় শতাধিক মৎস্যচাষি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। যেহেতু ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি উঁচু, তাই খরা মৌসুমে পুকুরে পানি থাকে না। এ কারণেই ট্যাংক পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ পদ্ধতিতে স্বল্প জমিতে স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। আবার অনেক মৎস্যচাষি পুকুরে সেচব্যবস্থা করেও খরা মৌসুমে মাছ চাষ করছেন।
মৎস্যচাষি আনসারুল, ছবি জানান, স্বল্প পুঁজি ও অল্প জায়গায় মাছ চাষ করা যায়। এসব মাছ মাত্র তিন থেকে চার মাসেই বিক্রির উপযোগী হয়। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে ঝুঁকি কম ও মুনাফা বেশি। তাই শিক্ষিত বেকাররাও এভাবে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি আগে চাকরি করতাম, চাকরি ছেড়ে এখন মাছ চাষ করছি। এখন বর্তমানে আমার সাতটি পুকুর রয়েছে, যা থেকে আমি বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আয় করি।’ আরেক মৎস্যচাষি মো. শাহেদ হোসেন বলেন, ‘আমি ট্যাংকে মাছ চাষ করছি, এতে অনেক উপকার আছে। অল্প জায়গায় অধিক মাছ চাষ করা যায়। পানি শুকানোর কোনো ভয় নেই। নির্বিঘ্নে মাছ চাষ করা যায়।’ এ ধরনের মৎস্য খামার হওয়ায় তৈরি হয়েছে অনেকের কর্মসংস্থানের। যেখানে কাজ করে অনেক বেকার মানুষই জীবিকা নির্বাহ করছে। মাছের খামারে কাজ করা যুবক শরিফুল  বলেন, ‘আগে বেকার জীবনযাপন করতাম। এই খামার হওয়ার ফলে আমার মতো আরও বেশ কয়েকজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কাজ করে নিজের যেমন চাহিদা পূরণ করতে পারছি, তেমনি পরিবারের দেখাশোনাও করতে পারছি।’ এই মৎস্যচাষিদের সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা পিকেএসএফ এবং ইএসডিও থেকে ঋণ ও কারিগরি সহায়তা এবং অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানান, ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা সমম্বিত কৃষি ইউনিটের মৎস্য খাতের আওতায় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ঠাকুরগাঁও সদরের শিবগঞ্জ, শান্তিনগর, সালন্দর, গড়েয়া, ফারাবাড়িসহ পাঁচটি শাখার মাধ্যমে মৎস্য খাতের উন্নয়নে কাজ করছি। এরই ধারাবাহিকতায় ১ হাজার ৬১৫ জন খামারিকে নানা ধরনের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের ভৌগোলিক কারণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৎস্য চাষের জন্য তেমন উপযোগী ছিল না। তবে মৎস্য খাতে উন্নয়নে আমরা যে কাজগুলো করেছি এর ধারাবাহিক উদ্যোগগুলোর কারণে ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে মৎস্য চাষে যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’ ঠাকুরগাঁও জেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মোছা. আয়েশা আক্তার জানান, সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি ইএসডিও মৎস্য সেক্টর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরে সেচের মাধ্যমে এবং ট্যাংকে মাছ চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন প্রোটিনের চাহিদা মিটছে, অন্যদিকে বেকারত্ব দূর হচ্ছে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

মিঠাপুকুরে আনসার ও ভিডিপি’র উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ  ও গাছের চারা বিতরণ

মিঠাপুকুর প্রতিনিধি :   “শান্তি শৃঙখলা উন্নয়ন নিরাপত্তায় সর্বত্র আমরা”-এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে ...