বর্তমান দেশবাংলা ডেস্কঃ
বাড়ির ছাদে খেলার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপের লাশ বুকে নিয়ে বাবা দিপক কুমারের আহাজারিতে স্বজনদের শান্তনা দেওয়ার ভাষা ছিল না। স্ট্রেচারে কম্বলে ঢাকা তার নিথর দেহ।
গত শুক্রবার (২০ জুলাই) বিকালে নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাসার ছাদে খেলার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল শিশুটি। পাঁচদিন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থেকে গত বুধবার (২৪ জুলাই) মারা যায় রিয়া। হাসপাতালে আসার পর থেকে তার আর জ্ঞান ফেরেনি। এ কারণে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করাও সম্ভব হয়নি।
একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে বাবা দীপক কুমার গোপ বলেন, ‘আমার তো সব ছিল। কী হবে এখন? কার কাছে চাইবো বিচার। অনেক সাধনার ধন ছিল আমার। বিয়ের দীর্ঘদিন পরে আমার সন্তানটি হয়। আর এই সন্তানটির লাশ আজ আমার কাঁধে, মর্গে মর্গে ঘুরতে হচ্ছে। ঘর মাতিয়ে রাখতো বাচ্চাটি।’
বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের সংঘাতে নিহতদের মরদেহের অপেক্ষায় এখনো রয়েছেন স্বজনরা। সেখানে অপেক্ষারতরা আর্তনাদ করছেন। কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য থানায় থানায় দৌড়ঝাঁপ করছেন।
আবার কেউ এক থানা থেকে আরেক থানায় ঘুরছেন। সন্তানের লাশ স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়ার সময় কথা বলতে পারছিলেন না শিশুটির বাবা দীপক কুমার গোপ। শোকে আকুল দীপক কোনো কথাই বলতে চাইলেন না। শুধু বললেন- ‘আমার মেয়েকে কেন মারা হলো। আপনারা কি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? কথা বলে আর কী হবে?’
জানা যায়, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। তাকে নিয়ে বাবা-মায়ের বড় স্বপ্ন ছিল। তাদের বিয়ের দীর্ঘদিন পর জন্ম হয় রিয়ার। সারাক্ষণ চঞ্চলতায় ঘর আলো করে রাখতো শিশুটি। গুলিতে আহত হওয়ার পর থেকে শিশুটির মা নাওয়া- খাওয়া ছেড়ে পাগলপ্রায়। দীপক গোপ বার বার বলছিলেন, ‘মেয়ের লাশ নিয়ে কীভাবে এখন মায়ের কাছে যাব।’
শিশুটির স্বজনরা জানান, নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটিতে তাদের বাড়ি। গত শুক্রবার বিকালে খেলার জন্য বাড়ির ছাদে যায় রিয়া। এ সময় কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে আহত হয় সে।
চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত বুধবার সকালে মারা যায় রিয়া।