সর্বশেষ সংবাদ
Home / রাজনীতি / সাংগঠনিক সংকট অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগঃ ‘যারা টাকায় পদ কিনে, তারা মাঠে নামবে কেন’

সাংগঠনিক সংকট অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগঃ ‘যারা টাকায় পদ কিনে, তারা মাঠে নামবে কেন’

 

বর্তমান দেশবাংলা ডেস্ক:

আওয়ামী লীগে পদ-বাণিজ্য বন্ধের জোর দাবি উঠেছে। রাজধানীর থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের দলীয় একাধিক নেতা এ দাবি জানিয়ে বলেন, সম্মেলনের পর নতুন করে পদ নিতে গেলে অনেকেরই টাকা লাগছে। টাকা দিলেই পদ পাওয়া যাবে—এটা যেন এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে।

আর যেসব নেতা টাকায় পদ কিনেন তারা মাঠে নামবেন কেন? আর টাকা দিয়ে বেশির ভাগ পদ তো বাগিয়ে নিচ্ছেন হাইব্রিড, সুবিধাভোগী, বিতর্কিত ও স্বাধীনতাবিরোধী মতাদর্শীরা। দলের ক্রান্তিকালে এরা তো মাঠে থাকবে না—এটাই স্বাভাবিক।

মনে রাখবেন দুর্দিনে ত্যাগী ও সত্যিকারের আদর্শ ধারণকারী নেতাকর্মীরাই ঝুঁকি নেন। সুবিধাবাদী নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। যা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা চলাকালে চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সংকট নিয়ে গত তিন দিনের পর্যালোচনা সভায় তৃণমূলের নেতারা এ কথা বলেন। দীর্ঘদিন পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা দুই সপ্তাহ আগে জমা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় দপ্তরে।

অভিযোগ উঠেছে, কমিটিতে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ফুটপাত-জমি দখলবাজ, ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত ও হত্যা মামলার আসামিরাও স্থান পেয়েছে। একটি পদের জন্য ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেতার পকেটে ঢুকেছে। পদ বাগাতে নেতাকে দামি গাড়ি উপহারেরও ঘটনা ঘটেছে।

আবার মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও বনিবনা না হওয়ায় ছিটকে পড়েন অনেকে। এমনকি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রস্তাব করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকের নামও। এছাড়া ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে শীর্ষ নেতার সন্তানসহ স্বজনের নামও তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে।

সূত্র জানায়, পর্যালোচনা সভায় এ প্রসঙ্গটি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এই প্রস্তাবিত কমিটির কারণেই দলের অনেকেই সহিংসতা মোকাবিলায় মাঠে নামেননি। এ কারণে থানা-ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটি আর কখনো আলোর মুখ দেখবে না।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কিছু এলাকা চিহ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ। এসব এলাকার সংসদ সদস্য, দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে ধারাবাহিক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা ১১, ১৪, ১৫, ১৬ আসনের দলীয় সংসদ সদস্য, এসব এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে পর্যালোচনা সভা করেন ওবায়দুল কাদের।

তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে হট্টগোলের ঘটনাও ঘটেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতা প্রতিরোধে ‘কে মাঠে ছিল, আর কে মাঠে ছিল না’ সেগুলো নিয়েই সভায় উচ্চবাক্য ও ‘চিল্লাচিল্লি’ হয় বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে মাঠে না থাকার অভিযোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে এই হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।

সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বি এম মোজাম্মেল হক, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ। সভায় বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা বক্তব্য রাখেন।

নেতারা যখন বক্তব্য দেন, কর্মীরা তখন হট্টগোল শুরু করেন। হট্টগোলের কারণ জানতে চাইলে একাধিক নেতা বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দুষ্কৃতকারীরা সহিংসতা চালায়। এ সময় যারা প্রতিরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেননি, তারা যখন নিজের অবস্থান তুলে ধরে নিজেকে জাহির করেন, তখন সেই এলাকার নেতাকর্মীরাই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। নেতাকর্মীদের হট্টগোল দেখে অনেক নেতাকেই বক্তব্য থেকে বসিয়ে দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

জানা গেছে, পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন, মিরপুর ৯৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির উদ্দিনসহ বেশ কয়েক জন নেতা যখন বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজের মাঠে থাকার কথা বলেন, তখন উপস্থিত অনেকে প্রতিবাদ করেন। নেতাকর্মীদের হট্টগোলের কারণে বক্তব্য থেকে তাদের বসিয়ে দেওয়া হয়।

থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের তিন নেতা বলেন, টাকা দিয়ে পদ বিক্রি বন্ধ করলে সাংগঠনিক সংকট বন্ধ হবে। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মিরপুরের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা দেশের বাইরে অবস্থান করেছিলেন। তিনি দেশে না থাকলেও তার পক্ষে সেই এলাকার এক কাউন্সিলর গুণগান করতে শুরু করেন। তখন নেতাকর্মীরা হট্টগোল শুরু করেন। বলতে থাকেন যে, তিনি (ইলিয়াস মোল্লা) তো দেশেই নেই। তার আবার অবস্থান কী?

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নেতাদের কাছ থেকে বিবরণ শুনতে কয়েক জনকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বক্তব্য দিতে এসে অনেকে নিজের গুণগান গাইতে শুরু করেন। আবার অনেকে মাঠে ছিলেন না, তাদের বক্তব্য দিতে দেখে অনেকে উত্তেজিত হয়ে যান। তখন তাদের আমরা বসিয়ে দেই।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ: হানিফ

  সদরুল আইন: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ...