সর্বশেষ সংবাদ
Home / অপরাধ / শিক্ষক কতৃক ৫ম শ্রেনীর ছাত্রীকে বিয়ে করার ঘটনা ফাঁস এলাকায় তোলপাড়

শিক্ষক কতৃক ৫ম শ্রেনীর ছাত্রীকে বিয়ে করার ঘটনা ফাঁস এলাকায় তোলপাড়

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের শিক্ষক কতৃক ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ফুসলিয়ে ফাঁদে ফলে বিয়ে করার ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে এলাকায়। নানামুখে চলছে নানা সমালোচনা, শিক্ষক কর্তৃক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে এবং কলঙ্কিত করার ঘটনায় কোমলমতি মেয়েদের পড়াশোনার জন্য বিদ্যালয় পাঠাতে চরম দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল। কোমলমতি বাচ্চাদের কলঙ্কিত করা এ ধরনের চরিত্রহীন লম্পট শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চান অভিভাবক মহল।

অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল করিম সবুজ (৩৫) উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের হাড়িশ্বর এলাকার আব্দুস সালাম এর ছেলে বলে জানা গেছে। বর্তমান তিনি উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের হাড়িশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।

দীর্ঘদিন পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দাহবী ডিমলা কাচারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম সবুজ গত ১৮/ ৮/ ২০১৮ ইং ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী (ছদ্ম নাম কুমকুম) কে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে ফুসলিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে। পরে আরও গভীর করার নেশায়, লালমনিরহাট নোটারী পাবলিকে এভিডেভিড এবং এক লক্ষ টাকা দেনমোহর করে রেজিস্ট্রি কাবিন করে তার বড় বোন সাবিনা ইয়াসমিন রিনার ভাড়া বাসা সাপ্টিবাড়িতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে।

বিয়ের পর সবুজ নিয়মিত মেয়েটির বাসায় গোপনে যাওয়া আসা করত। মেয়েটিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত। এ সময় ছাত্রীর পিতা জীবিকার তাগিদে কুমিল্লায় কাজ করতো। এভাবে দীর্ঘদিন যাওয়ার পর হঠাৎ এ ঘটনাটি সবুজের প্রথম স্ত্রী ময়না বেগম জানতে পারলে, স্বামী সবুজের সাথে সংসারে চরম দ্বন্দ্ব ও অশান্তির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্বামী- স্ত্রীর দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। ফলে বিভিন্ন ফন্দি ধারন করে এলাকার কতিপয় ব্যক্তিদের নিয়ে দেওয়ানী- দরবার ধরে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিয়ের ব্যাপারটি মেয়ের পরিবার কে প্রকাশ না করার জন্য হুমকি- ধামকি দিয়ে ধামাচাপা দিয়ে দেয়। মেয়ের পিতা গরিব ও অসহায় হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশিদূর এগুতে পারেনি।

ছাত্রী (কুমকুম-ছদ্ম নাম) বলেন, “আমি তখন ৫ম শ্রেনিতে পড়ি, আমি ভালো করে কিছুই বুঝতাম না। সবুজ স্যার আমাকে বিভিন্ন রকম কথা বলে আমার সাথে সম্পর্ক তৈরি করে, প্রেম কি জিনিস তা তো আমি বুঝতামই না। একদিন হঠাৎ করে দুইটি কাগজ এনে আমার নাম লিখতে বলে, আমি সরল বিশ্বাসে আমি নাম লিখে দেই।পরে সবুজ স্যার আমাকে বলে এই দুইটি বিয়ের এভিডেভিড ও কাবিননামা। আজ তোমার আমার বিয়ে হয়ে গেলো, আজ থেকে তুমি আমি স্বামী-স্ত্রী। তারপর থেকে স্যার আমার বাড়িতে গোপনে আসা যাওয়া করতো। এবং আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি”।

এ বিষয়ে ছাত্রীর বাবা কাইয়ুম মিয়া বলেন, “সবুজ স্যার প্রায় সময় আমার বাড়িতে আসতো আমার মেয়ের সাথে দেখা করতো। কিন্তু তখন আমি জীবিকার তাগিদে কুমিল্লায় থাকতাম। এলাকার মানুষের কাছে আজেবাজে কথা শুনতাম সবুজ স্যার আমার বাসায় আসা যাওয়া নিয়ে। হঠাৎ একদিন সবুজের বাসার লোকের কাজ থেকেই শুনতে পেলাম আমার মেয়ের সাথে সবুজের বিয়ে হয়েছে। তখন আমি বাড়ি চলে আসি তারপর বিয়ের ঘোষণা জানতে পারি। অনেক জায়গায় বিচার দিয়েও কোন সমাধান পাইনি। আমি গরিব মানুষ কাকে কি বিচার দিবো আমার তো কেউ নেই, কে করবে এই লম্পট শিক্ষকের বিচার। পরে সবুজের বাসা থেকে তার ভাই,তার স্ত্রী সহ স্কুলের শিক্ষকরা সহ আমার বাসায় এসে ঘটনাটি প্রকাশ না করতে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আমার মেয়ের কাজ থেকে একটি কাগজে সই নিয়ে চলে যায়। পরে আর কেউ আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ করে নি। আমি ভয়ে কাউকে বিষয়টি জানাতে পারি নি”।

এ বিষয়ে শিক্ষক রেজাউল করিম (সবুজ) বলেন, “আমার ছাত্রীর বাবার কাছে আমি প্রায় ১ লক্ষ টাকা পেতাম। কিন্তু তার বাবা আমার টাকাটা দিতে তালবাহানা করে। যার কারণে আমি তার মেয়ে মানে আমার ছাত্রীর সাথে কৌশলে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে বিয়ের নামে নাটক করি। ভুয়া কোর্ট এভিডেভিড ও ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে আমার ছাত্রীকে আমি বিয়ে করি যাতে ছাত্রী বুঝতে পারে যে তার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এবং বিয়ের সকল কাগজে সব ধরনের স্বাক্ষর ছিলো ভুয়া ও নকল। এভাবে বিয়ের নামে নাটক করে আমি তার সাথে তার বাড়িতেই অন্তরঙ্গ মুহুর্ত কাটাই। এভাবে অনেক দিন যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা হলে এলাকার দেওয়ানী- দরবার ধরে বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলা হয়েছে”।

এ বিষয়ে শিক্ষক সবুজের বড় ভাই জয়নুল আবেদীন নয়ন বলেন, “আমার ছোট ভাই সবুজ ঘরে বউ থাকা সত্ত্বেও তার স্কুলের ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কৌশলে আমার ছোট বোন রিনার বাড়ি সাপ্টিবাড়িতে আমার মায়ের উপস্থিতে তাকে বিয়ে করে তার সর্বনাশ করে। তার এই অপকর্ম ও অন্যায় কাজে বাধা দিলে সে আমাকে হুমকি ও মারতে আসে। ঠিক তখন থেকে মা সহ সবাই আমার বিরুদ্ধে চলে যায়। আমি চাই আমার এই লম্পট ভাই এর উচিত শিক্ষা হোক”।

এ বিষয়ে সুন্দ্রাহবী ডিমলা কাচারি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রাজশাহীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

এই রাজশাহী অফিস: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার দায়ে গণপিটুনিতে ...