মোঃ নমশের আলম, শেরপুর প্রতিনিধি::
শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ৬ নং চরের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের পশ্চিম পাড়া ও মধ্যপাড়া এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় এবং দশানী নদীর ৭ নং চর বাজার থেকে ব্রহ্মপুত্রের মোহনা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উভয় নদীতে পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
৭ নং চর বাজার, জামে মসজিদ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকিতে রয়েছে। বহু মানুষ ইতিপূর্বে তাঁদের ঘরবাড়ি এবং শত শত একর জমি হারিয়েছেন। এখন আবারো কদিন থেকে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ ও ৭ নং চরের ব্রহ্মপুত্র নদ এবং যমুনার শাখা দশানী নদীর ভাঙনে নদী পাড়ের মানুষ নিঃস্ব হতে বসেছে। বছরের পর বছর বাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছেন তারা। কিন্তু তাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। এতে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে কয়েকশ পরিবার।
ব্রহ্মপুত্র নদের ৬ নং চরে গিয়ে দেখা গেছে নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিতে নারি পুরুষ সকলেই ব্যস্ত। পশ্চিম পাড়ার ৮১ বছরের বৃদ্ধ আবুল মিয়া একটি লাঠিতে ভর করে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে, তার চোখে কেবল পানি ঝরছে। তিনি বলেন, ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ গৃহস্থ ছিলাম। আমার আরো তিন ভাই হুসেন, ছামিদুল, কালু মিলে ৬০ বিঘা ফসলি জমি ব্রহ্মপুত্র গিলে নিয়েছে। আগে আমার বাড়ি ছিল নদীর অপর পাড়ে। ভাঙনের মুখে বাড়ি সরিয়ে এপারে এসে তিনবার বাড়ি সরিয়েছি। এখন আর আমার বাড়ি করার মতো জায়গাও অবশিষ্ট নেই।
আমিরুননেছা বলেন, ঘর সরিয়েছি ৪ বার। সন্তানদের নিয়ে এখন কোথায় যাব। জমি যেটুকু ছিল সব তো নদীতে চলে গেছে।
আরশাদ আলী, মোশাররফ, শেখ ফরিদসহ অনেকেই কথা বলেন। তাদের দাবি সকলেই তারা একাধিকবার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। এখন আবার তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত দুদিনের ব্যবধানে অন্তত একশ মিটার সরে এসে বাড়িঘর গ্রাস করছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। সেইসাথে নদী ভাঙ্গনের ফলে তাদের ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হতে বসেছেন।
কেউ কেউ বলেন , ‘এ পর্যন্ত ৭-৮ বার বসতবাড়ি সরিয়েছি। বসতভিটা ও ফসলিজমি সব নদীতে চলে গেছে। এখানে একটি বাঁধ করে দিলে আমরা বেঁচে যাই।
গত দু’দিন থেকেই যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজানে অনেক এলাকার বন্যা দেখা দিয়েছে। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে গতকাল পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে উজানের সানি নেমে এসে এসব এলাকায় বন্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা যেমন বাড়ছে, তেমনি নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ভাঙন রোধের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, শেরপুরের বেশ কয়েকটি নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা নদী গুলোর ভাঙ্গন এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছি। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে অবহিত করেছি। স্থায়ীভাবে ব্যবস্থার নেয়ার জন্য আমরা ডিপিপি পাঠিয়েছি। সেটা অনুমোদন হলে ওই অঞ্চলের ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।