সর্বশেষ সংবাদ
Home / রাজনীতি / রাজনৈতিক মৃত্যু ফাঁদে গাজীপুর-৩ আসনে আ.লীগের একাংশের রাজনীতি

রাজনৈতিক মৃত্যু ফাঁদে গাজীপুর-৩ আসনে আ.লীগের একাংশের রাজনীতি

 

সদরুল আইন :

১৯৯১-২০১৮ ইং গাজীপুর -৩ আসনে আ’লীগের রাজনীতির জীবন্ত কীংবদন্তি ছিলেন এ্যাড রহমত আলী।

প্রখর বুদ্ধিমত্তা আর কেন্দ্রিয় শক্ত লবিং ও ব্যক্তি পরিচিতি দিয়ে তিনি আ.লীগের সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতায় পরিনত করেছিলেন নিজেকে।পাশাপাশি শক্ত হাতে গাজীপুর-৩ আসনকে প্রায় ৩০ বছর নিজের করে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

যদিও তার রাজনীতি,নিজ আসন ধরে রাখা,আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, পারিবারিক বলয় তৈরি,প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হতে না দেওয়াসহ বহুবিধ অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।তারপরও তিনি সবার কাছে গ্রহনযোগ্য মানুষ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শ্রীপুরের সিংহ পূরুষ।

বার্ধক্যজনিত কারনে নানা অসুস্থতায় ২০১৪ সালের পরে পিতার আসনে পরবর্তি এমপি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতির মাঠ চষে বেড়ান তার পুত্র জামিল হাসান দুর্জয়।

ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারি জামিল হাসান দুর্জয়ের রাজনৈতিক পড়াশোনা, কোরআন হাদিস ও সমসাময়িক রাজনৈতিক জ্ঞান ছিল প্রখর।তার উদ্দিপ্ত বক্তব্য, রাজনৈতিক উদ্ধৃতি, রাজনীতির বিজ্ঞ মহলে ছিল প্রশংসিত ও সমাদৃত।

অনেকেরই ধারনা ছিল নন্দিত এমপি,আ’লীগের নীতি নির্ধারক এ্যাড রহমত আলীর পর শ্রীপুরের রাজনীতির দৃশ্যপটে আসবেন তার পুত্র জামিল হাসান দুর্জয়।

কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বহু নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে পালাপদল ঘটে এই আসনের আ’লীগের রাজনৈতিক অভিযাত্রায়।পিতার দেখানো পথে হাঁটতে পারেননি পুত্র।পিতার আদর্শকে ব্যবহার করলেও ধারন করতে পারেননি তিনি ব্যক্তি জীবনে।

একাদশ সংসদে নতুন মুখ হিসেবে ৩০ বছর পর এমপি হতে পারেন জেলা আ’লীগের নন্দিত প্রিয় মুখ ইকবাল হোসেন সবুজ।কিন্তু কেন্দ্রিয় লবিং থেকে দুরে সরে যাওয়া,অন্তরালে ঝুট ব্যবসায় জড়িয়ে থাকায় অভিযুক্ত থাকা,পরিবারের অন্তত দুই সদস্য শিল্প কলকারখানা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বনে যাওয়া,অতি পান্ডিত্য এবং তার পাশে থাকা বিপুল জনগোষ্টিকে আশাহত করা বিশেষ করে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সঠিক লোকদের পদায়ন করতে না পারায় তার বিশাল জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামে এবং তিনিও ছিটকে পড়েন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলিয় মনোনয়ন থেকে।

স্বতন্ত্র নির্বাচন করে কাঙ্খিত ভোট পেলেও এমপি হতে পারেননি তিনি।ক্ষমতার ঘুড়ির লাটাই চলে যায় এড রহমত আলীর কন্যা একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসির হাতে।তিনি বর্তমানে গাজীপুর-৩ আসনের এমপি ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী।

জামিল হাসান দুর্জয় নমিনেশন না পাওয়ার পেছনে ছিল শ্রীপুরের ঘৃণিত কিছু মানুষের অপরাজনীতি,তারা ছিলেন দুর্জয়ের শীর্ষ সুবিধাভোগী উপদেষ্টা।এদের বেশিরভাগ এখনো তার পাশেই রয়েছেন।

এরা নিজেদের স্বার্থের প্রয়োজনে দুর্জয়কে রাজনৈতিকভাবে শুধু পথেই বসায়নি, এ্যাড রহমত আলী পরিবারকে করেছে চরম বিতর্কিত।এই চক্রের বলয়ে এখনো এই পরিবারের একাংশ বন্দি।

এ্যাড রহমত আলী ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে ইকবাল হোসেন সবুজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করায়ে আব্দুল জলিলকে মনোনয়ন দিয়ে একটি বিতর্কিত ফলাফলের মাধ্যমে যে বিজয়ের হাসি হেসেছিলেন সেদিন, তা তার রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল ছিল বলে মনে করেন এই এলাকার রাজনীতি সচেতন মহল।সেদিন সেই ভুলটি তিনি না করলে হয়ত শ্রীপুরের রাজনীতির ইতিহাস আজ অন্যভাবে লেখা হত।

অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত উপজেলা নির্বাচনে এমপি হওয়ার আশা আপাতত ত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এড জামিল হাসান দুর্জয়।শপথও নিয়েছেন।তার চেয়ারম্যান হওয়ার নেপথ্যে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চাকরিও হারিয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

গত উপজেলা নির্বাচনে পেশীশক্তির দাপট ছিল চোখে পড়ার মত।দ্বি-শক্তির চরম উত্থানের সামনে দাড়িয়েও ঈর্ষনীয় ভোট পেয়ে চমকে দেন আব্দুল জলিল।এই উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পাদপীঠে আবার ফিরে আসেন এড রহমত আলী পরিবার।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইকবাল হোসেন সবুজ ক্ষমতায় আসার পর ঈর্ষণীয় জনজোয়ার দেখে এখানকার মানুষের ধারনা ছিল অন্তত ৩/৪ মেয়াদ এই আসনে এমপি সবুজের কাছ থেকে টিকেট ছিনিয়ে নেওয়া কারো পক্ষে সম্ভব হবে না।বাস্তবে এমপি সবুজ ঝরে গেছেন এক মেয়াদ পরেই, তার নিজের অদুরদর্শিতার চোরাবালিতে,যা জনগনের প্রত্যাশিত ছিল না।

অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন, উপজেলা নির্বাচনের ভুলের খেসারত বর্তমান সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজকে দিতে হয়েছে ২০২৩ সালের সংসদ নির্বাচনে তার রাজনীতির চলার পথে।

এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর শ্রীপুরের মানুষ ভেবেছিল এখানকার রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেল এ্যাড রহমত আলী পরিবার ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি হওয়ার মধ্য দিয়ে।

বাস্তবে তা হয়নি।সংরক্ষিত মহিলা আসনে অপ্রত্যাশিতভাবে এ্যাড রহমত আলী তণয়া অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসীকে এমপি করার মধ্য দিয়ে সঙ্কটময় অবস্থা থেকে শ্রীপুরের রাজনীতিতে ফিরে আসেন এ্যাড রহমত আলী পরিবার।

অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নির্বাচিত করে আর এক ধাপ এগিয়ে দেওয়ায় তিনি ‘২৩ সালে দলিয় মনোনয়ন পেয়ে বিজিত হয়ে এমপি ও মন্ত্রীত্বের অমিয় সুধায় সিক্ত হয়ে জীবনের চরম প্রাপ্তিটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছোট বোন এই আসনের এমপি,মন্ত্রী,বড় ভাই সদ্য নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান।ইকবাল হোসেন সবুজ কেন্দ্রিয় নেতিবাচক অভিযোগের বৃত্ত ভেঙে আবার কি ক্ষমতার পাদপ্রদ্বীপে জ্বলে উঠতে পারবেন?জনগনের বাধভাঙা জোয়ারের মহানায়ক হয়ে আবার কি জাতির দৃষ্টি আর্কর্ষনের নায়ক হয়ে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারবেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি আর কখনো সক্ষম হবেন না।কারন হিসেবে বলছেন, তিনি তার সততার ইমেজ হারিয়েছেন কেন্দ্র ও জনগনের চোখে।বিশ্বাস, আস্থা ও জননপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে জনগনের তার প্রতি।এসব কারনে রাজনীতির মাঠে থাকলেও তিনি কেন্দ্র ও জনগনের চোখে ইমেজ ফিরিয়ে আনতে হয়ত আর সক্ষম হবেন না।

অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে এখন এখানকার রাজনীতির দন্ডমূন্ডের কর্তা হবেন এড জামিল হাসান দুর্জয় এতে সন্দেহ নেই।এখানকার মিল ইন্ডাস্ট্রিসহ অর্থনৈতিক জোনগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন তিনি।কমিটিগুলো হবে তার নিজের মত করে।তবে তার পাশে থাকবে ইন্ডাস্ট্রি ব্যবসার বিশাল চক্র।প্রকৃত ত্যাগী দলিয় ব্যক্তিরা তার কাছে পাত্তা পাবেন না।এসবের দায়ভার বহন করতে হবে অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি এমপিকে।

এখানকার রাজনীতি, ব্যবসা কুক্ষিগত করে রাখতে গিয়ে সৃষ্টি হবে বঞ্চিত মানুষের কাফেলা।সৃষ্টি হবে জনরোষ।আর এসব বঞ্চিত মানুষের কাফেলার একাংশ মিলিত হবে ইকবাল হোসেন সবুজের রাজনীতিতে এবং এর বেশিরভাগ অংশ মিলিত হবে শ্রীপুরের পৌর মেয়র আনিছুর রহমান ও সদ্য পরাজিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বিএ’র মঞ্চে।

এদের সমন্বয়ে এক সময় এখানে আত্মপ্রকাশ ঘটবে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি।আর সেই শক্তির মঞ্চেই ২৯ সালে রচিত হবে মনোনয়নে পরিবর্তনের নতুন ইতিহাস।কারন সাবেক ও বর্তমান নেতৃত্ব নানাবিধ বিতর্কে জড়িয়ে জনপ্রিয়তা হারাবে।কেন্দ্রে বিতর্কিত হবে।জনগন ক্ষুব্ধ হবে।উন্নয়ন বঞ্চিত হবে।ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক পদ হারাবে।উত্তাল জনজোয়ার সৃষ্টি হবে প্রার্থি পরিবর্তনের দাবি নিয়ে।আর সেই প্রেক্ষাপটে আসবে এমপি হওয়া দুই পরিবারের বাইরে তৃতীয় শক্তির অভ্যূদ্বয়।

এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এমপি সবুজের যে সমস্ত শীর্ষ নেতা পদ ধরে রাখতে, ব্যবসা ঠিক রাখতে এবং পরবর্তি কমিটি গঠন হলে যাতে চেয়ারটা ঠিক থাকে মনে করে নেতা পরিবর্তন করেছিলেন তাদের কেউ আর ক্ষমতার পাদপ্রদ্বীপে থাকবেন না।সময়ের প্রয়োজনে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তাদের ব্যবহার করলেও এখন ছুঁড়ে ফেলার সময় সমাগত।তাদের রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটবে।শুধু নামের পাশে যোগ হবে সাবেক শব্দটি।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ: হানিফ

  সদরুল আইন: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ...