সর্বশেষ সংবাদ
Home / জাতীয় / সিলেট অঞ্চলে পানিবন্দি সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ

সিলেট অঞ্চলে পানিবন্দি সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ

 

বিডি বাংলা ডেস্ক:

সিলেটে টানা বর্ষণ ও ঢল অব্যাহত রয়েছে। প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারা, সারি নদীর ৬ টি পয়েন্টে বন্যার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সুরমা ও কুশয়ারা অববাহিকার অন্তত: সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরের অর্ধেকের বেশি বাসা-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম সর্বত্রই পানি। ঈদুল আজহার আগের রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি থামছেই না। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেট অঞ্চলে আরও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে ২০২২ সালের মতো পরিস্থিতি ঘটতে পারে— এমন আতংক বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।

এদিকে, টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। কয়েকটি স্থানে তিস্তাসহ প্রধান নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন অবিরাম বর্ষণের সম্ভাবনা থাকায় রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিলেটের ১৩ উপজেলায় ৭ লাখ, সুনামগঞ্জের ৪ উপজেলায় আড়াই লাখ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও অন্যান্য এলাকায় ২ লাখ মিলে সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

পানিবন্দি কোনো কোনো পরিবার সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে আসলেও বেশির ভাগ মানুষ বাড়িঘর, আসবাবপত্র গরু-বাছুর ফেলে আসতে চান না। তারা ঘরেই চৌকির উপর বসবাস করছেন। সেখানেই টিনের চুল্লায় রান্নাবান্না করে চরম দুর্ভোগে দিন পার করছেন। সেখানে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।

সিলেট মহানগরীর ২১ টি ওয়ার্ডে অর্ধলক্ষ মানুষ এখন পানিবন্দি। সিলেট জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সিলেট মহানগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি।

নিচু এলাকার বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঈদের দিন ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। ফলে হু হু করে বাড়তে থাকে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি।

সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোমপানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিবুর রহমান এমপি সিলেটের বন্যার্তদের দেখতে সিলেটে ছুটে আসেন। তিনি তাৎক্ষনিকভাবে সিলেট জেলার বন্যার্তদের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা, ১০০ টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছেন।

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় প্রধান প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলো দ্বিতীয় দফায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় মঙ্গলবার দুপুরে। এর আগে গত ৩০ মে বন্যা পরিস্থিতির কারণে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে অবস্থার উন্নতি হলে ও ঈদকে সামনে রেখে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবিলায় সুনামগঞ্জ জেলায় ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কসহ অর্ধেকের বেশি বাসাবাড়ি ডুবে গেছে। বুধবার বিকালে বৃষ্টি থামলেও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি নেই। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন। আবার অনেকেই ঘরের খাট-পালং উঁচু করে পানির মধ্যেই বসবাস করছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। মধ্য বাজারে হাঁটু পানি।

বাধন পাড়া, উকিল পাড়া, বড় পাড়া, সোমপাড়া, হাসন্নগর, ষোলঘর, নবীনগরসহ বহু এলাকার ঘরে পানি। রাতে বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি কিছুটা কমলেও বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাটে বন্যার পানি। জেলার ছাতক, দোয়ারা, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও সদর উপজেলার অবস্থা ভয়াবহ।

হবিগঞ্জে খোয়াই নদীতে বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বুধবার দুপুরে শহরতলীর জালালাবাদে নদীর বাঁধে হঠাৎ ভাঙ্গন দেখা দেয়। ফলে প্রবল বেগে নদীর পানি জালালাবাদসহ আশপাশের এলাকায় প্রবেশ করছে। এদিকে সকাল থেকেই খোয়াই, কুশিয়ারা, কালনী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২ গ্রাম বন্যা কবলিত। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। এতে প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এদিকে প্রধান প্রধান নদীর পানি দ্রুত বেগে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার উপদাখালি নদীর পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কলমাকান্দার গুরুত্বপূর্ণ মনতলা সড়ক তলিয়ে গেছে।

তিস্তা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পাউবো কোনো প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোর অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে। বেশ কিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘরের চারপাশে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে।

পানির নিচে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। ডুবে গেছে ওই সব এলাকার মরিচ ও সবজি খেত। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব পানিয়ালের ঘাট এলাকায় কৃষকের ফসলি জমিতে ধরেছে ভাঙন। কেউ কেউ নদীর পাড়ে বাদাম তুলে স্তূপ করে রেখেছেন।

রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বেলা ১১টায় কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় তিস্তার পানি বিপদসীমার অতিক্রম করেছে।

গতকাল সকালে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি কমতে থাকে। কিন্তু বৃষ্টি না থামায় নদীর পানি যেকোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করে লোকালয় প্লাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।

এদিকে কুড়িগ্রামে প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে তিস্তা নদী ও দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল ৯টায় পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া অন্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

নাগেশ্বরীতে একটানা ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। প্লাবিত হয়ে পড়েছে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। বৃষ্টির পানি সাথে উজানের ঢল মিশে স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চতায় এবং তীব্র স্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ সকল নদ-নদীর পানি। ফুলবাড়ীতে ধরলা নদীসহ সব কয়টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

গাইবান্ধা জেলার সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে জেলার চারটি নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়ার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

টেকনাফে ভারী বৃষ্টির কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে শত শত বাড়ি-ঘর,চিংড়ি ঘের, মাঠ,খেতের জমি। উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও হলেও কেউ হতাহত হয়নি। মানুষের বাড়ি-ঘরেও পানি ডুকেছেন।

ঝিনাইগাতীতে মহরশি নদীর ঢলের পানির তোড়ে দিঘীরপাড় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুপুরে মহারশি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঝিনাইগাতী সদর বাজারে প্রবেশ করে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ আজ : আলোচনায় সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ

  সদরুল আইন: অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ...