শরাফত হোসেন:
দরজায় কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ সময় ২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে শুরু হচ্ছে কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসর। ২২ গজের লড়াইয়ের উত্তাপে গা মাখছে ক্রিকেটবিশ্ব।
কোন দলের কতদূর যাওয়ার সম্ভাবনা, সেই আলোচনাও চলছে। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে ২০ দল। তাদের শক্তি-দুর্বলতা ও সম্ভাবনা নিয়েই এই আয়োজন। আজ থাকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে-
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতি কি এখনও তাড়ায় ক্যারিবিয়ানদের? এত সহজে ভোলার কথা নয়, আরেকটি বিশ্বকাপ সামনে রেখে নিশ্চয় অস্ট্রেলিয়ার ব্যর্থতা ঘুরেফিরে আসছে তাদের মনে।
কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে সব দাপুটে খেলোয়াড় যাদের ঘরে, তারাই কিনা দুই বছর আগের বিশ্ব আসর থেকে বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে!
ইতিহাসের পাতায় হয়তো লেখা আছে ‘গ্রুপ পর্ব’। আদলে সেটা মূল পর্ব অর্থাৎ, সুপার টুয়েলভে খেলার যোগ্যতা অর্জনের মঞ্চ। কিন্তু ব্যর্থতার তলানিতে নিমজ্জিত হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিদায় নিয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে। তাদের পেছনে ফেলে ওই গ্রুপ থেকে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নেয় জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের যন্ত্রণার স্মৃতি মুছে ফেলার মোক্ষম সুযোগ এসেছে ক্যারিবিয়ানদের সামনে। এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজক তারা। শিরোপায় চোখ রেখে ঘরের মাঠের প্রতিযোগিতায় নামতে যাচ্ছে রোভম্যান পাওয়েলের নেতৃত্বে। ‘সি’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান, উগান্ডা ও পাপুয়া নিউগিনি।
২০১২ ও ২০১৬ সালে যে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ড্যারেন স্যামি। এবারও তিনি আছেন ক্যারিবিয়ানদের সঙ্গে। ভূমিকা শুধু পাল্টে গেছে তার। ওই দুই আসরে অধিনায়কের দায়িত্ব সামলানো স্যামি এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ। দলকে সবসময় উজ্জীবিত করে রাখার অসম্ভব ক্ষমতা থাকায় সাবেক এই অলরাউন্ডারের হাত ধরে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে তারা।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বরাবরই ক্যারিবিয়ানদের দাপট। সেটা তাদের শারীরিক শক্তিতেই হোক কিংবা ছোট পরিসরের ক্রিকেটের কারণেই হোক। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তাদের চাহিদা থাকে ওপরের দিকে। বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলেও ক্যারিবিয়ানদের দাপট।
এখনও আন্দ্রে রাসেল-সুনিল নারিনরা রাজত্ব করছেন সেখানে। এবারের বিশ্বকাপে রাসেল থাকলেও নারিন নেই। আইপিএলে ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও অবসর না ভাঙার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন তিনি। এই অলরাউন্ডারকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এরপরও পাওয়েলের নেতৃত্বে যে দল গঠন করেছে, তাতেও আশার পালে লাগছে হাওয়া। দলে আছেন নিকোলাস পুরান-শিমরন হেটমায়ারের মতো বিধ্বংসী ব্যাটার। তবে বোলিং ভোগাতে পারে ক্যারিবিয়ানদের। জেসন হোল্ডার-রোমারিও শেফার্ডরা ভালো করলেও তাদের ধারাবাহিকতার অভাব।
ব্যাটিং বরবারই তাদের মূল শক্তি। সেই সঙ্গে বাড়তি অলরাউন্ডারে একসঙ্গে দুটো কাজ হয়ে যায়। এবারের বিশ্বকাপেও এই দুটি জায়গায় জোর দিয়ে দল গঠন করেছে তারা। রাসেল-পাওয়েল-পুরানদের পাওয়ার হিটিংয়ে ক্যারিবিয়ান-ঝড় দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব।
একনজরে:
অধিনায়ক: রোভম্যান পাওয়েল।
কোচ: ড্যারেন স্যামি।
ডাকনাম: উইন্ডিজ।
র্যাংকিং: ৬।
বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে: ৮ বার (২০০৭, ২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬, ২০২১, ২০২২)।
বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন- ২০১২ ও ২০১৬।
আগের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিতভাবেই মনে রাখতে চাইবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চরম ব্যর্থতায় সুপার টুয়েলভ পর্যন্ত যেতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। গ্রুপ পর্ব যেটিকে ‘অঘোষিত’ বাছাই পর্ব হিসেবে ধরা হয়, সেখান থেকেই বিদায় নিয়েছিল দলটি। তাদেরকে পেছনে ফেলে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ খেলেছিল জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ সূচি
২ জুন: পাপুয়া নিউগিনি (গায়ানা), রাত ৮-৩০ মিনিট
৯ জুন: উগান্ডা (গায়ানা), সকাল ৬-৩০ মিনিট
১৩ জুন: নিউজিল্যান্ড (ত্রিনিদাদ), সকাল ৬-৩০ মিনিট
১৮ জুন: আফগানিস্তান (সেন্ট লুসিয়া), সকাল ৬-৩০ মিনিট
নজরে থাকবেন
আন্দ্রে রাসেল
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ দলে আছেন আন্দ্রে রাসেল। আইপিএল দিয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সেরেছেন এই অলরাউন্ডার। এবার ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিংয়েই যেন বেশি উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন ৩৬ পেরিয়ে যাওয়া রাসেল। তবে তার ব্যাট জ্বলে উঠলে কী হতে পারে, সেটি ক্রিকেট বিশ্ব অনেকবারই দেখেছে।
ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে তার কাছ থেকে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই থাকবে দলের প্রত্যাশা। সেটি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ফাইনালে তোলার পথে অবদান রাখায়।
নিকোলাস পুরান
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ছিলেন নিকোলাস পুরান। অধিনায়কত্বের বাড়তি চাপেই কিনা ভারতের আসরে সেরাটা পাওয়া যায়নি তার।
এবার খেলবেন শুধু খেলোয়াড়ের ভূমিকায়। চাপতাপহীন ভাবে নামতে যাচ্ছেন ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার আছে ১১টি হাফসেঞ্চুরি। ৮৮ ম্যাচে করেছেন ১ হাজার ৮৪৮ রান। যেখানে স্ট্রাইকরেট ১৩৪-এর বেশি।
শক্তি
* ব্যাটিং লাইন-আপে আছেন সেরা সব খেলোয়াড়।
* আন্দ্রে রাসেল-রোভম্যান পাওয়েলরা আছেন দারুণ ছন্দে।
* দলে আছেন দারুণ কিছু অলরাউন্ডার।
* ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ হওয়ায় বাড়তি সুবিধা তো থাকছেই।
দুর্বলতা
* বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটেনি তাদের।
* ব্যাটিংয়ে ধস নামলে ধরে খেলার মতো খেলোয়াড়ের অভাব।
* ফর্মের তুঙ্গে থাকা সুনিল নারিনের না থাকা ভোগাতে পারে।
ভবিষ্যদ্বাণী: চ্যাম্পিয়ন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোয়াড: রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), জনসন চার্লস, শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ (উইকেটকিপার), ব্রেন্ডন কিং, নিকোলাস পুরান (উইকেটকিপার), শেরফান রাদারফোর্ড, আকিল হোসেন, শামার জোসেফ, আলজারি জোসেফ, গুডাকেশ মোটি, রোস্টন চেস, জেসন হোল্ডার, আন্দ্রে রাসেল, রোমারিও শেফার্ড।