সর্বশেষ সংবাদ
Home / Uncategorized / অগ্রগতি নেই পাউবোর ৩৭০ বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন প্রকল্পে

অগ্রগতি নেই পাউবোর ৩৭০ বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন প্রকল্পে

নিজস্ব প্রতিবেদক-

বজ্রপাত প্রবণ এলাকা সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের হাওরগুলোতে প্রতি বর্ষা মৌসুমে বেঘোরে প্রাণ দিতে হয় অন্তত দেড় থেকে দুই ডজন লোককে।

এদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক কৃষক, জেলে খেটে খাওয়া মজুর ও পথচারী। পরিবারে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর ঐসব পরিবার একেবারেই পথে বসেন।

বজ্রপাতে আহতের জন্য সরকার থেকে ১০ হাজার ও নিহতের জন্য ২০ হাজার টাকা প্রদান করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা একেবারেই নগণ্য। এই সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য বেশ আগে থেকেই দাবি উঠেছে।

সিলেটের হাওর এলাকার জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি ও মৎস্য আহরণ। তাই ঐ শ্রেণির পেশার মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হয়। আর দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি প্রতি বছর বজ্রপাতে প্রাণ দিতে হয় তাদের। সিলেটের চার জেলার মধ্যে আয়তনে হাওর এলাকা বেশি সুনামগঞ্জে।

এ জেলায় হাওর ৯৫টি। বজ্রপাতে বেশি প্রাণহানিও ঘটে এ জেলায় বেশি। চলতি বছর গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বজ্রপাতে সাত জনের মৃত্যু ঘটেছে। পরিসংখ্যানে জানা যায় গত ১০ বছর চার মাসে অন্তত ১৫৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে সুনামগঞ্জ জেলায়।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-২০১৭ পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা যান অর্ধশত। ২০১৮ সালে ২৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাটি ছিল এ জেলার সর্বোচ্চ রেকর্ড। ১৯ সালে ৯ জন, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত মারা যান ১২ জন। এ নিয়ে সাত বছরে মৃত্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬-এ।

২০২১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে এ জেলায়। সব মিলিয়ে গত ১০ বছর চার মাসে শুধু সুনামগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে ১৫৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এদিকে ২০১৭ সালের নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়, সুনামগঞ্জে মার্চ থেকে মে—তিন মাসে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৫টিরও বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে।

ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ভারতের খাসিয়া পাহাড় ও মেঘালয় এলাকায় এই তিন মাস মেঘ জমে থাকে। স্তরীভূত মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে এ এলাকার পাদদেশে বজ্রপাতের সংখ্যাও বেশি। তাই হাওর প্রধান জেলা সুনামগঞ্জে প্রতি বছর প্রাণ হারায় বেশিসংখ্যক মানুষ।

২০১৬ সাল থেকে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এরপর সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে ১২ ঘণ্টা আগে বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বার্তা পাঠায়। কিন্তু সেই বার্তাটি সময়মতো হাওরে পৌঁছে না।

অন্যদিকে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ২০১৮ সালে ৩৪ হাজার এবং ১৯ সালে ৮০ হাজার তাল বীজ বিতরণ করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ তাল বীজ নষ্ট হয়ে যায়।

একদিকে দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্প, অন্যদিকে তালগাছের বীজ জীবন লাভ না করায় সরকারের এই পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়। মার্চ থেকে মে এই তিন মাস বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি থাকলেও মৌসুম পরিবর্তনের কারণে সেপ্টেম্বরেও বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে।

তাই সরকার তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা বাদ দিয়ে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড ও লাইটিং অ্যারেস্টার স্থাপন প্রকল্প চালু করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের আগাম বন্যা ও সমন্বতি পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন (১ম পর্যায়) প্রকল্প’-এর আওতায় সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ৩৭০টি ‘বজ্রনিরোধক পোল’ নির্মাণের মাধ্যমে বজ্রপাতের ঝুঁকি হতে জনগণকে রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রকল্প তৈরি করে।

এসবের বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু সেটি শুরুই করা যায়নি।

এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার ৪৪৩ কিলোমিটার নদীখনন ও ১৩৯.৫৩ কিলোমিটার খাল খননের মাধ্যমে নদী-খালের নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ আরও কয়েকটি প্রস্তাবনা। ‘২ হাজার ৬৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমির ধান আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পাবে।

তাছাড়া ‘বজ্রনিরোধক পোল’ স্থাপন হলে অনেক প্রাণ বেঁচে যাবে—এই মন্তব্য করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার ইত্তেফাককে বলেন, প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায়।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ আজ : আলোচনায় সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ

  সদরুল আইন: অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ...