সর্বশেষ সংবাদ
Home / অপরাধ / ধারের টাকা না দেওয়ায় খুন হন আবদুল হক

ধারের টাকা না দেওয়ায় খুন হন আবদুল হক

দরিদ্র ঘরের সন্তান আবদুল হক ওরফে জীবন (২৫)। দিনে ভাঙাড়ির দোকানে কাজ করতেন আর রাতে চালাতেন ব্যাটারিচালিত রিকশা। চলাফেরা করতেন এলাকার পূর্বপরিচিত মোরসেদ আলমের সঙ্গে। তাঁর থেকে কিছু টাকাও ধার নিয়েছিলেন আবদুল হক। সেই টাকা ফেরত দিতে পারছিলেন না তিনি। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করে মোরসেদ। কৌশলে গভীর রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে আবদুলকে খুন করে সে। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। ভেবেছিল, হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হবে না, পার পেয়ে যাবে।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের নিমতলী এলাকায় গত বছরের ১৩ জুন নৃশংস এ হত্যার ঘটনা ঘটে। খুনের পর আবদুল হকের ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় মোরসেদ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলার তদন্তে ক্লু-লেস এ হত্যারহস্য বেরিয়ে আসে। মূলত, তিন কারণে হত্যা করা হয় তাঁকে। প্রথমত, পাওনা টাকা ফেরত না দেওয়ায় সে আবদুল হকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। দ্বিতীয়ত, মোরসেদের মাকে জড়িয়ে গালাগাল দিয়েছিলেন আবদুল। এটি মেনে নিতে পারেনি সে। এ ছাড়া তার লক্ষ্য ছিল আবদুল হকের ব্যাটারিচালিত রিকশাটি চুরি করা।

খুনের ঘটনায় নিহতের ভাই আবদুর রব আকন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি এ ঘটনার ছায়াতদন্তে নামে পিবিআই। পরে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই ঢাকা জেলা কার্যালয়। পিবিআইর এসআই খোন্দকার মনিরুজ্জামান মামলার তদন্ত করেন।
আবদুল হক স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মোহাম্মদপুর থানার রায়েরবাজার এলাকায় একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার থানার পশ্চিম মাইচপাড়ায়। অভিযুক্ত মোরসেদও বাস করে রায়েরবাজার এলাকায়।

নিহত আবদুল হকের বড় ভাই ও মামলার বাদী আবদুর রব সমকালকে জানান, তাঁর ছোট ভাইয়ের জিহাদ নামে দেড় বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। সে এই বয়সেই এতিম হয়ে গেছে। ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে। মোরসেদ একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছ। তাকে অভিযুক্ত করে আগামী সপ্তাহে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেওয়া হতে পারে।

পিবিআই সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে নেমে সংশ্লিষ্টতা পেয়ে মোরসেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেও পেশায় রিকশাচালক। পাশাপাশি রাতে চুরি করত। একই পেশা ও একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে নিহত আবদুল হকের পূর্ব পরিচিত। তাকে সে মাঝেমধ্যে রাতে চুরি করতে নিয়ে যেত। তারা নির্মাণাধীন ভবনের টুকরো রড কিংবা বাড়ির বাইরের জিনিসপত্র চুরি করত। গত বছরের ১৩ জুন রাতে সে আবদুল হককে ফোন করে জানায়, কেরানীগঞ্জের নিমতলীতে একটি নির্মাণাধীন ভবনের রড চুরি করতে যাবে। তাকে রিকশা নিয়ে বের হতে বলে। তার কথামতো, রাত আড়াইটার পর আবদুল হক ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বের হন।

তিনি রিকশা চালাচ্ছিলেন, আর মোরসেদ পেছনের সিটে বসে ছিল। গোপনে নিজের কাছে লোহার রড রেখেছিলেন মোরসেদ। বছিলা ব্রিজ হয়ে রিকশাটি কেরানীগঞ্জের নিমতলী ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছলে রড দিয়ে আবদুল হকের মাথায় তিনি আঘাত করে। আবদুল রিকশা থেকে পড়ে গেলে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে তাঁকে খুন করা হয়। এতে বিকৃত হয়ে যায় তাঁর মাথা ও মুখমণ্ডল। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ টেনে খালের পাশে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় মোরসেদ। পরে রিকশার ব্যাটারিসহ যন্ত্রাংশ খুলে সে বিক্রি করে। পিবিআইর হাতে গ্রেপ্তারের পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে মোরসেদ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর এসআই খোন্দকার মনিরুজ্জামান সমকালকে বলেন, মোরসেদ আলম খুব চতুর এবং ঠান্ডামাথার মানুষ। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। ভেবেছিল, হত্যারহস্য উদ্ঘাটন হবে না এবং সে পার পেয়ে যাবে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

তারেক রহমানকে ব্যঙ্গ করার অভিযোগে আদালত চত্বরে হিরো আলমকে কান ধরে ওঠবস, মারধর

  স্টাফ রিপোর্টার: তারেক রহমানকে ব্যঙ্গ করার অভিযোগে বগুড়ায় আদালত চত্বরে আলোচিত ...