সর্বশেষ সংবাদ
Home / ধর্ম / শবে বরাতের ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়

শবে বরাতের ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়

শবে বরাত একটি ফজিলতপূর্ণ রাত। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়।হাদিস ভাষায় একে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যরাত বলা হয়েছে। শবে বরাত শব্দটি ফারসি। শব মানে রাত, বরাত মানে মুক্তি; শবে বরাত অর্থ মুক্তির রজনী।

হাদিসে এই রাতের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত আবু সালাবা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে, তখন আল্লাহ তায়ালা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; মুমিনদের ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং হিংসুকদের হিংসা পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না। (কিতাবুস সুন্নাহ, তৃতীয় খণ্পড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।

আরেক হাদিসে হজরত মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৫৬৬৫)।

এই রাত ফজিলতপূর্ণ এবং ইবাদতের। তবে এ রাতকে ঘিরে আমাদের সমাজে ইবাদত মনে করে বেশ কিছু কাজের প্রচলন রয়েছে ইসলামি শরিয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িদের যুগে যেসব আমলের কোনো অস্তিত্ব ছিল না।

শবে বরাতে বিশেষ কিছু আমল আছে, যা করলে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। এ রাতের করণীয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রাতে নফল নামাজ পড়া এবং দিনে রোজা রাখা এ রাতে সাধ্যমতো নফল নামাজ আদায় করা এবং পরের দিন নফল রোজা রাখা খুবই পুণ্যের কাজ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে, তখন তোমরা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা রাখবে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮) শবে বরাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) এ রাতে ১০০ রাকাত নফল নামাজ আদায়ের উপদেশ দিয়েছেন।

কোরআন তিলাওয়াত করা: এ রাতে বেশি বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা সওয়াবের কাজ। কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করলে ১০টি নেকি পাওয়া যায়। এ রাতে দোয়া পাঠ করাও উত্তম। তা হলো—আল্লাহম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি। অর্থাৎ হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা পছন্দ করো, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও। এ রাতে আরও একটি বিশেষ দোয়া করা মোস্তাহাব। যার বঙ্গানুবাদ হলো, ‘হে আল্লাহ, আপনি যদি আমাদের নাম দুর্ভাগ্যদের মধ্যে লিখে রাখেন, তবে তা মুছে দিয়ে সৌভাগ্যবানদের মধ্যে লিখে নিন। আর যদি আমাদের নাম সৌভাগ্যবানদের মধ্যে লিখে থাকেন, তবে তা স্থির রাখুন। কারণ আপনার কাছেই রয়েছে মূল কিতাব।’ (মিরকাত: ৩/১৯৭; হিলইয়া: ৪/১০৩)

কবর জিয়ারত করা: এ রাতে মহানবী (সা.) জান্নাতুল বাকিতে উম্মতের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদা এ রাতে আমি মহানবী (সা.)-কে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকি। এরপর আমি তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দুহাত তোলা অবস্থায় পেলাম।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)। এ থেকে আমরা এ রাতে কবর জিয়ারতের বিষয়টি সাব্যস্ত করতে পারি।

শবে বরাতের বর্জনীয় : শবে বরাত পুণ্যময় রজনী। এ রাতে কোনো নোংরা ও গর্হিত কাজ করা অনুচিত। সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য যা ক্ষতিকর এবং ভীতি সৃষ্টি করে, তা পরিহার করা ইসলামে স্বীকৃত। যেমন আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সমাজের একটা শ্রেণি আছে, যারা এ রাতে মাথায় টুপি ও হাতে তসবিহ নিয়ে আতশবাজি ছোড়ে এবং পটকা ফোটায়। অথচ এর মাধ্যমে সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বৃদ্ধ ও শিশুরা ভয়ে বের হতে পারে না। তাই এসব করা ইসলামস্বীকৃত নয়।

আলোকসজ্জা করা: কোনো কোনো অঞ্চলে এ রাতে অনেক বাড়িঘর, মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনা আলোকসজ্জার মাধ্যমে সাজানো হয়। অথচ এগুলোর সঙ্গে এ রাতের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই তা অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অপচয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল)

হালুয়া-রুটি তৈরি করা: লোকমুখে প্রচলিত আছে শবে বরাতের কাই কার ঘরে নাই। আসলে এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। কারণ হালুয়া-রুটির সঙ্গে এ রাতের কোনো সম্পর্ক নেই।

ক্ষমার অযোগ্য পাপ না করা: আমরা জেনে-না জেনে নানা পাপ করে থাকি। কিন্তু আল্লাহ এ মহিমান্বিত রাতে যেসব পাপীকে ক্ষমা করেন না, তাদের অন্তর্ভুক্ত যেন না হই। তারা হলো-হিংসুক, জাদুকর, গণক, মা-বাবার অবাধ্য, ব্যভিচারী প্রমুখ।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

পলাতক বায়তুল মোকাররমের খতিবেন সন্ধান মিলেছে গোপালগঞ্জে

  স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী সরকারের পতনের পর পলাতক রয়েছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল ...