সেই সময়ে যখন আমাদের মা-চাচীরা সোনার গয়না পরতেন তাদের অঙ্গে ফুটে থাকত হাঁসুলি, গোলাপ, পাশা, হাতের বালা। নতুন বধূরা পরত কোমরে বিছা আর পায়ে রিনিঝিনি মল ও কানে দুল। কানে দুল পরা অনেক পুরোনো ঐতিহ্য। প্রাচীনকাল থেকে মানবসভ্যতার সঙ্গে এ ঐতিহ্য মিশে আছে। আগেকার দিনে সৈন্যদের মধ্যে কানে দুল পরাটাকে বেশ সম্মানজনক মনে করা হতো।
কারণ, যাদের কানে দুল থাকত ধরে নেওয়া হতো তারা একবার সারা বিশ্ব ভ্রমণ করে এসেছে অথবা বিষুব রেখা অতিক্রম করছে। বাংলাদেশে সাধারণত মেয়েদের পাঁচ বছর বয়স পেরোলে বেশ ধুমধাম করে আনুষ্ঠানিকভাবে কানে দুল পরানো হয়। এক সময়ের ঐতিহ্যই পরবর্তীকালে ফ্যাশনে পরিণত হয়। হালের ফ্যাশন সচেতন একজন নারী এবং একজন গ্রাম্য সাদাসিধে নারীকে যদি প্রশ্ন করা হয়, মৌলিক অধিকার পূরণের পর কার কোন জিনিসের চাহিদা রয়েছে? সোজা উত্তর, ইস্ আমার কানের দুলটা যদি অমন হতো।
কেমনটি আপনার চাই
আপনার কেমন দুল চাই এটা যতটুকু নির্ভর করে আপনার ইচ্ছার ওপর, ঠিক ততটুকুই নির্ভর করে আপনার চেহারার আদলের ওপর। লম্বাটে মুখ হলে লম্বাকৃতির দুলে মুখ আরও লম্বা দেখাবে। আবার গোলমুখের কেউ গোলাকৃতির দুল পরলে তার মুখ আরও গোল মনে হবে। লম্বাটে মুখের অধিকারী টপ, ছোট ঝুমকা কিংবা রিং পরলে ভালো দেখাবে। যাদের মুখ চৌকো চৌকোনা রিং, পাশা বা বেশি ছড়ানো দুল তাদের না পরাই ভালো। টপ, ছোট গোল, ঝুলন্ত খাড়া দুল তারা বেছে নিতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে। যাদের মুখ গোলাকৃতির তারা ঝুলন্ত, চৌকোনা দুলে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। আর যাদের মুখের আকৃতি পানপাতার তাদের যেকোনো আকৃতির দুলেই ভালো লাগবে।
কেমন হবে রঙটা
‘কোন রঙটা আমার সাথে যায়’, এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মাথা ঘামান না এমন জন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কেননা সকল রমণীদের মাঝেই এই দ্বিধা কাজ করে—এই রঙটা না ওইটা! এই নিয়ে ঘটে নানা বিড়ম্বনা। পোশাকের নানা রঙের মাঝে কোন রঙে মেলাবেন আপনার কানের দুল? কিছুদিন আগেও পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরার ফ্যাশন ছিল। এখন তার পাশাপাশি চলছে কনট্রাস্ট বা বৈপরীত্যের চল। টিপ, ওড়নার পাড়, শাড়ির আঁচল অথবা জুতার ফিতা যেকোনো কিছুর সঙ্গেই মিলিয়ে দুল পরা যায়।
কেমন পোশাকে কেমন দুল
কেমন পোশাকের সাথে কেমন দুল পরবেন এই নিয়েও চিন্তার বোধ করি অবকাশ নেই। এই নিয়ে আলাপ-আলোচনারও অন্ত নেই। সাধারণত, সুতি, তাঁতের শাড়ির সঙ্গে কাঠ, পিতল, কাঁসা, মাটি, পুঁতি বা শোলার দুল মানাবে। হাতে বোনা কাপড়ের দুলও মানিয়ে যায় বেশ। ঝলমলে বুননের শাড়ির সঙ্গে মিলবে ধাতু ও পাথরের দুল। কর্পোরেট পোশাকের সঙ্গে অবশ্যই টপ ভালো লাগে।
দুলের বিচিত্রতায়
বিষয় হচ্ছে কানের দুল আপনার চেহারা এবং ড্রেসের সাথে মিলে ফ্যাশনে কতটা বৈচিত্র্য আনতে পেরেছে। বর্তমানে সোনা, রুপার চেয়ে হীরা, রুবি ও নরমাল স্টোনের ছোট কানের দুল ড্রেসের সাথে মিলিয়ে পরতে বেশি পছন্দ করছে।
আপনার সাজ-পোশাকের সাথে ছোট একজোড়া কানের দুল এনে দিবে আপনার সুরুচির পরিচয়।