সর্বশেষ সংবাদ
Home / সারাদেশ / রাজবাড়ীতে আখের ভালো ফলনেও হাসি নেই চাষিদের মুখে

রাজবাড়ীতে আখের ভালো ফলনেও হাসি নেই চাষিদের মুখে

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাজবাড়ীতে চলতি মৌসুমে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ভালো ফলন হলেও বাজারে ভালো দাম না পাওয়ায় হাসি নেই কৃষকের মুখে। দীর্ঘ এক বছর ধরে আখ চাষের পর বর্তমান বাজার দরে লোকসান গুনছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলার ৬২২ হেক্টর জমিতে ৩ হাজারের বেশি চাষি আখের আবাদ করেছেন। যার মোট উৎপাদন ৩০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ৪৮ হেক্টর,পাংশা উপজেলায় ৪৮২ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৫৫ হেক্টর এবং গোয়ালন্দ উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে আখ আবাদ হয়েছে।

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার গান্দিমারা বাজারে জেলার সবচেয়ে বড় আখ বিক্রির হাট বসে। সরেজমিনে এ হাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক সরাসরি তাদের উৎপাদিত আখ বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন।

এ সময় কথা হয় কালুখালী উপজেলার গান্দিমারা এলাকার কৃষক আজিজুল ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি চলতি মৌসুমে নিজের ১৩ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল গ্যান্ডারি জাতের আখ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম ভালো পাচ্ছি না। আকার ও মানভেদে ৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা দরে আখগুলো বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আখের ক্রেতাও তুলনামূলক কম।

আরেক বিক্রেতা সবুজ শেখ বলেন, আমার বাড়ি কালুখালী উপজেলার মদাপুরে। আমি ১৩ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছি। এতে ২ হাজার থেকে ২৫শ পিস আখ উৎপাদন হয়েছে। এ বছর আখের উৎপাদন বেশি ক্রেতা কম। তাই ভালো ফলনেও আমাদের মুখে হাসি নেই। আমার প্রতি পিস আখ মান ভেদে ৫ থেকে শুরু করে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।

আরেক চাষি জেলা সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি চলতি মৌসুমে ৫২ শতাংশ জমিতে গ্যান্ডারি আখের চাষ করেছি। গত আশ্বিন মাসে রোপণ করেছিলাম। এ বছর আশ্বিন মাসে ফলন উঠেছে। চাষাবাদ খরচ ওঠাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একে তো বাজারে ক্রেতা কম তার পরে আবার দাম খুব কম।

বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কাটাবাড়িয়া গ্রামের চাষি শফিক মন্ডল বলেন, আমাদের এলাকায় ২২ শতাংশে এক পাকি জমি। আমি চলতি বছর ১ পাকি জমিতে আখের চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে বাজারে বিক্রি ও দাম খুবই কম। এতে আমারা চাষিরা লোকসানে পরেছি। আখ চাষের উপযোগী বেলে দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি। আমরা চাষিরা হিসেব করে দেখেছি প্রতি ৪০ শতাংশ জমিতে খরচ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

এই হাটে আখ কিনতে আসা ক্রেতা কাজী রকিবুল বলেন, এ বছর খুব কম দামে আখ পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। আমি ৩টা বড় আখ কিনেছি ৮০ টাকা দিয়ে।

আরেক ক্রেতা ইয়াকুব বলেন, বাড়িতে ফেরার সময় আজ এই গান্দিমারা হাটের থেকে ২টা বড় আকারে ভালো মানের আখ কিনলাম ৫০ টাকা দিয়ে। আখের রস খেতে অনেক মজা। তাই পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনলাম। এ বছর আখের দাম বিগত সময়ের চেয়ে বেশ কম।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, আখ চাষে সার ও কীটনাশক তেমন ব্যবহার করতে হয় না। তবে পর্যাপ্ত সেচের প্রয়োজন হয়। স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচেই আখ চাষ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এছাড়া আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসলও চাষ করা যায়। আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে চাষিদের নানাভাবে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস২০২৪ পালিত

সদর প্রতিনিধি জামালপুর: অদ্য ৫ অক্টোবর ২৪ জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস ২০২৪ ...