সর্বশেষ সংবাদ
Home / ধর্ম / খাবার গ্রহণে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

খাবার গ্রহণে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

কৃষি, ব্যবসা, শিল্প-কারখানা ও চাকরিবাকরি সব কিছুতেই সম্পদ উপার্জন উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। তবে সম্পদ অর্জনও মৌলিক উদ্দেশ্য নয়; বরং মৌলিক উদ্দেশ্য হলো জীবনধারণের জন্য যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ। এক কথায় সম্পদ অর্জনের উদ্দেশ্যই হলো জিন্দেগি। প্রশ্ন হলো, তাহলে সৃষ্টির সেরা মানবকুলের জীবনের উদ্দেশ্য কী? ইসলামের দৃষ্টিতে জিন্দেগির উদ্দেশ্য হলো বন্দেগি, তথা স্বীয় রবের গোলামি।

এই মূলনীতির আলোকে প্রমাণিত হয়, মানুষের জীবনে খাবারদাবার মূল উদ্দেশ্য নয়, বরং তা জীবনোপকরণস্বরূপ একটি প্রয়োজন। আর প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্য হলো জিন্দেগি, আর জিন্দেগির মূল উদ্দেশ্য হলো বন্দেগি। বন্দেগি হলো ইসলামের বিধানাবলি সঠিকভাবে পালন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্যই বানিয়েছি যে তারা আমার ইবাদত (বন্দেগি) করবে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

খাবার গ্রহণ ইবাদততুল্য
খাবার মানুষের স্বভাবজাত ও মানবিক প্রয়োজন। ইসলাম এই প্রয়োজনকে বাধা দেয় না; বরং খাদ্যের প্রয়োজনকে ইবাদতে পরিণত করার নির্দেশ দেয়। এ জন্য যে ব্যক্তি ইসলামী নীতিমালা অনুসারে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে, সে নিজ প্রয়োজনকে যেমন পূরণ করল তদ্রুপ ইবাদতের সওয়াবও লাভ করল। এ জন্যই ইসলাম খাদ্য উপার্জনকে ইবাদত আখ্যা দিয়েছে এবং খাবার গ্রহণকে আবশ্যক করেছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একজন মুসলিম তার সব কিছুতেই সাওয়াবের অধিকারী হয়, এমনকি তার মুখে খাবারের লোকমা আহরণেও সে সওয়াব পায়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫৩১)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি হালাল সম্পদ উপার্জন করবে, অতঃপর তা থেকে নিজেকে কিংবা আল্লাহর অন্য কোনো সৃষ্টজীবকে খাওয়াবে বা পরাবে, এর দ্বারাও সে দানের সাওয়াব পাবে।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪২৩৬)

আবু জর (রা.)-কে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ঈমানের পর সর্বোত্কৃষ্ট আমল কোনটি? তিনি জবাবে বলেন, নামাজ ও রুটি (খাবার) খাওয়া। লোকটি এ কথা শুনে আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাকিয়ে রইল। আবু জর (রা.)-তাকে বলেন, ‘যদি রুটি (খাবার) না থাকত তাহলে আল্লাহ তাআলার ইবাদত সম্ভব হতো না।’

অর্থাৎ, রুটি খাওয়ার দ্বারাই পিঠ সোজা আছে, ফলে মানুষ আল্লাহর বন্দেগি যথাযথ পালন করতে পারে। (কিতাবুল কাসব, ইমাম মুহাম্মাদ, পৃষ্ঠা ৬২)

এ কারণেই ফোকাহায়ে কেরাম লিখেন, কেউ খাবার খেতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তা পরিত্যাগ করে মৃত্যুমুখে পতিত হলে সে মারাত্মক গুনাহগার হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৮৯)

ইসলাম মানবিক চাহিদা ও আকর্ষণের প্রতি যত্নবান

মানুষের স্বভাব চায় যে খাবার সুস্বাদু ও সুখাদ্য হোক এবং পানি মিষ্টি ও সুপেয় হোক। কেননা মানুষ প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি স্বভাবজাত আকর্ষণেরও পরিতৃপ্তি চায়। ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত আগ্রহ ও আকর্ষণের প্রতিও পরিপূর্ণ লক্ষ্য রাখে। তাই খাদ্য ও পানীয় দ্রব্য থেকে কেবল উত্কৃষ্ট, সুস্বাদু ও পছন্দনীয়গুলোকেই হালাল করা হয়েছে। আর যেগুলো নিকৃষ্ট তা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি তাদের জন্য উত্কৃষ্ট বস্তু হালাল করেন আর নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করেন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

উক্ত আয়াতে ‘উত্কৃষ্ট’ শব্দের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসির (রহ.) লিখেন, তা হলো এমন বস্তু, যা সত্তাগতভাবে উত্কৃষ্ট এবং শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিকর নয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির ১/৩৭৮)

মুফতি শফি (রহ.) লিখেন, উক্ত আয়াতাংশ এ নির্দেশনা দেয় যে যা কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পবিত্র ও উপকারী জিনিস রয়েছে, সেগুলোকে ইসলাম হালাল করেছে, আর যা অপরিচ্ছন্ন, অপবিত্র ও ক্ষতিকর জিনিস, সেগুলোকে হারাম করেছে।

অতীব প্রয়োজনে বিধানে সহজীকরণ

মানব জাতির প্রয়োজনীয়তাকে ইসলাম এ পরিমাণ মূল্যায়ন করেছে যে যখন ইসলামের বিধান ও মানুষের প্রয়োজনীয়তার মাঝে সংঘর্ষ হয়, তখন ইসলাম মানুষের প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এ জন্যই যদি প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থায় হালাল খাবার না পায় তখন প্রয়োজন পরিমাণ হারাম খাওয়ারও অনুমতি আছে। শুধু অনুমতিই নয়; বরং বাধ্যতামূলক নির্দেশ। কেননা, খাবার শুধু স্বভাবগত প্রয়োজনই নয়, বরং ধর্মীয় প্রয়োজনও। তাই প্রয়োজনসত্ত্বেও না খেলে যেমনিভাবে সে স্বভাবগত চাহিদার গলা টিপে ধরল, তদ্রুপ ইসলামেরও বিরুদ্ধাচরণ করল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং গায়রুল্লাহর নামে জবাইকৃত প্রাণী। তবে যে নিরুপায় হবে, অবাধ্য বা সীমা লঙ্ঘনকারী না হয়ে, তাহলে তার গুনাহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

পলাতক বায়তুল মোকাররমের খতিবেন সন্ধান মিলেছে গোপালগঞ্জে

  স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী সরকারের পতনের পর পলাতক রয়েছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল ...