সর্বশেষ সংবাদ
Home / কৃষি / পলো দিয়ে মাছ শিকারের পটুয়াখালীতে মহা উৎসব

পলো দিয়ে মাছ শিকারের পটুয়াখালীতে মহা উৎসব

পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর গ্রামাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয়, ডোবা ও বিল-ঝিলে পানি কমে যাওয়ার ফলে পলো দিয়ে মাছ শিকারের মহা উৎসব। মঙ্গলবার বেলা ১১টা দিকে দশমিনা উপজেলার চরহোসনাবাদ এলাকার খালে এ উৎসব পালিত হয়। উৎসবে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শতাধিক মানুষ অংশ নেয়। এসময় এলাাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, দশমিনা উপজেলার মাছের ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত আলীপুরা, বাঁশবাড়িয়া, আলীপুরা, বহরমপুর, রনগোপালদী, চরবোরহান, দশমিনা, বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নসহ চরাঞ্চল এখন মাছ শূন্য হয়ে গেছে। এলাকায় বোয়াল, মাগুর, শিং, কৈ, টেংরা, শোল, টাকি, পুটি, গজার, চাপিলা, খৈইলশা, পাবদা, আইড়, চিংড়ি, মলা, বাইন, বেলেসহ অর্ধ শতাধিক প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে নদীর মাছ হিসাবে পরিচিত পোয়া, ইলিশ, আইড়, রিটা যার দেখা এখন অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সর্বত্র নিষিদ্ধ ঘোষিত জালের অবাধ ব্যবহার, কৃষি জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার, বর্ষাকালে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা মাছসহ পোনা নিধন, শুস্ক মৌসুমে মাছ ধরার প্রবনতা এবং মাছের বিচরন ক্ষেত্র কমে যাওয়াসহ প্রভৃৃতি কারনে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ফসল হিসাবে পরিচিত মৎস্য সম্পদ আজ বিলুপ্ত হতে চলছে।

এছাড়া মাছের প্রজনন মৌসুম ও পোনা মাছের বৃদ্ধিকালীন সময় অবাধে ছোট-বড় মাছ ধরা এবং মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় মৎস্য সম্পদ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত ২০ বছর আগে গ্রামাঞ্চলে সর্বত্র দেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই। চাষকৃত মাছের কাছে দেশী প্রজাতির মাছ টিকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের হারুন, লাল মিয়া ও সেলিম হোসেন বলেন, তাদের বাড়ির পাশেই বিশাল বড় বিল। বর্ষা মৌসুমে টানাজাল পেতে বিল থেকে মাছ ধরেন। বিলের জল কোমর কিংবা হাঁটু সমান নেমে এলে গ্রামের মানুষ দলবেঁধে পলো নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। এ সময় আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ মাছ শিকারে আসেন।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনয়নের চরহোসনাব গ্রামের জাকির , রমিজ ও শাহবুদ্দিন বলেন, তাদের বাড়ির পাশেই তেঁতুলিয়া নদীর শাখা খাল রয়েছে। প্রতিবছর মাঘ ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ণ গ্রামের মানুষ পলো নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন।
তারা আরও বলেন, সব দেশি প্রজাতির মাছ। অতি সুস্বাদু। গ্রামের মানুষেরা দলে দলে এসে খালের পারে বসেন। গল্পগুজব করেন। এরপর সবাই একসঙ্গে নেমে পড়েন। আর পলোতে শিকারের মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্যও ছিল অতি চমৎকার।
এবিষয়ে দশমিনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, নদীর পানি মিষ্টি।

বর্ষা মৌসুমে এই পানি খাল বিলে প্রবেশ করে বিধায় এখানে দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, এক শ্রেণির কৃষক নদীতে পাট পচান এবং ফসলি জমিতে বিষ দেন। এ কারণে প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষমতা কমে গেছে। দেশি মাছের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিটি খাল, বিলসহ জলাশয়ে মাছের অভয়াশ্রম নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ রক্ষার্থে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

ফুলের ঘ্রাণ পেতে : চাই ফুলের সান্নিধ্য

মাওলানা সাইফুল ইসলাম শিক্ষক : মাদরাসাতুল হিকমাহ ২৪ ফিট, রসূলবাগ , কদমতলী ...