সর্বশেষ সংবাদ
Home / সারাদেশ / রংপুর বিভাগ / ঠাকুরগাঁওয়ে রেলের টিকিট কালোবাজারীর হাতে — দেখার কেউ নেই!

ঠাকুরগাঁওয়ে রেলের টিকিট কালোবাজারীর হাতে — দেখার কেউ নেই!

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁওঃ ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্ট্শেন কাউন্টারে টিকিট শুধু নেই আর নেই, নেপথ্যে সেই কালো বিড়াল উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের প্রধান রেল স্টেশনের নাম ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশন।

এখানকার টিকিট কাউন্টারের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট করতে গেলে কম্পিউটারের সামনে বসা এক রেল কর্মচারীর মুখ দিয়ে শুধু নেই আর নেই। ভাই ১৩ জুলাইয়ের ঢাকার কোন টিকিট আছে, তার উত্তর নেই, ১৪ তারিখের নেই, ১৫ তারিখের নেই, ১৬ তারিখের নেই, ১৭ তারিখের নেই? এরপর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনি অযথা উজিরে খামাখার মতো বসে আছেন কেন? চটে গিয়ে তিনি বলেন, আমি বসে থাকলে আপনার কোন সমস্যা তার পাল্টা প্রশ্ন? বিথি রানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় একটা টিউশনি করান। আজকের টিকিট না পেলে তাঁর টিউশনিটা চলে যাবে তাই তাঁর টিকিট লাগবেই। এরপর স্টেশন সংলগ্ন একটি দোকান হতে দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে একটি টিকিট সে পেল। সামির ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত আছেন। ঈদে নারীর টানে বাড়ী এসে বেকায়দায় পরেছেন এই তরুণ। কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে সেও কালোবাজারি চক্রের নিকট চড়া দামে টিকিট কিনতে বাধ্য হলো। এত কিছুর পরেও তাঁর মুখে বিজয়ের হাসি।

সেলিনা –নয়ন এই দম্পতি ঢাকায় চাকরি করেন। তাঁরা কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে প্লাটফর্মের এদিক ওদিক ছুটতে থাকেন। তাদের ডেকে জিজ্ঞেস করতেই বেরিয়ে আসে থলের কালো বিড়াল। কাউন্টারে কম্পিউটারে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা ভদ্রলোক তাদের গোপনে বলেন, টিকিট কাটার পর যেসব যাত্রী যাত্রা বাতিল করেন তাঁরা প্লাটফর্মের পানের দোকানে টিকিট দিয়ে যান। তাঁর কাছে গেলে টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এরপর ঐ দম্পতি চলে যায় দেখিয়ে দেওয়া পান দোকানির কাছে। দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে তারাও টিকিট সংগ্রহ করেন। এভাবেই টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের বাধ্য করে দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনতে বাধ্য করছে ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

কাউন্টার সেলের টিকিট কৌশলে ঐ দোকানে চলে যায়। এরপর দ্বিগুন মূল্যে বিক্রি। সহজ ডট কম নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি এ্যাপের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করে। সেখানে চলে তুঘলকি কান্ড। সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজে টিকিট কেনা প্রায়ই অসম্ভব। সহজের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ থাকলেও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে রয়েছে এ কোম্পানির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ। ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনে নেই কোন তথ্য সেবা কেন্দ্র। বাংলাদেশের একমাত্র এই রেলস্টেশনে যোগাযোগের জন্য কোন মোবাইল নাম্বার গুগলে সার্চ দিয়েও পাওয়া যায়না।

দিনের বেশীর ভাগ সময়ই স্টেশন মাস্টারের কক্ষে স্টেশন মাষ্টার থাকেন না। স্টেশনে জরুরি তথ্য দরকার হলে কোন নম্বরে ফোন করবো জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশন মাষ্টার বলেন, কোন ফোন নম্বর নেই। তথ্যের দরকার হলে সরাসরি স্টেশনে আসতে হবে। তিনি তাঁর স্টেশনে টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। টিকিটের বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। তাই সবাইকে টিকিট দেওয়া অসম্ভব। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে আন্তঃনগর রেল আন্দোলনের সংগঠক শফিউল করিম রুবেল বলেন, কালোবাজারি চক্রের হাতে জিম্মি ঠাকুরগাঁওয়ের রেলযাত্রীগণ।

রেল আন্দোলনের আরেক সংগঠক প্রভাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সদিচ্ছা ছাড়া ঠাকুরগাঁও রেলের টিকিট সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা অসম্ভব। ঠাকুরগাঁও নাগরিক অধিকার সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইন্দ্রনাথ রায় ও সাধারণ সম্পাদক আবু মহিউদ্দিন এ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশন হতে টিকিট সিন্ডিকেটের কালো বিড়ালটি যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের মুখোশ জনসম্মুখে উন্মোচিত করতে হবে সবার আগে।

নচেৎ রেল চলবে কিন্তু টিকিট পাবেনা ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ। এনআইডি ছাড়া টিকিট বিক্রি বন্ধ হলেই এ সিন্ডিকেট বন্ধ হতে বাধ্য। ঠাকুরগাঁও জেলার সুশীল সমাজ ঠাকুরগাও রেল স্টেশনের কালো বিড়াল তথা টিকিট সিন্ডিকেট বন্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস২০২৪ পালিত

সদর প্রতিনিধি জামালপুর: অদ্য ৫ অক্টোবর ২৪ জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস ২০২৪ ...