সর্বশেষ সংবাদ
Home / ধর্ম / ব্যক্তিগত অপারগতা ও অসহায়ত্বের মূল্যায়ন

ব্যক্তিগত অপারগতা ও অসহায়ত্বের মূল্যায়ন

মানুষের শক্তি ও সামর্থ্য সীমিত। জন্মগতভাবেই মানুষের বহু দুর্বলতা আছে। কিছু দুর্বলতা সামগ্রিক আর কিছু দুর্বলতা ব্যক্তিগত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষকে দুর্বলভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৮)

সৃষ্টিগত এই দুর্বলতার কারণে বহু মানুষ কাজে অপারগ, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা বহু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়। ইসলাম মানুষের এই সৃষ্টিগত দুর্বলতাকে গুরুত্ব দিয়েছে, দুর্বল ও অপারগ মানুষের জন্য পৃথক বিধান দান করেছে। তবে ইসলাম হঠকারিতামূলক অপারগতা প্রকাশ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

অসহায়ত্ব প্রকাশে লজ্জা নেই : মানুষ যদি সত্যি অপারগ ও অসহায় হয়ে থাকে, তবে তা প্রকাশ করতে লজ্জা নেই। বরং নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে দেওয়াই উত্তম। বিশেষত যদি তা আল্লাহর দরবারে প্রকাশ করা হয়। যেমন নুহ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়ের হিদায়াতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পর বলেন, ‘সে বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিনরাত আহবান জানিয়েছি, কিন্তু আমার আহবান তাদের পলায়নপ্রবণতাই বৃদ্ধি করেছে। ’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ৫-৬)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসা বলল, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। ’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৭৩)

আল্লাহর দরবারে অপারগতা প্রকাশ : আল্লাহর দরবারে নিজের ভুলত্রুটি স্বীকার করা এবং অপারগতা প্রকাশ করা প্রশংসনীয়। আদম (আ.) মহান আল্লাহর দরবারে অনুনয় করে বলেন, ‘তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো এবং দয়া না করো, তবে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৩)

অসহায়ত্ব প্রকাশের পুরস্কার : আদম (আ.) যখন আল্লাহর দরবারে নিজের অসহায়ত্ব ও অপারগতা প্রকাশ করলেন, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে ক্ষমার ঘোষণা দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আদম তার প্রতিপালকের কাছ থেকে কিছু বাণী প্রাপ্ত হলো। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমাপরবশ হলেন। নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৭)

শরিয়তে অপারগতা : শরিয়ত মানুষের অপারগতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং অপারগ মানুষের জন্য পৃথক বিধান দিয়েছে। যেমন কেউ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে না পারলে বসে পড়ার, কেউ রোজা রাখতে অক্ষম হলে ফিদিয়া দেওয়ার, কেউ নির্ধারিত সময়ে কোরবানি করতে না পারলে পশুর মূল্য সদকা করার সুযোগ ইত্যাদি।

অজুহাতের জন্য অপারগতা নয় : তবে নিছক অজুহাতের জন্য অপারগতা প্রকাশকে ইসলাম অনুমোদন করে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা দোষ স্খলনের চেষ্টা কোরো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরি করেছ। তোমাদের মধ্যে কোনো দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে শাস্তি দেব। কেননা তারা অপরাধী। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৫-৬৬)

অসচেতনতার জন্য অপারগতা নয় : একইভাবে ইসলাম মানুষকে সতর্ক করেছে, যেন অসচেতনতার জন্য তাকে বারবার অপাগরতা ও দোষ স্বীকার করতে না হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি এমন বিষয় থেকে বিরত থাকো, যার কারণে তোমাকে ভুল স্বীকার করতে হয়। (সামিউস সগির, হাদিস : ৫৪৬৪)

আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর উদ্দেশে মহানবী (সা.) বলেন, তুমি এমন কথা বোলো না, যার জন্য তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৭১)

অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয় : অপারগ না হয়েও অনেকে নিজেকে অক্ষম হিসেবে প্রকাশ করে, যাকে অজুহাত বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষত যখন তার সঙ্গে অপরাধের প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে এলে তারা তোমাদের কাছে অজুহাত পেশ করবে। বলুন! অজুহাত পেশ কোরো না, আমরা তোমাদের কখনো বিশ্বাস করব না। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৯৪)

পরকালে যাদের ওজর গ্রহণ করা হবে না :  পরকালেও একদল মানুষ ওজর পেশ করতে চাইবে। কিন্তু আল্লাহর দরবারে তাদের ওজর গ্রহণযোগ্য হবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন অবিচারকারীদের ওজর-আপত্তি কোনো কাজে আসবে না আর তাদের জন্য আছে অভিশাপ এবং তাদের জন্য আছে নিকৃষ্ট আবাস। ’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৫২)

অপারগতা প্রকাশকারীকে হতাশ না করা : যখন কোনো ব্যক্তি নিজের অসহায়ত্ব ও অপারগতা প্রকাশ করে, তখন তাকে হতাশ করা উচিত নয়। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একদল সাহাবি একটি অভিযান থেকে পিছুপা হতে বাধ্য হওয়ার পর যখন তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, আমরা তো পলাতক সৈনিক। তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বলেন, বরং তোমরা পুনরায় যুদ্ধে যোগদানকারী। আমি মুসলিমদের আশ্রয়স্থল। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৬৪৭)

অপারগতা প্রকাশ থেকে আত্মরক্ষার উপায় : বুজুর্গ আলেমরা বলেন, যখন বান্দা মহান আল্লাহর দরবারে নিজের ভুলত্রুটির জন্য অনুতপ্ত হয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে, তখন আল্লাহ তাকে মানুষের কাছে দোষ স্বীকারের মতো পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন। এ জন্য পবিত্র কোরআনে দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি, তবে আপনি আমাদের পাকড়াও করবেন না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

আল্লাহ আমাদের ভুলত্রুটি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জু’মআর নামাযঃ  ফযিলত ও গুরুত্ব

মাওলানা সাইফুল ইসলামশি,ক্ষক: মাদরাসাতুল হিকমাহ,ঢাকা: ২৪ ফিট, রসূলবাগ, কদমতলী, ঢাকা   একজন ব্যক্তি ঈমান আনার ...