রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকার এক কিশোরী নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে পাঁচতলা থেকে নিচে ফেলে হত্যা করে। ঘটনাটি ঘটে গত ২৫ মে দুপুরে। তারপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ঘটনাটি ভাইরাল হতে থাকে। সেখানে ভুল করে ওই কিশোরীর ছবির বদলে স্যোশাল মিডিয়া ও বেশ কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যমে মডেল ও অভিনেত্রী শ্রাবন্তী অনন্যার ছবি ব্যবহৃত হতে থাকে। পরে বিভিন্ন ব্যক্তিও নিজেদের টাইমলাইনে পোস্টটি শেয়ার করে।
ঘটনা সত্য হলেও ভাইরাল হওয়া ছবিটি ছিল ভুল। ফেসবুক থেকে সেই ছবি সংগ্রহ করে কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্যবহার করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রাবন্তী অনন্যা। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেলে একটি অনলাইন খবরটি প্রকাশ করে। সেখানে ভুল করে আমার ছবিটি ব্যবহার করা হয়। ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কারণ ঘটনার সেই মেয়েটি আমি নই। এরপর ফেসবুকের গ্রুপে গ্রুপে ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিভিন্ন অনলাইনও আমার সেই ছবিটি ঝাপসা করে (ব্লার) তাদের খবরে ব্যবহার করে।’
অনন্যা আরো বলেন, ‘ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে আমার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারসহ পরিচিতরা এই ঘটনা সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চেয়েছে। এতে আমি চরম বিব্রত হয়েছি। লোকজন আমাকে ভুল বুঝে খারাপ মনে করছে। তবে ওই ছবিটি প্রথমে কে বা কারা এবং কী উদ্দেশ্যে ভাইরাল করেছে তা আমি বুঝতে পারছি না।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মিরপুরের রূপনগর এলাকায় গত ২৫ মে দুপুর ১২টার দিকে সদ্যোজাত সন্তানকে পাঁচতলা থেকে ফেলে হত্যা করে এবার এসএসসি পাস করা এক কিশোরী। শিশুটিকে ফেলে দিতে সহযোগিতা করে কিশোরীর মা ও সৎ বাবা। পল্লবী থানা পুলিশ ওই কিশোরী ও তার সৎ বাবাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
ঘটনার পর পুলিশের মিরপুর পল্লবী অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) শেখ শামীম জানান, ওই কিশোরী এবারই এসএসসি পাস করেছে। কিশোরী তার সৎ বাবার বাসায় থাকে। তার বাবার চাচাতো ভাই বেলাল হোসেন পলাশ অর্থাৎ সৎ চাচার সঙ্গে কিশোরীর শারীরিক সম্পর্ক ছিল। বেলাল হোসেন কাতারে থাকতেন। দেশে ফিরে পুনরায় শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করেন। এতে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হন। পরে বেলাল হোসেন আবার কাতারে চলে যান। ২৫ মে দুপুরের দিকে কিশোরী ওই সন্তান প্রসব করেন। পরে সে তার মা-বাবার সহযোগিতায় পাঁচতলার বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে নিচে ফেলে দেয় নিজের সন্তানকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত বাচ্চাটি উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘অনন্যা একজন নতুন প্রমিজিং মডেল ও অভিনেত্রী। কেউ শত্রুতাবশত তার ছবি ব্যবহার করে ওপরে লেখা ঘটনার মেয়েটি বানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে। আর নেটিজেনরা তো সেই অন্ধই রয়ে গেলাম। অনলাইনে যা দেখি তা বিশ্বাস করে দ্রুত জাজমেন্টাল হয়ে যাই। সেই মিথ্যা ছবিকে পুঁজি করেই যাচাই-বাছাই ছাড়াই নির্দোষ এই মডেল ট্রল হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং দেশের বড় বড় নিউজ পোর্টালে। ভিকটিম কোনোভাবেই এই ঘৃণ্য অপকর্মের অংশ নয়। আদতে মেয়েটির জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে মিথ্যা ও প্রপাগান্ডার সারথিরা।’
তিনি বলেন, ‘ভিকটিম আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের মধ্যে আছে মিথ্যা তথ্য প্রচারকারী ফেসবুক আইডি, গ্রুপ, পেজ ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো। আশা করি, সবাই সবার ভুল বুঝতে পেরে নতুন করে দুঃখ প্রকাশ করে পোস্ট দেবেন। নিউজ পোর্টালগুলোর উচিত নিউজটি উল্লেখ করে ক্ষমা চেয়ে নতুন নিউজ করা। যারা শুরুতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পোস্ট দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।