বছরের প্রায় প্রতিদিনেই কোনো না কোনো পণ্যের দামের ওপর ছাড় দেয়া হয় সুপারশপগুলোতে। চলমান রোজাতেও ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন উপকরণ। কিন্তু খোলাবাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকানগুলোতে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া গেলে বাজারের দোকানে কেন দাম বেশি সে বিষয়ে বিক্রেতাদের কাছ থেকে মিলছে না কোনো জবাব।
খোলাবাজারে পাঁচ লিটারের তীর সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ টাকা দরে। কিন্তু সুপারসপ ‘আগোরা’য় একই তেল বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। ক্রেতাদের জন্য ৪০ টাকা ছাড় দিচ্ছে তারা।
একই তেলে ৫১ টাকা ছাড় দিচ্ছে ‘মীনা বাজার’। এছাড়া ৫৬৫ টাকা দামের ট্যাং বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা ছাড়ে।
একইভাবে প্রাণের সুপারশপ ডেইলি শপিংয়ে পাঁচ লিটারের ধানের কুড়ার তেল বা রাইন ব্র্যান ওয়েলে ছাড় আছে ৫০ টাকা। কিন্তু পাশেই মুদির দোকান বা বাজারের দোকানে কোনো ছাড় নেই।
মীনা বাজারের বিক্রেতারা জানান, শুধু রমজান নয়, এমন ছাড় থাকে প্রায় সারা বছর।
সুপারশপ আর বাজারে তেলের দামে ৪০ থেকে ৫০ টাকার পার্থক্য দেখে ক্রেতা মনি বেগম প্রশ্ন রাখেন, ‘সুপারশপে যে কোম্পানির জিনিস বিক্রি করে, বাইরের বাজারেও তো সেই কোম্পানির জিনিসই আমরা কিনি। একই কোম্পানি দুই জায়গায় দুই রকম দামে জিনিস বিক্রি করে কীভাবে?’
অপর এক ক্রেতা তুষার হাওলাদার বলেন, ‘বাজার থেকে কিছু কিনতে গেলে গায়ের দামের চাইতে কমে পাওয়া যায় না। ওই একই জিনিস সুপারশপে একটা কিনলে একটা ফ্রি। তাহলে এটা কেন হচ্ছে?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক মুদি দোকানি দাবি করেন, সুপারশপের জন্য কোম্পানিগুলো আলাদা ছাড় ও অফারের ব্যবস্থা রাখে। কিন্তু তাদেরকে সে পরিমাণ সুবিধা দেয় না। এ কারণে তারা দাম কম রাখতে পারেন না।
মোহাম্মদপুরের আল-বাকালা মুদির দোকানের মালিক মুরাদ হোসেন বলেন, ‘অফার আমরাও পাই। কিন্তু ছোট দোকানে অফারও ছোট। কারণ, সুপারশপে এক চালানে মাল নেয় চার-পাঁচ লাখ টাকার। রোজায় তো আরও বেশি। বড় চালানের মাল নিলে বড় কমিশন পাওয়া যায়। আমাদের তো এত মাল লাগে না। আমাদের যেটুক লাগে আমরা সেইটুকু মাল নিই।’
‘আমরা যেটুক ছাড় পাই তাও কাস্টমারকেও দিই। সব সময় গায়ের দামের চাইতে দু-পাঁচ টাকা কম রাখি।’
তবে বাজারের ব্যবসায়ীরা যে দাবি করেছেন, সেটা পুরোপুরি সঠিক নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার পর দুটি শীর্ষ কোম্পানির পরিবেশক প্রতি ২০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনলে দুই লিটার বিনামূল্যে দিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের। অর্থাৎ ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে তারা।
কিন্তু এর কোনো সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। খুচরা বিক্রেতারা পাঁচ লিটারের বোতল প্রতি ৪৩ থেকে ৫০ টাকা লাভ করছেন।
আবার বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তেলে বিক্রেতাদের ছাড় দিলেও তারা বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ লেখা বিক্রয়মূল্য একটুকু কমায়নি। এর কারণ কী, সেটা অজানাই রয়ে গেছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পাইকারি দোকান হেলাল জেনারেল স্টোর-এর মালিক মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা কম রাখি। পাইকারি দোকানে তো আর খুচরা দামে বেচাকেনা হয় না। আমাদের যারা নিয়মিত কাস্টমার তারা জানে। তারা কমে নিতে আমাদের কাছে আসে।’
‘তবে আমাদের কাছে ডিসকাউন্ট চাইলে বেশি করে বাজার করতে হবে। আমরাও দেব।’