সাবমেরিন, পদ্মাসেতুর পর স্যাটেলাইট নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য বুদ্ধিহীনের মতো মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর বিএনপি নেতাদরে বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, এই ধরনের বুদ্ধি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করলে তারা কীভাবে দেশের উন্নয়ন করবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয়েছে। সরকার একে দেশের সাফল্যের মাইলফলক মনে করলেও বিএনপি এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, এই স্যাটেলাইটের মালিক বাংলাদেশ নয়, দুইজন ব্যক্তি।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ জানতে চেয়েছেন এই প্রকল্পে কত টাকা দুর্নীতি বা অপচয় হয়েছে। এই প্রকল্পের কোনো সেবা বাংলাদেশ পাবে না বলেও দাবি করেছেন দলটির একাধিক নেতা।
এসব সমালোচনার জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক কথাই তারা বলে। বলতেই পারে, জানি না নিজেদের যদি মাথায় ঘিলুতে কিছু কিছু কম থাকে, তাহলে বলা যায়।’
‘স্যাটেলাইট সম্পর্কে তো আরও মারাত্মক কথা। স্যাটেলাইট, কী যেন একটা আগুন জ্বালিয়ে আকাশে উড়ে গেল, আমরা কী পেলাম? কী পাবে, সেই সাধাণ জ্ঞানটুকও যাদের নাই, তারা ক্ষমতায় থেকে দেশের উন্নয়নটা কীভাবে করবে সেটা আপনারা বিবেচনা করুন, দেশবাসী বিবেচনা করুন।’
চীন থেকে কেনা সাবমেরিন পানিতে ডুবে গেছে বলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এক বক্তব্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সাবমেরিন উদ্বোধন করে আসতে পারলাম না। বক্তৃতা শুনলাম, সাবমেরিন নাকি ফুটাফুটা পুরানটা কিনেছি, ওটা নাকি ডুবে গেছে। সাবমেরিন তো পানির নিচেই যাবে, সে জন্যই তো আনা।’
‘জোড়াতালি দিয়ে’ বানানো পদ্মাসেতুতে না উঠতে খালেদা জিয়ার আহ্বান নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘তারপর পদ্মাসেতু। সেখানে একটা স্প্যান উঠল। স্বাভাবিকভাবে পত্রিকা লিখল ইসের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। সেই কথাটা শুনেই একজন বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানানো হচ্ছে, ওই সেতুতে কেউ উঠবেন না। আমি দেখব ভবিষ্যতে ওই সেতু হওয়ার পর তারা উঠে কি না।’
‘এই জ্ঞান নিয়েই যারা চলে, সাবমেরিন যে পানির নিচের জন্য, আমাদের সাগরের তলদেশে যাবে, সেটা যার জ্ঞান যাদের নাই। সেতু স্প্যান জোড়া দিয়ে করা হয়, সেটাকে বলে পদ্মাসেতু জোড়াতালির সেখানে কেউ উঠবেন না, স্যাটেলাইট আগুন জ্বালিয়ে আকাশে উড়ে গেল বাংলাদেশের কী থাকল?’
‘স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, সাগরে বা নদীতে আমাদের যে নৌযানগুলো থাকবে তারাও এই স্যাটেলাইনের মাধ্যমে তথ্য নিতে পারবে।’
‘আমার টেলিমেডিসিন ইতিমধধ্যে প্রায় ৪০টি হাসপাতালের সাথে আছে। এটা আমরা আরও ভালোভাবে করতে পারব। শিক্ষা, গবেষণা আরও করতে পারব।’
এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে বাংলাদেশ মর্যাদায় আমরা উঠে এসেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা কারও কাছে ভিক্ষা নিয়ে চলার না, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ১৭৫২ ডলার মাথাপিছু আয় আমাদের। আমাদের প্রবৃদ্ধি বাজেটে প্রাক্কলন করেছিলাম ৭.৪ হবে। ইতিমধ্যে সেটা আমরা ৭.৬৫ এ চলে গেছি।’
‘আমাদের মূল্যস্ফীতি বাজেটে ছিল ৬ ভাগ। আমরা কিন্তু নিচে আছি। ৫.৬ ভাগ আমাদের মূল্যস্ফীতি।’
আওয়ামী লীগ থাকলে কী হয় আর না থাকলে কী হয় সেটাও বিবেচনা করার কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে কী দশাটা হতে পারে দেশের। কিন্তু ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন কী উন্নয়নটা আমরা করেছিলাম।’
‘১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম, আর ২০০১ এর ৪৩০০ রেখে গিয়েছিলাম। ২০০৯ এ পেয়েছিলাম ৩২০০। এখন আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি।’
‘এখন পরমাণু বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন কেন্দ্রের কাজ আমরা শুরু করেছি। রাস্তাঘাত ব্যাপকভাবে আমরা করে দিচ্ছি। এখন গ্রামে গ্রামে রাস্তা করে দিচ্ছি। এখন ভ্যান চালায়, সেও ব্যাটারিতে চালায়। প্যাডেলে চালায় না।