সর্বশেষ সংবাদ
Home / জাতীয় / ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালসহ চার এমপির বিরুদ্ধে তদন্তে দুদক
Oplus_131072

২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালসহ চার এমপির বিরুদ্ধে তদন্তে দুদক

 

বিডি বাংলা ডেস্কঃ

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে মাত্র দেড় বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তার পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আরও তিন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।

তাদের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেট এ সময়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখের মতো লোক পাঠিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল, মেয়ে নাফিসা কামাল, সাবেক তিন সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, বেনজীর আহমেদ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।

শনিবার দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) গত দেড় বছরে মালয়েশিয়া যেতে প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মীর ছাড়পত্র দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভেরিটে ইনকর্পো‌রেটেডসহ পাঁচটি সংস্থার গবেষণায় বেরিয়ে আসে, কর্মী পাঠাতে সরকার-নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা হলেও বাস্তবে সিন্ডিকেটটি প্রতি কর্মীর কাছ থেকে নিয়েছে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

সে হিসাবে দেড় বছরে মোট ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হলেও সেখানে সরকার নির্ধারিত ফি ছিল মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত ফি হিসেবে বাকি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঢুকেছে সিন্ডিকেটের পকেটে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, তাদের এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত। কেননা শ্রমিকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়। বরং সিন্ডিকেট তৈরির রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

সম্প্রতি এমন অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে সংস্থাটির উপপরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্ব তিন সদস্যের টিম করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন ফেনীর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। যাত্রা শুরুর সাড়ে তিন বছরে তার মালিকানাধীন স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেডের মাধ্যমে বিদেশে গেছেন মাত্র ১০০ কর্মী।

অন্যদিকে মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট চক্রে যোগ দেওয়ার পর গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার কর্মী পাঠায় একই রিক্রুটিং এজেন্সি।

নিজাম উদ্দিন হাজারী ছাড়াও কাশমেরী কামাল, নাফিসা কামাল, দুই সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীরও রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে মালয়েশিয়া চক্রে।

তাদের মধ্যে ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল ৮ হাজার ৫৯২ জন, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল ৭ হাজার ৮৪৯ জন এবং কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ৭ হাজার ১৫২ জন ও নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল ২ হাজার ৭০৯ জন শ্রমিক পাঠিয়েছে।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো এজেন্সির তালিকা বলছে, দেশটিতে এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বায়রার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেনী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। প্রতিষ্ঠার পর এটি মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠিয়েছে। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে এই এজেন্সি একাই ছাড়পত্র নিয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর।

ওই তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঐশী ইন্টারন্যাশনাল এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল। পঞ্চম অবস্থান রয়েছে ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল।

মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার আগে মাত্র ২৩৮ কর্মীকে বিদেশে পাঠালেও এই চক্রে ঢুকে তারা শীর্ষ তালিকায় চলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৭ হাজার ৮৪৯ কর্মী। চক্র গঠনের সময় বেনজীর ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি।

প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে পুনরায় চালু হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। সে সময় কর্মী পাঠানোর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের দায়িত্ব পায় মালয়েশিয়া। তাদের কাছে ১ হাজার ৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠিয়েছিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

কিন্তু মাত্র ২৫টি এজেন্সির নাম নির্বাচন করা হয়। তখন এজেন্সি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা না থাকায় সাবেক সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ও তার পরিবার, সাবেক ওই তিন এমপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা, সিটি কর্পো‌রেশনের কাউন্সিলর এবং এ খাতের নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠিয়েছে।

অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত ফির কয়েকগুণ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়াদের অনেকেই সেখানে নানা জটিলতায় কাজ পাননি। একদম খালি হাতেও ফিরেছেন অনেকে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হতে থাকে যে, চলতি বছরের ১৯ এপ্রিলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

এতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেরই দুর্বিষহ, মানবেতর ও অমর্যাদাকর পরিস্থিতির বিবরণ ওঠে আসে।

চক্র তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন ওরফে স্বপন। চক্রের ১০০টি এজেন্সির মধ্যে ৬৯টির নাম তিনি ঠিক করেছেন। তার মাধ্যমেই টাকা লেনদেন হয়েছে মালয়েশিয়ায়। বিএমইটির হিসাবে দেখা যায়, স্বপনের এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের নামে মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার ১০২ শ্রমিক গেছেন।

ইশতিয়াক আহমেদ নামের এজেন্সি বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেড ও জামাতা গোলাম রাকিবের নতুন এজেন্সি পিআর ওভারসিজ চার হাজারের বেশি কর্মী পাঠিয়েছে।

এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের (ভাটারা এলাকা) কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলামের এজেন্সি বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড ৭ হাজার ২২৫টি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদের অনন্য অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সি ২ হাজার ৬০০ কর্মীর ছাড়পত্র নিয়ে লোক পাঠিয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে তাদেরও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনে জানা যায়।

 

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ আজ : আলোচনায় সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ

  সদরুল আইন: অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ...