সর্বশেষ সংবাদ
Home / সারাদেশ / ময়মনসিংহ বিভাগ / ১২ বছর যাবৎ শিকলে বন্দি ঝিনাইগাতীর মেহনাজ

১২ বছর যাবৎ শিকলে বন্দি ঝিনাইগাতীর মেহনাজ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
অর্থ সংকটে চিকিৎসার অভাবে ১২ বছর ধরে শিকলবন্দি এতিম মেহনাজ (২০)। সে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার মৃত নূর মোস্তফা ও মৃত হাওয়া বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। পরিবার জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায় মেহনাজ। পরিবারটির আর্থিক অসচ্ছলতা জন্য ওর চিকিৎসা করা যায়নি।
চিকিৎসকরা বলেছেন, সিজোফ্রেনিয়া নামে রোগে আক্রান্ত মেহনাজ। নির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালেই সম্ভব এই রোগের চিকিৎসা। জানা গেছে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তাকে ভাঙা ঘরে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ না হওয়ায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আর নেয়নি পরিবার।
পরে অবস্থার অবনতি হলে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। কিন্ত তাতে কোনো প্রতিকার মেলেনি। সাথে কেউ না থাকলেও সারাদিন একাই কথা বলেন মেহনাজ। যন্ত্রণা বাড়লে ব্যাপক চিৎকার করে। আবার ক্লান্ত হয়ে গেলে শুধু কথা বলে। কাছে গেলে মারধর করে। শিকল খুলে দিলে বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যায়। এসব বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ একযুগ ধরে মেহনাজকে শিকলে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার।
ডান পায়ে দীর্ঘদিন ধরে শিকল বেঁধে রাখায় পচন ধরেছে পায়ে। এখন বাম পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর ভাঙা একটি ঘরে তাকে রাখা হয়েছে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর দরিদ্র বড়ভাই আর ভাবিই তার একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন খাওয়া গোসল সবই করাতে হয় বড় ভাই হাসানকে। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় দুই বছর ধরে কোনো চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। এক ভাই নৈশপ্রহরী ও আরেক ভাই চা দোকানি। অন্য বোনেরা থাকেন স্বামীর বাড়িতে। পরিবার অত্যন্ত গরিব বলে তারা সবাই মানবেতর জীবন করে। তার উপর আবার মেহনাজের এই অবস্থা।
এলাকাবাসী বলছেন, নিতান্ত বাধ্য হয়েই পরিবার মেহনাজকে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে মেহনাজ কিছু দিনের মধ্যে মারা যাবে। সঠিক চিকিৎসা হলে হয়ত মেহনাজ বাঁচবে।
বড়ভাই হাসান বলেন, বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় পাবনা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কোনো লাভ হয়নি। আমি নৈশপ্রহরীর চাকরি করে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাই। আমার বড় ভাই চা বিক্রি করেন। আমাদের পক্ষে বোনের চিকিৎসা খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। সমাজসেবা থেকে কিছু সহযোগিতা পেয়ে মেহনাজকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। বোনটার জন্য দুশ্চিন্তা আমাদের সকল সময় কাঁদায়। কিন্ত নিরুপায় আমরা।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বাহাদুর শাহ মজুমদার বলেন, এটি একটি জটিল মানসিক রোগ। তবে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা পেলে এ রোগ সেরে ওঠে। সিজোফ্রেনিয়া নামের এই রোগের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা একমাত্র মানসিক হাসপাতালেই সম্ভব। তাই দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সাহা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হাসপাতাল থেকে সমাজসেবার মাধ্যমে তাকে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়। তার চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতাল প্রয়োজন। সুচিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব। তবে দ্রুত চিকিৎসা করাতে পারলে উন্নতির হার বেশি।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে কোরবানির মাংস দেড় হাজারের উপরে ভাগ করা হয় ময়মনসিংহে

  সদরুল আইন: ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের বৈলাজান গ্রামে ঈদ উল ...