সর্বশেষ সংবাদ
Home / জাতীয় / সিটিং সার্ভিস: বাস মালিকদের চাপে বিআরটিএ

সিটিং সার্ভিস: বাস মালিকদের চাপে বিআরটিএ

শাহবাগ মোড়ে রাস্তায় অফিস ফেরত প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়ে, বাসের অপেক্ষায়। একেকটি বাস আসে, আর তাকে উঠার জন্য শুরু হয় চেষ্টা। কিন্তু সেগুলোর প্রায় প্রত্যেকটির দরজা বন্ধ। সামনে লেখা ‘সিটিং সার্ভিস’, দরজার পাশে লেখা ‘হাফ পাস নাই’।

তবে ‘সিটিং’ হলেও প্রতিটি বাসেই কয়েকজন যাত্রী দাঁড়িয়ে। এটি কেবল একদিনের নয়, চিত্র ছুটির দিনগুলো ছাড়া প্রতিদিনই গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে এই চিত্রই স্বাভাবিক।

যাত্রী যদি দাঁড়িয়েই যাবে, তাহলে সিটিং কেন? আসল উদ্দেশ্য অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা তো মানাই হয় না, তার ওপর সিটিং এর নামে দ্বিগুণ, তিন গুণ বা তারচেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ক্ষেত্রভেদে।

আর বিআরটিএও যখন ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেয়, তখন এই ভাড়া যে আসলে সিটিং এরই ভাড়া সেটা কখনও বলে দেয় না। আসলে ভাড়া নির্ধারণের সময় আসনের ৮০ শতাংশ যাত্রীতে পরিপূর্ণ থাকলে মালিকদের লাভ হবে কি না, সেই বিবেচনাতেই নির্ধারণ করা হয় ভাড়া।

অর্থাৎ সিটিং নামে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী না তুললেও নির্ধারিত সে ভাড়ার বাইরে নেয়ার আইনি সুযোগ নেই। কিন্তু পরিবহন খাতের নানা নৈরাজ্যের মতো সিটিং এর নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ও ঠেকানো যাচ্ছে না।

এক বছর আগে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ বাস মালিকদের চাপের মুখে অবৈধ কাজকেই স্বীকৃতি দিয়ে সিটিং এর নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ করে দিয়ে একটি নীতিমালা করার কথাই জানিয়েছিল। তবে মালিকদের প্রভাবের কাছে এখানেও আগাতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

গত বছরের মাঝামাঝি সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে বিআরটিএর অভিযান নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড হয়। রাজধানীতে সিটিং এর নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৫ ও ১৬ মে বিআরটিএ, পুলিশের সঙ্গে বাস মালিক সমিতিও অভিযানে নামে। জরিমানা করা হয় বেশ কিছু বাসকে।

কিন্তু বাস মালিকরা পাল্টা চাপ তৈরি করতে রাস্তায় গাড়ি নামানো কমিয়ে দেয়। আর জনগণকে ‘শিক্ষা’ দিতে বিভিন্ন স্টপেজে অতিরিক্ত সময় দাঁড়ানো, ঠাসা যাত্রী তোলার পর আরও যাত্র্রীর জন্য ডাকাডাকি করতে থাকে।

এক পর্যায়ে জনভোগান্তির মুখে বিআরটিএ পিছু হটে। অবৈধ সিটিং সার্ভিসকে বৈধ করতে নীতিমালা তৈরির জন্য গঠন হয় কমিটিও।

এ নিয়ে নৈরাজ্যের পর তিন মাসের মধ্যে নীতিমালা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এক বছরেও তা ঘোষণা হলো না।

খসড়া নীতিমালায় আপত্তি মালিকদের

বিআরটিএর ওই কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা করেছিল। এতে রাজধানীতে সীমিত আকারে বৈধভাবে সিটিং সার্ভিস চালুর সুপারিশ করা হয়।

নীতিমালার মধ্যে রয়েছে, একটি কোম্পানির সব বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে না চালিয়ে কিছু বাস সিটিং হিসেবে চালানো; সরকার থেকে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া ঠিক করে দেওয়া, একটি রুটকে কয়েকটি স্ল্যাবে ভাগ করে স্ল্যাবভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ, সিটিং সার্ভিসের বাসগুলোকে আলাদা রংয়ের করে এসব বাসের জন্য সীমিতসংখ্যক স্টপেজ দাঁড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

 

কোন কোম্পানির কতগুলো গাড়ি সিটিং হিসেবে চলাচল করবে, তা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির হাতে দেওয়ার কথা বলা হয় এই নীতিমালায়। আইন অমান্য করলে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করার কথাও বলা আছে নীতিমালায়।

পরিবহন মালিকরা এই জরিমানার অংক নিয়েও সংশয়ে আছেন। প্রধানত বিপুল পরিমাণ জরিমানার কথা ভেবেই তারা খসড়ার বিরোধিতা করছেন।

বিআরটিএ বলছে, কমিটি যে সুপরিশ করেছে তা ব্যাপক আকারে, সেটা এই পরিস্থিতিতে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ কারণে ওই সুপারিশগুলো সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, খুব শিগগির বাস্তবায়ন করা হবে।

সিটিং সার্ভিসের নীতিমালা করতে কাজ করা কমিটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেছেন, ‘বাস মালিকরা কতটা শক্তিশালী সেটা গত মে বছরের মাসে তারা দেখিয়ে দিয়েছেন। রাজধানীতে গণপরিবহন ব্যবস্থায় সরকারি সংস্থার ভূমিকা সীমিত। এই অবস্থায় বাস মালিকরা আইন মানতে চান না। কাজেই এই নীতিমালার কী হবে আর হলেও বাস মালিকরা কতটা মানবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে বিআরটিএতে দফায় মিটিং হয়েছে, এর পর বিআরটিএ, মালিক এবং সাংবাদিকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে, সেই কমিটি একট সুপারিশ দেয়। সে অনুযায়ী আবার বিআরটিএর সঙ্গে আমরা বসে ছিলাম। বিআরটিএ এ সংক্রান্ত একটি বিআরটিসিতে দিয়েছে। তারা আমাদের ডাকলে আমরা তাদের সঙ্গে বসব। শিগগির এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে বলে আশা করছি।’

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নির্বাহী সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিটিং সর্ভিস নিয়ে আমাদেরসহ বিআরটিএ একটি কমিটি করেছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সিটিং সার্ভিসের নতুন নীতিমালা হবে। গাড়িগুলোর আলাদা রঙ হবে। আমাদের সাথে বিআরটিএর এখনও সেভাবে আলোচনা হয়নি।’

সময় সীমা দিতে পারছে না বিআরটিই

নীতিমালা কবে নাগাদ সেটি দেয়া যাবে, সে বিষয়ে বিআরটিএ কিছুই বলতে পারছে না।

জানতে চাইলে সংস্থাটির পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে গঠিত কমিটি একটি সুপারিশ করেছে। সেটা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বসছিলাম। তাদের সুপারিশ ব্যাপক আকারে, যেটা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই সুপারিশগুলো সংক্ষিপ্ত করে মালিকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। শিগগির তাদের সাথে বসে একটা অবস্থায় পৌঁছতে পারব।’

যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস নামে রাজধানীতে কোনো পরিবহন ব্যবস্থাই চালু নাই। এটা একটি আইওয়াশ, এই আইওয়াশ করে বাড়তি টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।’

‘আমরা মনে করি, যারা পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদেরও এক ধরনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা বিআরটিএর কাছে একাধিকভাবে এটা নিয়ে দাবি জানিয়েছি। বিআরটিএ বার বার বলছে যে, সিটিং সার্ভিস নামের তাদের কোনো পরিবহনের অনুমতি নেই। কিন্তু তারপরও রাজধানীতে এই ধরনের অবৈধ সার্ভিস চলছে দুর্বার গতিতে।’

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ আজ : আলোচনায় সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ

  সদরুল আইন: অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ...