সর্বশেষ সংবাদ
Home / জাতীয় / সারাদেশে ধরপাকড়ে বিএনপিতে আতঙ্ক : ২৭ কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারা দেশে বিপুলসংখ্যক আটক

সারাদেশে ধরপাকড়ে বিএনপিতে আতঙ্ক : ২৭ কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারা দেশে বিপুলসংখ্যক আটক

 

বর্তমান দেশবাংলা ডেস্ক:

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে সহিংসতা, হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনার পর গত রবিবার রাত থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ২৭ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই ২৭ জনসহ সারা দেশে পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নৈরাজ্যে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে রাজধানীতে চিরুনি অভিযান ও ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, রাত নামলেই নেতাদের বাসা-বাড়িতে চলছে ব্লক রেইড। তল্লাশির নামে দলটির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসা, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের অফিস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গুম হওয়া নেতা ইলিয়াস আলীসহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ফলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অধিকাংশ নেতা বাড়িতে থাকছেন না। কেউ কেউ আত্মগোপন করেছেন।

গতকাল বিকালে বিএনপির তথ্য সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, তারা ঢাকাসহ দেশের জেলাগুলোতে এ পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতারের তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তবে এই সংখ্যা গ্রেফতারকৃতদের প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম।

কারণ ইন্টারনেট ও সেলফোন যোগাযোগ বিঘ্নিত হওয়ার কারণে তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কোষাধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান মিল্লাত, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, সদস্যসচিব আমিনুল হক, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, যুববিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং, সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ হোসেন পাপ্পা শিকদার, বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন প্রমুখ।

এছাড়া বিএনপির তথ্য সেলের হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করেছে দলের ২২ শতাধিক নেতাকর্মীকে। চট্টগ্রাম জেলায় ১২৭ জন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৪৭ জন, খুলনা মহানগরীতে ১৪৪ জন, জেলায় ৩৭ জন, রাজশাহী জেলায় ৭১ জন, মহানগরীতে ১৬১ জন, নাটোরে ২৪ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২ জন, নওগাঁয় ৩১ জন, বগুড়ায় ১২৩ জন, পাবনায় ৮৬ জন, সিরাজগঞ্জে ১০২ জন, রংপুর মহানগরে ২৪ জন, জেলায় ৪৮ জন, কুড়িগ্রামে সাত জন, নীলফামারীতে ১৩ জন, গাইবান্ধায় ১২২, লালমনিরহাটে ২৮ জন, দিনাজপুরে ৫৬ জন, পঞ্চগড়ে ১৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১১ জন, বরিশাল মহানগরীতে ৫৬ জন, বরিশাল জেলায় ৪৮ জন, পিরোজপুরে ২৭ জন, বরগুনায় ১৪ জন, ঝালকাঠিতে ১৭ জন, মাগুরায় ৪৭ জন, ঝিনাইদহে ৩৩ জন, যশোরে ১২৩ জন, নরসিংদীতে ৪৮ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৫৮ জন, মুন্সীগঞ্জে ৪৮ জন, গাজীপুর জেলায় ১২৪ জন, মহানগরীতে ১০২ জন, সিলেট মহানগরীতে ৬৩, জেলায় ২২ জন, সুনামগঞ্জে ২৩ জন, হবিগঞ্জে ১৯ জন, ভোলায় ২৪ জন, পটুয়াখালীতে ১৯ জন, ফরিদপুরে ৩৭ জন, সাতক্ষীরায় ৯৮ জন, কুমিল্লা মহানগরীতে ৬৭ এবং কুমিল্লা জেলায় ৩৭ জন।

এদিকে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাদের শরিকদলগুলোর বেশ কয়েক জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সামিউল হক ফারুকী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) ও গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক নুর, বিশিষ্ট চিকিত্সক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে নির্বিচারে গ্রেফতার করছে সরকার। দেশব্যাপী বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হচ্ছে। দেশের নাগরিকদের গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে।

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন থেকে চার কিংবা পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে।

 

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ আজ : আলোচনায় সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ

  সদরুল আইন: অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ...