সর্বশেষ সংবাদ
Home / ধর্ম / শোকের মাস মহররম

শোকের মাস মহররম

মহান রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশে যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল।

আর যে ব্যক্তি কারও প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল, আল কোরআন। আল্লাহর পিয়ারা হাবিব, আখেরি নবী, বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র, হজরত আলী (রা.)-এর আদরের দুলাল, জান্নাতি রমণীদের সরদার, নবী নন্দিনী হজরত ফাতিমা (রা.)-এর কলিজার টুকরা, আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য, জান্নাতের সরদার, বিশ্ব মুসলিমের নয়নমণি, হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আশুরা দিবসে উত্তপ্ত মরুভূমি কারবালা প্রান্তরে, ফুরাত নদীর তীরে, ক্ষমতালোভী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মম, নৃশংসভাবে শাহাদাতবরণ করেন।

এ নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। কারবালা ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর। যেখানে ৬২ হিজরির মহরম মাসের ১০ তারিখ শুক্রবার, হজরত হুসাইন (রা.) শাহাদাতবরণ করেছিলেন।

ইতিহাসে এটি একটি মর্মান্তিক বিয়োগান্তক ঘটনা। ইসলামের নামে ক্ষমতালোভী এজিদ বাহিনীর দুঃশাসনে যখন কুফার শান্তিপ্রিয় সরলমনা নিরীহ মুসলিমরা কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল এবং ইসলামকে চিরতরে নির্মূল করে দেওয়ার গোপন পরিকল্পনা চলছিল তখন সেই অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে, নিরীহ কুফাবাসী মুসলিমদের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের সান্ত¡না দেওয়ার জন্য কুফাবাসীর অনুরোধে নবীবংশের ধারক-বাহক হজরত হুসাইন (রা.) মদিনা মুনাওয়ারা থেকে রওনা হন।

কিন্তু আতঙ্কিত ক্ষমতালোভী এজিদ, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় নবী দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.)-কে কারবালার ময়দানে প্রতিহত করে এবং তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে নবী দৌহিত্রকে হত্যা করতেও তার হাত প্রকম্পিত হয়নি।

কারবালার এ হৃদয় বিদারক ঘটনা, মহিমাময় মহররম মাসের ঐতিহাসিক মহান আশুরার দিনে সংঘটিত হওয়ায় এতে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। এতে শাহাদাতের মাহাত্ম্য যেমন বহু গুণে বেড়েছে, তেমনি আশুরা পেয়েছে ইতিহাসের নতুন পরিচিতি। হুসাইনি কাফেলা যখন কারবালায় অবস্থান করছে, তখন তাদের পানির একমাত্র উৎস এই ফুরাত নদী, যা ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ বাহিনী ঘিরে রাখে, অবরুদ্ধ করে রাখে নিরস্ত্র অসহায় আহলে বাইতকে, এ নদী থেকে পানি সংগ্রহ করতে গেলে ফুলের মতো নিষ্পাপ দুগ্ধপোষ্য শিশুপুত্র আলী আসগার এক ফোঁটা পানির জন্য সীমার বাহিনীর তীরের আঘাতে নির্মমভাবে শহীদ হন।

সেদিন ফোরাতকূলে পানি পানি বলে অবর্ণনীয় মাতম উঠেছিল। সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত কারবালার প্রান্তরে প্রতারিত নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হোসাইনি কাফেলা বিশ্ব মুসলিম ইতিহাসে চির স্মরণীয় ও বরণীয় এবং কুচক্রী, ক্ষমতালোভী, স্বৈরাচারী এজিদ বাহিনী চির কলঙ্কিত ও ঘৃণিত।

প্রতিটি মহররম ও আশুরা আমাদের সত্য ও ন্যায়ের ওপর দৃঢ়পদ থাকার মাহাত্ম্য স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসলামী জীবনযাপনে সঠিক শিক্ষা ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করে, ভয়কে জয় করে নিজের জীবন উৎসর্গ করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণে কারবালা উদ্বুদ্ধ করে।

আল্লাহুম্মা আমীন।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

পলাতক বায়তুল মোকাররমের খতিবেন সন্ধান মিলেছে গোপালগঞ্জে

  স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী সরকারের পতনের পর পলাতক রয়েছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল ...