সর্বশেষ সংবাদ
Home / খেলাধুলা / শুভ জন্মদিন, ডিয়েগো ‘জাদুকর’ ম্যারাডোনা

শুভ জন্মদিন, ডিয়েগো ‘জাদুকর’ ম্যারাডোনা

স্পোর্টস ডেস্ক : ইউরোপিয়ান ফুটবলের ঝাঁঝ তখনো বাংলাদেশের মানুষের মাঝে চেপে বসেনি। স্যাটেলাইট চ্যানেল তো দূরের স্বপ্ন, টেলিভিশনের দেখা পাওয়াটাই মুশকিল। সেই আকালের দিনেও একজন জাদুকরে মোহিত হয়েছিল বাংলাদেশ। সাদাকালো টিভির পর্দায় একজন ফুটবলার জয় করে নিয়েছিলেন কোটি মানুষের মন। তিনি ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনাকে ৮৬ বিশ্বকাপটা যিনি একাই জিতিয়ে দিয়েছিলেন।

১৯৬০ সালের এই দিনে (৩০ অক্টোবর) আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন আর্জেন্টাইন এই জাদুকর। সেদিন কে জানতো সদ্যভূমিষ্ট এই শিশুকে দেওয়া হয়েছে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুরধার মেধা আর ইতিহাসের অন্যতম সেরা বাম পা!

বিতর্ক আর খ্যাতির মিশেলে অনন্য যিনি
সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা। অনেকের কাছে তিনি আবার ফুটবল ঈশ্বর, সেরাদের সেরা। এমনকি তার নামে ধর্ম আছে। যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত ম্যারাডোনার নামে জপ করে। বল পায়ে দক্ষ নিয়ন্ত্রণ, ডিফেন্ডার আর গোলরক্ষকদের বোকা বানিয়ে তিনি যেমন অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্ত জন্ম দিয়েছেন, তেমনি ডোপ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে হয়েছেন বিতর্কিত। হ্যান্ড অব গডের সেই বিতর্কিত গোল যে ম্যাচে ছিল, সেই ম্যাচেই ছিল তার গোল অব সেঞ্চুরি। বিতর্ক আর খ্যাতিতে ম্যারাডোনা এভাবেই মিশেছিলেন সারাজীবন।

মাত্র দুই দশকের পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা খেলেছেন ছয়টি ক্লাবে। ষোল বছর বয়সে পা দেয়ার ঠিক দশদিন আগে নিজ শহরের ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে অভিষেক ঘটে তার, বর্তমানে হোম গ্রাউন্ডের নামকরণ হয়েছে ম্যারাডোনারই নামে। তবে ক্যারিয়ারের সোনালী সময় পার করেছেন ইতালির নেপলস শহরে। সেখানকার ক্লাব নাপোলিকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য উচ্চতায়। যেখানে আজও ম্যারাডোনাকে স্মরণ করা হয় ঈশ্বরের সম্মান নিয়ে।

বর্ণিল এক ক্যারিয়ার
তরুণ বয়সের কারণে ১৯৭৮ বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও ১৯৮২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে চাপান ম্যারাডোনা। ব্রাজিলের বিপক্ষে লাল কার্ড পেয়ে শেষ হয় তার আসর। এরপর ১৯৮৬ বিশ্বকাপ। তারকা থেকে কিংবদন্তি কিংবা সর্বকালের সেরা হয়ে ওঠার মঞ্চটা ছিল সেবারেই। তার নৈপুণ্য ও নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো আর্জেন্টিনা জিতে নেয় বিশ্বকাপ।

এরপর ১৯৯০ বিশ্বকাপেও দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। সেবারও লালকার্ড দেখতে হয়। রেফারির বিতর্কে শিরোপা হাতছাড়া হয় আর্জেন্টিনার। এরপরই মাদকের সঙ্গে সখ্যতা। ক্যারিয়ারটা শেষদিকে আর বর্ণিল হয়নি ওই এক কারণে। ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ক্যারিয়ারে আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা মোট গোল করেছেন ৩৪৬টি।

তবে, ম্যারাডোনার কৃতিত্ব আরও বেশি বোঝা যায় নাপোলির জার্সিতে। আশির দশকের শেষে ইতালির সাধারণ এক ক্লাব নাপোলিকে জেতান লিগ ও ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা। জুভেন্টাস-এসি মিলানদের মতো জায়ান্টদের ভিড়ে এত দিন আঁধারে থাকা নাপোলিকে রাঙিয়ে তোলেন নিজের আলোতে।

মানবিক ম্যারাডোনা
ম্যারাডোনার জীবনের এমন চিত্রনাট্য সম্ভবত ঈশ্বর এভাবেই লিখতে চেয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সের সবচেয়ে দরিদ্র এক অঞ্চল থেকে উঠেছেন বিশ্বসেরার মঞ্চে। মাঝে সঙ্গী ছিল চরম ক্ষুধা, ছিল দারিদ্র্যের সঙ্গে এক অসম লড়াই। নিজের সময়ে তার পা বিশ্ব ফুটবলকে শাসন করেছে। আর তার মুখে ছিল অসহায় মানুষের জয়গান।

রোনালদো ডা নাজারিও লিমা কিংবা রোনালদিনহো আদর্শ মানেন, সেই ম্যারাডোনা ছিলেন ভীষণ রকমের মানবিক। তার জীবনের আদর্শ ছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। ঈশ্বরের তৈরি সবচেয়ে কৌশলী বাম পায়ে তিনি এঁকে রেখেছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর ট্যাটু। আর বাহুতে ছিলেন আরেক বিপ্লবী চে গুয়েভারা। ছিলেন হুগো শ্যাভেজের বন্ধু। এমনকি ফিলিস্তিনের পক্ষেও কথা বলতে শোনা গিয়েছিল এই মহাতারকাকে।

২০১৮ বিশ্বকাপে রাশিয়াতে এলেন ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ম্যারাডোনা এগিয়ে এসে তাকে বুকে জড়ালেন। সারা বিশ্বের মিডিয়ার সামনে বলে গেলেন, মন থেকে আমি একজন আরব। আমি একজন প্যালেস্টাইনি! আজীবন ঠিক এভাবেই বলে গিয়েছেন মানবতার কথা। ফুটবলের ঈশ্বর খ্যাতি পাওয়া ম্যারাডোনা বাস্তবতায় ছিলেন ঠিক এমনই এক মানবিক মানুষ।

ফুটবল বিশ্বের অনন্য এই জাদুকরের মৃত্যু ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর। ঠিক যেদিন তার পিতৃতুল্য ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুদিবস। তার মৃত্যুর পরেই নাপোলি শিরোপা জিতেছে, আর্জেন্টিনা জিতেছে বিশ্বকাপ। ম্যারাডোনা তার জীবদ্দশায় সেই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখতে পারেননি। জন্মদিনে এটিই হয়ত আর্জেন্টিনার ভক্তদের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

বাফুফে সভাপতির পদে তরফদার-তাবিথ নাকি ইমরুল?

  নিজস্ব প্রতিবেদক: ফুটবলের প্রতি দেশের মানুষের যত আশা ও আবেগ, তা ...