সর্বশেষ সংবাদ
Home / সাহিত্য / শিকড়ের সন্ধানে

শিকড়ের সন্ধানে

এই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন যথাক্রমে- ডব্লিউ এ জেন কিন্স, জর্জ হ্যারি ল্যাংলি, এ.এফ রহমান ও রমেশচন্দ্র মজুমদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং রাজনীতিবিদ সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী

১৯১২ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন এবং ঘোষণা করেন যে, তিনি সরকারের কাছে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সুপারিশ করবেন। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস ফোর্ড কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ মাইকেল স্যাডলারের নেতৃত্বে তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন এই কমিটি ‘স্যাডলার কমিশন’ নামে পরিচিত। স্যাডলার কমিশন ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে।

স্যাডলার কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ১৩টি সুপারিশ করেছিল। ভারতের তদানীন্তন গবর্নর জেনারেল ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ তাতে সম্মতি প্রদান করেন। স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন লন্ডনন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার পি জে হাটর্গ। তিনি ১৯২০ সালে ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে তাকে সাহায্য করেন মিস্টার ডব্লিউ হোরনেল, স্যার নীল রতন সরকার, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, নবাব স্যার শামসুল হোদা ও নবাব জাদা খান বাহাদুর কেএম আফজাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যান্সেলর ছিলেন লওরেন্স জনলামলে ডানডাস ১৯২১-১৯২২ খ্রিস্টাব্দ। প্রথম উপাচার্য ছিলেন পি.জে হাটর্গ ০১.১২.১৯২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৩১.১২.১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ১৮৫৭ সালে আজ থেকে ১৬৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার আরও অন্তত ৬৪ বছর আগে স্থাপিত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৫৭ সালে (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৭ সালের ২৪ জানুয়ারি)। শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠার অন্তত ৩৪ বছর পর্যন্ত (১৮৫৭-১৮৯০ খ্রি.) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকারী সব কজন উপাচার্যই ছিলেন বিদেশী ইংরেজ। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শুরুর ১৪ বছরে (১৯২১-১৯৩৪ খ্রি.) মাত্র দুজন ছিলেন বিদেশী উপাচার্য। এর পরই শুরু হয় দেশীয়দের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ।

১৯৩১ সাল থেকে ১৯৪১ সালে এই সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বছর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন যথাক্রমে- ডব্লিউ এ জেন কিন্স, জর্জ হ্যারি ল্যাংলি, এ.এফ রহমান ও রমেশচন্দ্র মজুমদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং রাজনীতিবিদ সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ও ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বিশেষভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় এবং মুসলিম উপাচার্য ছিলেন স্যার এ.এফ রহমান ০১/০৭/১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৩১/১২/১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। প্রথম হিন্দু উপাচার্য ছিলেন ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার ০১/০১/১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৩০/০৬/১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২১ সালে খান বাহাদুর নাজিরুদ্দীন আহমেদ প্রথম রেজিস্ট্রার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং প্রথম লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মিস্টার এফ.সি টার্নার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বাঙালী উপাচার্য ছিলেন যথাক্রমে স্যার আহমেদ ফজলুর রহমান (স্যার এ.এফ রহমান) ও ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার (ডক্টর আর.সি মজুমদার) যা’ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এই দুজন মহান শিক্ষাবিদ ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপ-উপাচার্য ছিলেন ডক্টর মফিজুল্লাহ কবীর ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে। উল্লেখ করা যেতে পারে এর পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপ-উপাচার্যের পদ ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহিলা উপ-উপাচার্য ডক্টর জিনাতুন নেসা তাহমিনা। প্রথম ডিন কলা অনুষদ ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার। প্রথম ডিন বিজ্ঞান অনুষদ ডব্লিউ এ জেনকিন্স। প্রথম ডিন আইন অনুষদ ডক্টর এন.সি দাশ গুপ্ত। প্রথম মহিলা ডিন কলা অনুষদ অধ্যাপক আজিজুন নেসা।

বিশ্ববিদ্যালয় ৩টি অনুষদ কলা, বিজ্ঞান ও আইন এবং ১২টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ২৮ জন কলা, ১৭ জন বিজ্ঞান এবং ১৫ জন আইনের শিক্ষক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ যাত্রা শুরু হয়। বিভাগগুলো হলো- ১) ইংরেজী, ২) সংস্কৃতি ও বাংলা, ৩) আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ, ৪) ফার্সি ও উর্দু, ৫) ইতিহাস, ৬) অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ৭) দর্শন, ৮) গণিত, ৯) পদার্থ বিজ্ঞান, ১০) রসায়ন, ১১) আইন, ১২) শিক্ষা এই ১২টি বিভাগে কার্যক্রম শুরু হয়।

যে সব প্রথিত যশা শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্যরা হলেন- মহা মহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ.সি টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জি.এইচ ল্যাংলি, হরিদাশ ভট্টাচার্য, ডব্লিউ এ.জেনকিন্স, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, এ.এফ রহমান, সতেন্দ্রনাথ বসু, নরেশ চন্দ্র সেন গুপ্ত, জ্ঞান চন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি হল ঢাকা হল (পরে শহীদুল্লাহ হল), জগন্নাথ হল এবং মুসলিম হল (পরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) নিয়ে তার যাত্রা শুরু করে।

প্রতিষ্ঠা বর্ষে মোট ছাত্র সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন। তন্মধ্যে মুসলিম ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৭৮ জন। মুসলমান শিক্ষকদের অধিকাংশই নিয়োজিত হন আরবী, ইসলামিক স্টাডিজ এবং ফার্সি ও উর্দু বিভাগে।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে প্রথম মহিলা ছাত্রী লীলা নাগ ইংরেজীতে এম.এ ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা এম.এ ডিগ্রীধারী হিসেবে বের হন। এ সময় ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের আরেকজন ছাত্রী ছিলেন সুষমা সেন গুপ্তা। তিনি ছিলেন সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বি.এ (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ছিলেন গণিত বিভাগের ফজিলাতুন্নেসা।

১৯২৫-১৯২৬ শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হন ফজিলাতুন্নেসা। তিনি ১৯২৫ সালে গণিত বিভাগে এম.এ ক্লাসে ভর্তি হন। তিনিই ছিলেন নিখিল বঙ্গের প্রথম মহিলা মুসলিম গ্র্যাজুয়েট এবং উপমহাদেশের প্রথম মহিলা যিনি বৃত্তি নিয়ে বিলেতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম মহিলা অধ্যক্ষ হিসেবে ইডেন কলেজে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় মুসলিম ছাত্রী খোদেজা খাতুন ১৯৩৮ সালে এবং তৃতীয় মুসলিম ছাত্রী আজিজুন নেসা ১৯৪০ সালে বাংলা বিভাগে এম.এ ক্লাসে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী শিক্ষিকা করুণা গুপ্তা ১৯৩৫ সালে ইতিহাস বিভাগে যোগ দেন। দ্বিতীয় নারী শিক্ষিকা চারুপমা বসু ১৯৩৭ সালে ইংরেজী বিভাগে যোগ দেন।

১৯২১ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্ব মোট ৭১১ জন ছাত্রী ভর্তি হন। ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৬৯ জন আর ছাত্রী সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। প্রথম সমাবর্তনে বক্তা ছিলেন জর্জ আর বুলওয়ার লিটন, প্রথম পি.এইচ.ডি অর্জন করেন ডক্টর বিনয় ঘোষ। প্রথম ডি.এস.সি ডিগ্রী লাভ করেন চন্দ্র শেখর ভেক্টর রমণ, প্রথম মুসলিম পি.এইচ.ডি অর্জন করেন ডক্টর রজব আলী মির্জা। প্রথম মরণোত্তর ডি.লিট ডিগ্রী পান ডক্টর মুহম্ম্দ শহীদুল্লাহ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সমগ্র এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন ঢাকার বাঙালী নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় (১৮৫২-১৯১০ খ্রি.)।

১৮৮২ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাঙালীদের মধ্যে সর্বপ্রথম পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন আমাদের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। অবিভক্ত বাংলায় মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন সোহরাওয়ার্দী (১৮৭৭-১৯৩৫ খ্রি.)। ঢাকা শহরের রায় সাহেব বাজার মহল্লায় তার জন্ম হয়েছিল। তিনি ১৮৯৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হোস্টেলের নাম ‘চামেলী হাউজ’। ১৯৪৫ সালে ৩ জন ছাত্রী নিয়ে এটি চালু হয়। ১৯৫৬ সালে মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নামে এটির নতুন নামকরণ হয় এবং নতুন ভবণে স্থানান্তর করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্বতন্ত্র সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগ খোলা হয়। সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রথম অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ্যা বিশারদ, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন ‘বৌদ্ধগান ও দোহার’ (১৯০৭ সালে নেপালের রাজ দরবার থেকে এটি সংগৃহিত) আবিষ্কারক কলকাতা সংস্কৃত কলেজের সাবেক অধ্যাপক মহামহোপাধ্যায় হর প্রসাদ শাস্ত্রী। এ বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেছিলেন ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার ও এ.এফ রহমান। পদার্থ বিদ্যা ও রসায়ন বিভাগে উপ মহাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের নিয়োগ দেয়া হয়, এরা হলেন- সতেন্দ্রনাথ বসু, সুরেন্দ্রনাথ ঘোষের নাম উল্লেখযোগ্য। রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ছিলেন ডক্টর জ্ঞান চন্দ্র। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেন গুপ্ত প্রথম আইন বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।

১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঢাকায় আসেন এবং কার্জন হলে যথাক্রমে ১০ ফেব্রুয়ারি ও ১৩ ফেব্রুয়ারি বক্তৃতা প্রদান করেন।

১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার আবদুর রহিম, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, স্যার যদুনাথ সরকার, স্যার মোহাম্মদ ইকবাল এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়।

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি নতুন অনুষদ, ১৬টি নতুন বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে কলা ভবন নির্মিত হয় ১৯৬৫ সালে এবং টি.এস.সির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৬২ সালে।

১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষ সমাবর্তনে অধ্যাপক সতেন্দ্রনাথ বসু (মরণোত্তর), ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর), বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলী আকবর খান, ডক্টর হিরেন্দ্র নাথ দে, ডক্টর মুহম্মদ কুদরত-ই-খুদা, অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন ও অধ্যাপক আবুল ফজল কে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়।

গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে জাতীয় অধ্যাপক পদ প্রচলন করে এবং ওই বছর ১৮ মার্চ ৩ জনকে ওই পদে নিযুক্ত করেন। এরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক আর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র, ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল ও ১৩৮টি উপাদান কল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ২০০ জন। পাঠদান ও গবেষণায় রয়েছেন ২ হাজার ১০ জন শিক্ষিক। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ১৩,১৯৭ জন এবং শিক্ষিকার সংখ্যা প্রায় ৬৬৮ জন (শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-২০১৯ অনুযায়ী)।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ সংক্ষেপে (ডাকসু) এর নির্বাচন হয়েছে এ পর্যন্ত ৩৭ বার। সমাবর্তন হয়েছে মোট ৫২ বার। বর্তমান ভিসি ড. আখতারুজ্জামান হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ তম ভিসি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিগত ১০০ বছর ধরে ৩৭ জন কে সম্মান সূচক ‘ডক্টরেট ডিগ্রী’ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ দেয়া হয় ভারতের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়কে এবং এখন এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮।

শিক্ষার পরিবেশ আর শতবর্ষ পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই আজ ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। একটি জাতি রাষ্ট্র জন্মদানের গৌরবে গৌরাবান্বিত আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই অবলীলা ক্রমে বলা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসই আজ বাংলাদেশের গৌরবজ্জ্বোলের ইতিহাস, বাঙালীর আত্ম পরিচয়ের ইতিহাস।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

“ব্যর্থ পুরুষ”

ডাঃ বাসুদেব পোদ্দার গাড়ি বাড়ি অর্থ করি নেই বলে আজ ব্যর্থ পুরুষ, ...