সর্বশেষ সংবাদ
Home / সারাদেশ / ঢাকা বিভাগ / লাগামহীন নিত্যপণ্য, বিক্রেতাদের দাম বাড়ানোর অজুহাতের শেষ নেই

লাগামহীন নিত্যপণ্য, বিক্রেতাদের দাম বাড়ানোর অজুহাতের শেষ নেই

 

বর্তমান দেশবাংলা:

নিত্যপণ্য, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংস, এমনকি মসলাজাত পণ্যের দামে দীর্ঘদিন ধরেই হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বাজার অস্বস্তিতে ভোগান্তির অন্ত নেই।

বিভিন্ন সময় নানা পণ্যের দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও বাজার ছুটছে ঊর্ধ্বমুখী। সবজির বাজার দীর্ঘদিন ধরে চড়া, যা কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে লাগামছাড়া। এরই মধ্যে বৃষ্টির দোহাই দিয়ে আরেক দফা ঘা দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আলু, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ।

এদিকে বাজারে গরু-খাসির তুলনায় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা তুলনামূলক বেশি, যে কারণে দামও অনেকটা বাড়তি।

শুক্রবার (১২ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এই চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে বেশি দামেই তাদের কিনে আনতে হয়েছে। এবং সরবরাহ কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন তারা।

টিসিবির তথ্য বলছে, এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ, আর আলুর বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ।

জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তার মধ্যে বাজারভেদে বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। দিন দশেক আগেও এর দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কাকরোলের দাম ৩০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা এবং করলা ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া ২০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে বরবটি, টমেটো ও গাজরের। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার জন্য সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি ও মৌসুমি বন্যার অজুহাত দিচ্ছেন। আবার অনেকে মৌসুম শেষ এবং শীতের মৌসুম আসার কথা বলছেন। এর বাইরে অতি প্রয়োজনীয় আলুর দাম বৃদ্ধিকে সামনে নিয়ে আসছেন। কিন্তু বন্যা তো সারা দেশে হয়নি।

এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে আলুর সাধারণ দাম কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। পণ্যটির দাম ৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে সেটি একবার নেমে ২৫-৩০ টাকায় আসার পর আবারও লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে। তা আর থামছে না।

সরকারি সংস্থা টিসিবির বাজারদরের প্রতিবেদনে জানা যায়, বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে। এক বছর আগে পণ্যটির দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা। বছর ব্যবধানে বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। এর উৎপাদন নিয়ে তথ্যের গরমিল রয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের পক্ষে বলা হচ্ছে, আলুর চলতি উৎপাদন ৭০ লাখ টন। আবার কৃষি বিভাগ বলছে, ১ কোটি টনের বেশি। ১ কোটি টন হলেও অন্তত ২৫ শতাংশ পচে নষ্ট হয় বলে জানা যায়। সেটি হলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম।

অপর দিকে আলুর চেয়ে পেঁয়াজের দাম আরও লাগামহীন। বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে পণ্যটির দাম। বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। টিসিবির হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এ হিসাব ধরলেও গত এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বিক্রেতাদের অজুহাত বাজারে সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। তাদের কেউ কউ বলছেন, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের স্থানীয় উৎস থেকে ঠিকমতো আসছে না, আবার আমদানি করা পেঁয়াজের খরচ বেশি। ফলে দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন বছরে গড়ে প্রায় ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অপচয় ধরলেও যেটুকু ঘাটতি থাকে, তা আমদানি করে মেটানো হয়

এছাড়া বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এখনও বেশ চড়া। সর্বশেষ বাজারে ভালো মানের কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, চলতি বছরের এপ্রিলে দেশে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে মরিচগাছ নষ্ট হয়ে যায়। এতে স্থানীয়ভাবে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয় এবং দাম বাড়তে থাকে।

অন্যদিকে আজকের বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, কক প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, লেয়ার প্রতি কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আগের বাড়তি দামেই প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায় এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকায়। এখানেও বৃষ্টির অজুহাত দিচ্ছেন বিক্রেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন বাজারের একাধিক ক্রেতারা বলছেন, শুধু পেঁয়াজ আর আলুর দাম বাড়েনি। চাল, আলু, কাঁচা মরিচ, ব্রয়লার মুরগিসহ প্রায় সব ধরণের সবজি বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে তাদের। তারা এভাবে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।

 

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

নরসিংদীর শিবপুরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ – ২০২৪ উদযাপিত

  মোঃএমরুল ইসলাম,জেলা প্রতিনিধি,নরসিংদীঃ নরসিংদীর শিবপুরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ – ২০২৪ পালন ...