সর্বশেষ সংবাদ
Home / অর্থনীতি ও বানিজ্য / মেট্রোরেলের প্রভাব কম উত্তরা-মতিঝিল রুটে

মেট্রোরেলের প্রভাব কম উত্তরা-মতিঝিল রুটে

রাজধানীবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের কারণে মিরপুর-মতিঝিল সড়কে বাসযাত্রী কমলেও উত্তরা-মতিঝিল সড়কে প্রভাব কম। বিমানবন্দর সড়ক থেকে মেট্রোরেলের প্রথম স্টেশন অনেকটা দূরে হওয়ায় যাত্রীদের আগ্রহের কমতি আছে। এজন্য সরকার মেট্রোরেলকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত নেওয়ার সমীক্ষা চালাচ্ছে।

জানা গেছে, মেট্রোরেলের প্রথম স্টেশন উত্তরা উত্তর দ্বিতীয় স্টেশন উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ এই তিনটি স্টেশনে খুব বেশি যাত্রী থাকে না। পল্লবী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক হয়েছে। এজন্য মিরপুর-মতিঝিল রোডের বাসে যেমন যাত্রী কমেছে, তেমনি সড়কে নেই চিরচেনা যানযট।

বিমানবন্দর সড়ক থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশনটি কিছুটা দুরে হওয়ায় উত্তরা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো আগের মতোই যাত্রী পাচ্ছে। একজন যাত্রী উত্তরা থেকে ৬০ টাকায় মতিঝিল যেতে পারছে। অথচ কেউ যদি উত্তরা থেকে মেট্রোরেলে আসতে চায় তাকে প্রথমে রিকশা করে উত্তরা উত্তর স্টেশনে যেতে হবে। এজন্য রিকশা ভাড়া দিতে হবে ৭০ টাকা। আর মতিঝিল থেকে মেট্রোরেলের ভাড়া ১২০ টাকা। আর মেট্রোরেলের জন্য বিআরটিসির শাটল বাসে গেলে লাগবে ২০ টাকা এবং মেট্রোরেলের ভাড়া ১২০ টাকা। ফলে খরচ হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৯০ টাকা।

গত ৪ নভেম্বর মেট্রোরেল উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোদমে চালু হয়েছে। এতে আগের তুলনায় ভিড় বেড়েছে মেট্রোরেলে। সুবিধা পাচ্ছেন মতিঝিলের অফিসপাড়ায় যাতায়াতকারীরা। এছাড়া ফার্মগেট ও বিজয় সরণিতে যানজট আগের চেয়ে কমেছে। কিন্তু বহুল প্রতীক্ষিত আধুনিক এই গণপরিবহণ সেবার তেমন প্রভাব পড়েনি উত্তরা থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে চলাচল করা বাসে। সরেজমিন সড়কের এই চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর রামপুরা থেকে প্রগতি সরণি হয়ে বিমানবন্দর এলাকার সড়কগুলো আগেই মতোই যানজটে ধুঁকছে। মেট্রোরেল ও আশপাশের এলাকা কিছুটা যানজট মুক্ত হলেও সড়ক নির্ভর এ রুটে যানজট আগের মতোই।

বিমানবন্দর এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আপেল মাহমুদ জানান, ‘আমার অফিস ফার্মগেটে। এই রুটের যাত্রীরা মেট্রোর সুবিধা পায় না। ফলে এদিকের সড়কে চিরচেনা চাপ দেখা যাচ্ছে। আমার এক বন্ধুর অফিস মতিঝিলে। তিনি পরিবার নিয়ে মিরপুরে থাকেন। তার যাতায়াত আগের থেকে সহজ হয়েছে।’

একই তথ্য জানালেন যাত্রী আবদুল হক। তিনি যাবেন উত্তরায় ভাইয়ের বাসায়। এসেছেন কুমিল্লা থেকে। মেট্রোরেলে না এসে বাসে এসেছেন তিনি। জানতে চাইলে বলেন, ‘মেট্রোরেলে গেলে মতিঝিল হয়ে যেতে হতো। আমি সায়েদাবাদ নেমে সরাসরি বাসে এসেছি।’

এই রুটের যাত্রীদের অধিকাংশই এমন তথ্য জানিয়েছেন। তবে এর ঠিক উল্টো চিত্র ফার্মগেট, বিজয় সরণি ও মিরপুর এলাকায়। মেট্রোরেলের প্রভাবে এলাকাগুলোর সড়কে যানজট কিছুটা কমেছে।

এই রোডের নিয়মিত যাত্রী কালাম সরকার জানিয়েছেন, উত্তরা-মিরপুর হয়ে বিজয় সরণি এলাকায় মেট্রোরেলের প্রভাব পড়েছে। নিচের সড়কে মেট্রোরেলের বর্ধিত অংশ চালু হওয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় কম যানজট দেখা গেছে। অন্যান্য দিন অফিস এবং স্কুল-কলেজ যাওয়ার সময়ে সড়কে যেমন চাপ থাকে, সে তুলনায় মঙ্গলবার অনেকটাই ফাঁকা ছিল এই সড়ক।

মেট্রোরেল উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সম্প্রসারণ নিয়ে সমীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সেতুমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে জানান, মেট্রোরেল মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের নির্মাণকাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে। পাশাপাশি টঙ্গীর সঙ্গে যুক্ত করার সমীক্ষা চলছে। মেট্রোরেলে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ চালু হবে মেট্রোরেলের ছয়টি লাইন।

উত্তরা থেকে বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে তিনটি রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এর মধ্যে কিছু বাস মগবাজার-মৌচাক হয়ে মতিঝিল যায়। কিছু বাস মহাখালী থেকে ফার্মগেট শাহবাগ হয়ে মতিঝিল-গুলিস্তান যায়। আবার কিছু গাড়ি ক্ষিলক্ষেত বিশ্বরোড থেকে প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরা বাড্ডা দিয়ে মতিঝিল ও সদরঘাট পর্যন্ত যায়। এই তিনটি রুটেই যাত্রী স্বাভাবিক রয়েছে।

এই রুটের সবগুলো বাসই মূলত গাজীপুর থেকে ছেড়ে আসে। তাই এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম গাজীপুর পরিবহণ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামদানী খন্দকার-এর কাছে। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, গাজীপুর থেকে উত্তরা হয়ে যেসব গাড়ি মতিঝিল যাচ্ছে সেখানে মেট্রোরেলের কোনো প্রভাব পড়েনি। কারণ এখান থেকে মেট্রোরেলে যাওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য। তাই যাত্রীরা মেট্রোরেলে উঠছে না।

অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে মেট্রোরেলের কাজ শুরু করে সরকার। ফলে প্রথম পর্যায়ে দেশের প্রধান রেলস্টেশন কমলাপুর থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে বিতর্কের মুখে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করার কাজ শুরু হয়। কমলাপুর পর্যন্ত প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরেই মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে।

প্রসঙ্গত, ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল পরিষেবার দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

বৈষম্যবিরোধী আন্দলনের প্রভাবে জুলাই-আগস্ট মাসে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কমেছে ১৩ শতাংশ

  স্টাফ রিপোর্টার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে গত জুলাই-আগস্ট মাসে অস্থিরতার প্রভাব ...