সর্বশেষ সংবাদ
Home / অপরাধ / মাদারীপুরে র‌্যাব-৮ এর অভিযানে সংঘবদ্ধ ডাকাত ও অপহরণ চক্রের মূলহোতা সহ গ্রেফতার ৪

মাদারীপুরে র‌্যাব-৮ এর অভিযানে সংঘবদ্ধ ডাকাত ও অপহরণ চক্রের মূলহোতা সহ গ্রেফতার ৪

কাজল খান – মাদারীপুর প্রতিনিধি::
ইতিপূর্বে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংঘবদ্ধ ডাকাতি ও অপহরন চক্রের তথ্য বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে। এই অপরাধী চক্র সারাদেশব্যাপী বিভিন্ন অভিনব পন্থায় সাধারণ মানুষকে সর্বশান্ত করে ও জান-মালের ক্ষতি করে আসছে। বিষয়টি র‌্যাব অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। গত ২৯ জুন আনুমানিক সন্ধ্যা ৭ টার দিকে এই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে একজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে সেই ব্যক্তিকে ময়মনসিংহে তার বাড়িতে পৌছে দেবার কথা বলে যাত্রী হিসেবে তাকে এই ডাকাত চক্রের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। উল্লেখ্য যে, সেই মাইক্রোবাসে আগে থেকেই এই চক্রের অন্যান্য সদস্যরা যাত্রী বেশে অবস্থান করছিল।
পরবর্তীতে তাদের পরিকল্পনা মাফিক রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা পেরিয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের নির্জন একটি স্থানে নিয়ে অস্ত্রের মুখে প্রথমে তার সর্বস্ব কেড়ে নেয়। এরপর তারা অপহৃত ব্যক্তির বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে নগদের মাধ্যমে আরও ৫০০০০ টাকা আদায় করে। এই কার্যক্রম শেষে ডাকাত দল ময়মনসিংহের ভরাডোবা এলাকাযর নির্জন একটি স্থানে অপহৃত ব্যক্তির হাত পা বেঁধে ফেলে রেখে চলে যায়। র‌্যাব এই ভুক্তভোগী ব্যক্তির সংবাদ প্রাপ্তির পর তাদের গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে এই চক্র গতকাল ০২ জুলাই দুপুরে বেনাপোল বন্দর থেকে ঠিক একইভাবে দুইজন বিদেশফেরত যাত্রীকে টার্গেট করে। ডাকাত দলের একজন সদস্য সেই যাত্রী দু’জনের সাথে একটি পাবলিক বাসে সাধারণ যাত্রী হিসেবে অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে ডাকাতের অন্যান্য সদস্যরা তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার নিয়ে বাস টিকে অনুসরণ করে। অন্যদিকে এই ডাকাত চক্রের আরেকটি দল একটি নোয়া মাইক্রোবাস নিয়ে ঢাকা গোপালগঞ্জ মহাসড়কের পাশে সাম্পান নামক একটি হাইওয়ে রেস্তোরার কাছাকাছি স্থানে আইন শৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে বাসটির গতি রোধ করে এবং তাদের টার্গেট করা দু’জন প্রবাসী যাত্রীদু’জনকে সেই যাত্রী বেসি ডাকাত সদস্যের সহায়তায় বাস থেকে নামিয়ে নিজেদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসে তোলে। ডাকাত চক্রটি অপহৃত ব্যক্তিদের নিয়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আসার পর তাদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সহ একটি ব্যাগ ও অন্যান্য মালামাল লুট করে এবং তাদেরকে হাত পা বেধে রাস্তায় ফেলে দেয়। এরপর তারা বরিশাল-মাদারীপুর মহাসড়কের রাজৈর এ একটি হাইওয়ে রেস্তোরাঁয় যাত্রা বিরতি করে লুটকৃত মালামাল নিজেদের মধ্যে বন্টনের পরিকল্পনা করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব ৮, সিপিসি ৩ এর একটি আভিযানিক দল তাতক্ষনিকভাবে উক্ত স্থানে পৌছালে তারা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে এদিক ওদিক পালানোর চেষ্টা করলে দলনেতা মেহেদীসহ ০৪ জনকে (১। মেহেদী হাসান (৪০),  গ্রাম:মশুরিয়া, থানা: বিমানবন্দর, জেলা: বরিশাল,  ২। সাইফুল ইসলাম (২৮),  গ্রাম জলিসা, থানা ধুমকি জেলা পটুয়াখালী,  ৩। মো: ওমর ফারুক (৩৬), গ্রাম: দক্ষিণ বাদুড়া, থানা পটুয়াখালী সদর, জেলা পটুয়াখালী, ৪। মো: রেজাউল হক (৪০), গ্রাম: নতুল্লাবাদ, থানা : বিমানবন্দর জেলা: বরিশাল) র‌্যাব আটক করে এবং বাকি তিনজন পালিয়ে যায়।
 র‌্যাব কর্তৃক ঘটনাস্থল থেকে এই চক্রের ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কার এবং বিভিন্ন প্রকার সরঞ্জামাদি: ১। চাইনিজ কুড়াল—০১ টি, ২। হাসুয়া—০১ টি, ৩। দা—০১ টি, ৪। ছুরি—০১, ৫। তলোয়ার—০১টি, ৬। চাকু—০২ টি, ৭। খেলনা পিস্তল—০২ টি, ৮। মলম—০৫ টি, ৯। স্প্রে সদৃশ্য শিশি – ১ টি, ১০। ২ টি লাঠি, ১১। গামছা ২ টি, ১২। পাটের রশি ২ টি উদ্ধার করা হয়।
তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় দলনেতা মেহেদী ইতিপূর্বে ২০১৭ সালে ইয়াবা বহন ও সেবনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে গেলে সেখানে এই ডাকাত চক্রের আরেক পলাতক সদস্যের সাথে তার পরিচয় হয়। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তারা এই জাতীয় ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় পরবর্তীতে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে সংঘবদ্ধ ভাবে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে এধরণের ডাকাতি ও অপহরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। উল্লেখ্য যে, দলনেতা মেহেদীর বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীর পল্টন থানায় একটি ডাকাতি মামলা সহ বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসংক্রান্ত আরও ১০ টি মামলা রয়েছে এবং অস্ত্র মামলায় সে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আটক হয় এবং এবছর মে মাসে সে জামিনে মুক্তি পায়। এছাড়াও অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া যায়। মূলত তারা সড়ক-মহাসড়ক, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিমানবন্দর, বাস স্ট্যান্ড, সীমান্ত বন্দর এলাকায় ওৎ পেতে থাকে এবং তাদের নিয়জিত লোকজনের মাধ্যমে টার্গেট চিহ্নিত করে।
কোন কোন সময় তারা যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে উঠায় এবং নিজেরাও যাত্রী বেশে গাড়িতে অবস্থান নেয়,অতঃপর কার্যসিদ্ধি শেষে তাদের নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যায়। বিভিন্ন সময়ে তারা ভাড়ায় চালিত গাড়ি উবার ও ছিনতাইকৃত গাড়ি ব্যবহার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, এই ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি তারা ইতিপূর্বে ছিনতাই করেছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানায় নিয়মিত মামলা করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হবে। এছাড়াও অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে সারা দেশব্যাপী র‍্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে।
র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষায় বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে র‍্যাব সবসময়ই অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। এপ্রেক্ষিতে সর্বদাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখে দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব। মহাপরিচালক র‍্যাব ফোর্সেস মহোদয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা মোতাবেক র‍্যাব ব্যাটালিয়ন সমূহ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সর্বাত্মক ভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রাজশাহীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

এই রাজশাহী অফিস: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার দায়ে গণপিটুনিতে ...