সর্বশেষ সংবাদ
Home / জাতীয় / বই না ছাপিয়েই সাড়ে ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ

বই না ছাপিয়েই সাড়ে ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ

প্রতি বছর জাতীয় ফলমেলা উপলক্ষে ‘ফলসম্ভার’ নামে একটি বই প্রকাশ করে কৃষি তথ্য সার্ভিস। মেলায় আগতদের বিভিন্ন ফল সম্পর্কে জানাতেই এই উদ্যোগ। মেলায় আগতদের মধ্যে বিনা মূল্যেই তা বিতরণ করা হয়। কিন্তু গত বছর ফলমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই বইটিও প্রকাশ হয়নি। কিন্তু সূত্র জানিয়েছে, বই প্রকাশ না হলেও বই প্রকাশের ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। কৃষি তথ্য সার্ভিসে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেট সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডায়েরি মুদ্রণেও লাখ লাখ টাকা লোপাট করেছে।

প্রতি বছর জুনে খামারবাড়ির পাশে খালি জায়গায় জাতীয় ফলমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিয়মিত এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়ে মেলা আয়োজন। মাঝে ২০২২ সালে মেলা আয়োজন করা হয়। তবে গত বছর ২০২৩ সালে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে মেলা উপলক্ষে ‘ফলসম্ভার’ শীর্ষক বইটিও প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু বই প্রকাশের ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই মাসে মোট ৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৯ টাকার বিল-ভাউচার তৈরি করে তা উত্তোলন করা হয়েছে। বই প্রকাশে তিনটি আলাদা কোটেশনে যথাক্রমে ৮৯০ কপি (২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৭ টাকা), ১০৬০ কপি (২ লাখ ৯২ হাজার ৬৮৭ টাকা) এবং ১০৬০ কপি (২ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৫ টাকা) মুদ্রণ ব্যয় দেখানো হয়েছে। এআইএসের তৎকালীন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবু জাফর আল মুনছুর এসব বিলে স্বাক্ষর করেছেন। এ প্রসঙ্গে বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে মনিটরিং উইংয়ের উপপরিচালকের দায়িত্বে থাকা মো. আবু জাফর আল মুনছুর গতকাল বলেন, এটা তো অনেক দিন আগের কথা। এ ব্যাপারে কৃষি তথ্য সার্ভিসই ভালো বলতে পারবে। জানা গেছে, ‘ফলসম্ভার’ বইটি প্রকাশ না করেই লাখ লাখ টাকা বিল উত্তোলনের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় এখন বইটির কয়েকটি কপি ছাপানোর তোড়জোড় চলছে, যাতে দেখানো যায়, বইটি প্রকাশ করা হয়েছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক সুরজিত সাহা রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ফলসম্ভার’ বইটি প্রতি বছর ফলমেলা উপলক্ষে ছাপানো হয়। তবে গত বছর ফলমেলা হয়নি। মেলা না হলেও বই প্রকাশের লাখ লাখ টাকা তো ঠিকই উত্তোলন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেলা না হলেও পরে বই প্রকাশ করা হয়েছে। এ বইয়ের অনেক ডিমান্ড (চাহিদা)। এ বই এ বছর মেলায় আগতদের দেওয়া হবে। গত বছরের বই এ বছর মেলায় কীভাবে দেওয়া হবে? এছাড়া এ বছরও তো এই বই ছাপানোর বাজেট রয়েছে। এ প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বইয়ের পাশাপাশি সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডাইরির পেছনে আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি খরচ দেখানো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জন্য প্রতি বছর ১৩ হাজার ১০০টি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডায়েরি মুদ্রণ হয় এআইএসের প্রেস থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রকাশিত ডায়েরির পেছনে (২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট) খরচ হয়েছিল ২৫ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু, এক বছরের ব্যবধানে সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডায়েরির পেছনে খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি ডায়েরি তৈরির খরচ পড়েছে প্রায় ৪১২ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে যাচাই করে দেখা গেছে, একই সমমানের ডায়েরি প্রকাশে প্রতিটির খরচ পড়বে ২৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৬০ টাকা। সেই হিসাবে ১৩ হাজার ১০০ ডায়েরি মুদ্রণে খরচ হবে ৩০ লাখ থেকে ৩৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে ডায়েরি মুদ্রণে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বেশি ধরা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক সুরজিত সাহা রায় বলেন, ‘এক বছরের ব্যবধানে কাগজের দাম অনেক বেড়েছে। এছাড়া, কাগজ তো টেন্ডারের মাধ্যমে কিনেছি। যিনি সর্বনিম্ন দর দিয়েছেন, তাকেই কাজ দেওয়া হয়েছে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ আজ : আলোচনায় সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ

  সদরুল আইন: অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ...