সর্বশেষ সংবাদ
Home / প্রচ্ছদ / নেত্রকোনায় মোহনীয় গন্ধে মাতোয়ারা বর্ষার যৌবনে  মেতে উঠছে কদম ফুল

নেত্রকোনায় মোহনীয় গন্ধে মাতোয়ারা বর্ষার যৌবনে  মেতে উঠছে কদম ফুল

নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোনার আকাশ জুড়ে কখনো কালো মেঘের ঘনঘটা, কিংবা এক চিলতে রোদের মুখে কালো মেঘের ভিড়। অথবা, হঠাৎ করেই মুষল ধারায় বৃষ্টি, চৈত্রের প্রখর রোদের পরে এমন প্রশান্তিই বলে দেয় বর্ষাকালের আগমনী বার্তা। ঋতুতে আষাঢ়-শ্রাবণ মূলত এ দু’মাস বর্ষাকাল।
বর্ষার আগমন যখন চারপাশে, তখন তার সঙ্গী হতে গাছে গাছে দেখা মিলে আরেক অতিথির। গ্রীষ্মের প্রখরতা কমাতে যখন আম, জাম, লিচুসহ নানা ফলের ঘ্রাণে মুখর চারপাশ। ঠিক তখনই আগমন ঘটে বর্ষার সঙ্গী কদম ফুলের।
সরু সবুজ পাতার ডালে ডালে গোলাকার মাংসল পুষ্পাধার আর তার থেকে বের হওয়া সরু হলুদ পাপড়ির মুখে সাদা অংশ কদমকে সাজিয়ে তোলে ভিন্নভাবে। একটি ফুলের মাঝে এত ভিন্নতার ছোঁয়া প্রকৃতিতে কদমকে করে তোলে আরও গ্রহণযোগ্য।
বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কদম ফুল। কদমের মি‌ষ্টি হা‌সি আমাদের মনে করিয়ে দেয় এই বু‌ঝি বর্ষা এলো। বাংলার গ্রাম ও বনে বনে বর্ষার মেঘমালা নেত্রকোনায় কদম ফুলের রেণু ভেসে চলে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের মি‌ষ্টি সুবাস। বাতাসে দোল খাওয়া কদম ফুলের তালে তালে পা‌খিরাও নেচে আজ পাগলপারা। গাইতে থাকে মিষ্টি সুরে গান।
বর্ষা এলেই কদম গাছের শাখায় শাখায় পাতার আড়ালে ফুটে থাকা অজস্র কদম ফুলের সুগন্ধ লোকালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই তো কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত। দেখতে মনে হয়, প্রকৃতি যেন আজ কানের দুলে সেজেছে কদম ফুল দিয়ে। এই ফুল পথচারীদের একবার হলেও নজর কাড়ে।
বৃ‌ষ্টি স্না‌নে কদম ফিরে পায় তার চিরচেনা রূপ। গাছ গাছে এ ফুলের সমাহার ঘটে। হাজারও গান ও ক‌বিতা দখল করে আছে এ ফুল। কদমের এ রূপের কারণের একে যুগে যুগে কবিরা তাদের কবিতা ও গানের মাঝে অলঙ্কার হিসেবে সাজিয়েছেন।  তাই তো পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীনের সেই বিখ্যাত গানের কথা মনে পড়ে—
প্রাণ সখীরে/ ঐ শোন কদম্ব তলে বংশী বাজায় কে/ বংশী বাজায় কে রে সখী, বংশী বাজায় কে/ আমার মাথার বেণী বদল দেবো, তারে আইনা দে।
বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান/ মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে/ এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান/—রবি ঠাকুরের এ গান কে না জানে।
কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। ভাগবত গীতাতেও রয়েছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি।
বর্ষা নিয়ে কবি, সাহিত্যিক ও গায়কদের উৎসাহের কমতি নেই। আর এ রূপসী বাংলা ছাড়া বিশ্বের কোথাও বর্ষার এ স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক রূপ চোখে পড়ে না।
বর্ষা মৌসুমে সারাদেশে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জে সবুজ পাতার মাঝে সাদা-হলুদ গোলাকৃতির কদম ফুল ফুটতে থাকে। এই ফুল ’নীপ’নামেও পরিচিত। এ ছাড়াও কদম ফুলের আরও কয়েকটি সুন্দর নাম রয়েছে। যেমন: বৃত্তপুষ্প, সুরভি, মেঘাগমপ্রিয়, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, কর্ণপূরক, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সিন্ধুপুষ্প ইত্যাদি।
কদম এমনই একটা ফুল, যা চোখে পড়লে হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া না করলে মন ভরে না। ফুল ফোটার মৌসুমে ছোট ছোট ডালের আগায় একক কলি আসে গোল হয়ে। ফুল বেশ কোমল ও সুগন্ধী। একটি পূর্ণ মঞ্জরিকে সাধারণত একটি ফুল বলেই মনে হয়।
কিন্তু বলের মতো গোলাকার মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস অতি চমৎকার। মঞ্জরির রঙ সাদা হলুদ মেশানো। সব মিলিয়ে সোনার বলের মতো ঝলমলে। ফুলের পাঁপড়ির নিপুণ বিন্যাস দেখে অনেক চুল প্রেমী ‘কদম ছাট’ দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ কচি ফুল সংগ্রহ করে প্রিয়জনকে উপহারও দেন।
কদম ফুল দেখতেই শুধু সুন্দর নয়, বরং ভেষজ গুণের পাশাপাশি কদমের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। কাঠ দিয়ে কাগজ, দেয়াশলাই ছাড়াও তৈরি হয়ে থাকে বাক্সপেটরা। আর কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক।
শহর জীবনে কদমের ঘ্রাণ যেন এখন অনেকটাই অতীত। নেই আর আগের মতো বৈভব। চৈত্রের শুরুতে বৃষ্টি ছুঁয়ে যায় বৃক্ষকে। তবে সেই রিমঝিম বৃষ্টিতে কদমের কোমলতা ছুঁয়ে যায় না আমাদের মনকে। তার সৌরভও যেন খুঁজে পাওয়া ভার। চোখ জুড়ানো ঘন সবুজ পাতার মাঝে হলুদ বন্ধুতায় চিরচেনা কদম গাছ এখন চোখে পড়ে কমই। তাই হয়তবা শহরজুড়ে কদমের শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেয়ার সুযোগ নাগরিক অবসর কিংবা ব্যস্ততায় প্রায় নেই বললেই চলে।
কদম মানে হলো ‘যা বিরহীকে দুঃখী করে’। তাই কদমতলে বংশীও বাঁজে মরমে। যে সুরে সবারই একটাই আবদার, পথজুড়ে ছাতার মতো ছেয়ে থাকা কদমের বৃষ্টি ভালোবাসার গল্পটা যেন না হয় রূপকথার কল্পকাহিনি।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস২০২৪ পালিত

সদর প্রতিনিধি জামালপুর: অদ্য ৫ অক্টোবর ২৪ জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস ২০২৪ ...