ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে এক নববধূর ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় অবশেষে মামলা হয়েছে। ভিকটিমের স্বামী অজ্ঞাত কারণে গা ঢাকা দিলে মেয়ের বাবা গ্রাম পুলিশ কৃষ্ণ পাল বাদী হয়ে মামলার অভিযোগ দাখিল করে। রবিবার বিকালে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ ওই মামলা নেয়।
জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের দিলিপ পালের স্ত্রী ঝরণা বালা (১৯) তার এক আত্মীয়ের পরীক্ষা দেখতে শনিবার স্বামীর মোটরসাইকেলে করে বালিয়াডাঙ্গী আসছিলেন। রাস্তায় বালিয়াডাঙ্গী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা চার যুবক তাদের চলন্ত মোটর সাইকেল লক্ষ্য করে আরসির বোতলে করে এসিড নিক্ষেপ করে। দুর্বৃত্তরা এসিড নিক্ষেপ করে দুটি মোটর সাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে নববধূ ঝরণা বালার ডান হাত, গলা ও উরুসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়।
দিলিপ পাল মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তদের ধাওয়া করেও তাদের ধরতে পারেননি। পরে ঝরণা বালাকে তার বাবা কৃষ্ণ পাল উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ঝরণা বালা হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে এই অভিযোগ করেন।
পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে গৃহবধূ ঝরণার কাপড় চোপড় জব্দ করেছে।
এদিকে রবিবার বিকালে মেয়ের পিতা কৃষ্ণ পাল বাদী হয়ে রানীশংকৈল উপজেলার ঝুলঝাড়ি গ্রামের সুজন ও অর্জুনকে আসামি করে বালিয়াডাঙ্গী থানায় মামলা দায়ের করে।
ঘটনার সময় দিলিপ পাল তার স্ত্রীর সঙ্গে থাকলেও অজ্ঞাত কারণে স্ত্রীকে এড়িয়ে চলছেন। দিলিপ পালের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পাশ থেকে একজন ফোন ধরে জানান, দিলিপ দোকানে ফোন চার্জ দিয়ে বাইরে আছেন। স্ত্রীর উপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনার পর থেকে স্ত্রীর পাশে না থাকায় এবং নিজে মামলার বাদী না হওয়ার ঘটনা রহস্যের সৃষ্টি করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসিড নিক্ষেপের মামলায় আসামি করা হয়েছে রানীশংকৈল উপজেলার ঝুলঝাড়ি গ্রামের খেলদার পালের ছেলে সুজন পাল ও তার চাচাত ভাই অর্জুন পালকে। সুজন পাল দিলিপ পালের প্রেমিকা আলোবালার আপন ভাই এবং অর্জুন চাচাত ভাই। দিলিপ সুজনের বোনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এমনকি বিয়ের প্রলোভনে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলে সে অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এরপর বিয়ের আশ্বাসে গর্ভপাত ঘটানোর পর বিয়ে করতে টালবাহানা করলে প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত বছরের ৩ জুলাই দিনাজপুর শহরের সুইহারী মোড়ে প্রকাশ্যে আলোবালার উপর এসিড নিক্ষেপ করে দিলিপ পাল। এতে প্রেমিকার শরীর ঝলসে যায়। এসব ঘটনায় দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। ওইসব মামলায় আদালত আসামি দিলিপ পালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও পুলিশ তাকে অজ্ঞাত কারণে গ্রেপ্তার করেনি। আর ওইসব মামলা থেকে বাঁচতে তার স্ত্রীকে ভিকটিম সাজিয়ে এসিড নিক্ষেপের নাটক সাজিয়েছেন বলে দাবি দিলিপের প্রেমিকা আলোবালার।
এ ব্যাপারে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি তদন্ত মিজানুর রহমান জানান, দিলিপ পালের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার ওয়ারেন্ট আছে। প্রেমিকার মামলা হতে বাঁচতে দিলিপ পাল এসিড নিক্ষেপের ঘটনার নেপথ্যে আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।