সর্বশেষ সংবাদ
Home / ধর্ম / জু’মআর নামাযঃ  ফযিলত ও গুরুত্ব

জু’মআর নামাযঃ  ফযিলত ও গুরুত্ব

মাওলানা সাইফুল ইসলামশি,ক্ষক: মাদরাসাতুল হিকমাহ,ঢাকা:

২৪ ফিট, রসূলবাগ, কদমতলী, ঢাকা

 

একজন ব্যক্তি ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম তার উপর আবশ্যক হয় নামায। মুমিনের উপর দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা আবশ্যক। সাবালক ছেলে-মেয়ে সকলের উপর নামায পড়া আবশ্যক। সময়মত আদায় করতেই হবে। নামায ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায অনেক গুরুত্বপূর্ণ।  নামাযকে বলা হয় মুমিনের মেরাজ। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজে যেমন আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন তেমনই বান্দা নামাযে দাঁড়িায়ে যেন আল্লাহ তা আলার সাথে কথা বলে। আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতিটি বাক্যের উত্তর দেন। এ যেন এক আশ্চার্যরকম দৃশ্য ! সরাসরি আল্লাহর সাথে কথপোকথন করা। আসমান ও জমিনের মালিক এর সাথে কথা বলা , কত বড় বিষয়!

হযরত বায়ায রা . থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়, নিশ্চয় সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে আলাপ করে ( এবং তার মনের কথা বলে ),সুতরাং সে যেন লক্ষ্য রাখে কি বিষয়ে আলাপ করছে এবং তোমাদের কেউ যেন অন্যের সাথে কুরআনের আওয়াজ নিয়ে প্রতিযোগিতা না করে। ( তাফসীরে সা’লাবী, ১/১৩৩ )

জুমআর দিন হল সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। প্রতি সাপ্তাহে একবার এই দিনটি আসে।মসলমানদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন। কেননা এই দিনে বিরাট প্রতিদান এর আমল রয়েছে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা . থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমআর দিন, এই দিনে হযরত আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে,এই দিনেই সেখান থেকে বের করা হয়েছে আর জুমআর দিনই কিয়ামত সংগঠিত হবে। (মুসলিম , হাদীস নং ৮৫৪ , তিরমিযী , হাদীস নং ৪৮৮ )

সুতরাং এই দিনটি অন্যান্য দিনের মত নয়। বরং এ দিনের বিশেষ কিছু ফযিলত আছে। তবে আমরা প্রতিদিনের মত এই দিনও  ঠিকমত নামায পড়া। কোরআন তিলাওয়াত করা। মৌলকি আমলের সাথে আরো কিছু আমল আমরা  হাদীাস মোতাবেক করতে পারি।

সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা

এই দিনের বিশেষ আমলগুলোর মধ্যে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা অনেক গুরুত্বপূণর্  আমল।  এই সূরা পাঠ করার অনেক সওয়াব রয়েছে। হযরত মুহাল্লাব থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা পড়বে,আগামী জুমআ পর্যন্ত তা কাফফারা সরুপ হবে। (ফাযায়েলে কুরআন লি ইবনে দারিস, হাদীস নং ২০৮ ) অর্থাৎ এক জুমআ থেকে আরেক জুমআ পর্যন্ত গুনাহ মর্জনা করবে।

অন্য হাদীসে এসেছে, হযরত আবু ইসহাক রা. বর্ণিত, তিনি বলেন আমি বারা রা. কে বলতে শুনেছি, এক সাহাবী নিয়মিত সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করতেন , আর বাড়িতে একটি পশু বা ঘোড়া ছিল, সেটা পালাতে চেষ্টা করল, লোকটি ব্যাপারটি লক্ষ্য করল,ইতিমধ্যে একটি মেঘ খন্ড বা কুয়াশা তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল তাই সে (ঘোড়াটি ) ভয় পেতে লাগল, তারপর সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সবকিছু উল্লেখ করল, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তা পড়তে থাক, নিশ্চয় প্রশান্তির ছায়া কুরআন তিলাওয়াতের কারণেই আসে। ( ফাযায়েলে কুরআন লি ইবনে দারিস, হাদীস নং ২০৪, মুসলিম ,হাদীস নং ৭৯৫ )

এ দিনে কিছু সুন্নত

জুমআর দিন সুন্নাত কাজসমূহের একটি হল গোসল করা। জুমআর দিন গোসল করা সুন্নত। গোসল করে আতর ব্যবহার করা , মাথায় তেল ব্যবহার করা  ইত্যাদি সুন্নত। সবকিছু শেষ করে তারপর দ্রুত মসজিদে চলে যাওয়া। জুমআর দিন মসজিদে আগে যাওয়ার বিশেষ ফযিলত আছে। আর আযান হওয়ার সাথে সাথে মসজিদে যেতেই হবে। আল্লাহ তা আলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! জুমআর দিনে যখন নামাযের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রæত ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করে দাও। এ তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝ। (সূরা জুমআ, আয়াত নংঃ ৯)

 

বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা

রাসূলের দুরুদ পাঠ অনেক সওয়াবের কাজ। রাসূলের উপর দুরুদ পাঠ করলে শান্তি বর্ষিত হয়। তাঁর উপর একবার দুরুদ পাঠ করলে আল্লাহ দুরুদ পাঠকারীর উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। আল্লাহর রাসূলের উপর দুরুদ পৌঁছানোর জন্য পৃথিবীতে ফেরেশতা ঘুরাঘুরি করতে থাকে। তারা পঠিত দুরুদ রাসূলের রওযা মোবারকে পৌঁছে দেয়। হযরত আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় পৃথিবীতে আল্লাহ তা কর্তৃক কিছু ফেরেশতা নির্ধারিত আছে , যারা আমার উম্মত থেকে সালাম পৌঁছে দেয়। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৪৩২০)

অন্য হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। (মুসলিম , হাদীস নং ৪০৮ )

কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে কার না জানা নেই! সেই ভয়বহ অবস্থায় রাসূলের সাথে থাকার অন্যতম মাধ্যম হল বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা।

হযরত আউস ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমআর দিন,সুতরাং তোমরা এই দিনে আমার উপর বেশি করে দুরুদ পাঠ করো। নিশ্চয় তোমাদের দুরুদ এই দিনে আমার কাছে পেশ করা হয়। ( আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৩১)

আমরা তো সবসময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দুরুদ পাঠ করবই। তবে জুমআর দিন আরোও বেশি করে পড়ার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ।

বেশি দোয়া করা

দোয় মুমিনের এক বিশেষ হাতিায়ার। দোয়া করাও একটা ইবাদত । আল্লাহ তা আলা ঐ বান্দার প্রতি বেশি খুশি হন যে আল্লাহর কাছে বেশি প্রার্থনা করে,দোয়া করে। আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য কোনো নির্ধারিত সময় নেই। যেকোনো সময় চাওয়া যায়। তবে বিশেষ কিছু মূহর্ত আছে যাতে দোয়ার করার ব্যাপারে হাদীসে নির্দেশ এসেছে। এমনই একটি দিন হল জুমআর দিন। হযরত জাবের রা.থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমআর দিন বারটি সময় আছে। তার মধ্যে একটি সময় এমন যাতে মুসলান যা চাবে আল্লাহ তা দান করবেনই। সুতরাং সে সময়কে আসরের পর, সর্বশেষ সময়ে  (অর্থাৎ মাগরিবের পূর্বে ) তা তালাশ কর। ( আবু দাউদ, হাদীস নংঃ  ১০৪৮)

আল্লাহ তা আলা আমাদেরকে জুমআর দিনে বেশি আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

১৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

  নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের আকাশে আজ ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রবিউল আউয়াল ...