ডা. আজাদ খান, জামালপুর জেলা প্রতিনিধি,
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), জামালপুর জেলা শাখার আয়োজনে সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪) সকালে শহরের ফৌজদারী মোড় ব্রম্মপুত্র নদের পারে ব্রহ্মপুত্র নদসহ সকল নদ-নদী ভরাট, দখল ও দূষণরোধ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, অবৈধভাবে জলাভূমী ও পুকুর ভরাট রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রসঙ্গে মানব বন্ধনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা জামালপুর জেলা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সিনিয়র সাংবাদিক এমএইচ মজনু মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এসপিকে) র নির্বাহী পরিচালক ও বাপা জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এনামুল হক।
জামালপুর জেলার পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন নাগরিকবৃন্দদের নিয়ে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাপা জামালপুর জেলা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সহিদ উল্লাহ।
উন্নয়ন সংঘ- এর নির্বাহী পরিচালক, উপদেষ্টা বাপা জামালপুর জেলা শাখা ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তার মূল্যবান বক্তব্যে বলেন- পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসমুখের সংযোগ পুনঃস্থাপন, অপরিকল্পিত ড্রেজিং বন্ধ করে যথাযথ পরিকল্পনা অনুযাযী ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা এবং অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে নদের তীর নির্ধারণ ও সিমানা পিলার স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরো বলেন, বেপারীপাড়ায় নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ রোধ করা এবং ঝিনাই নদীর প্রবাহ এবং উৎসমুখ সংযোগ পুনঃস্থাপন, পাশাপাশি নদীর তীরে বৃক্ষরোপণ, মনোরম পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে নদী তীর গড়ে তোলা, পর্যটনের জন্য পর্যটন মোটেল স্থাপন সহ অন্যান্য স্থাপনাগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, এছাড়া জেলা স্কুলের পশ্চিমপার্শের ঐতিহাসিক মাঠের বৃক্ষ যা আমাদের জামালপুর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য, তা নিধন এবং জাহেদা শফির মহিলা কলেজের পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান।
বিশেষ অতিথি শিক্ষাবিদ মোঃ আমির উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন-
ব্রহ্মপুত্র নদসহ দেশের সকল নদ-নদী ভরাট, দখল এবং দূষণের শিকার। এভাবে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন এবং অবৈধভাবে জলাভূমী ও পুকুর ভরাটের মত পরিবেশবিরোধী কর্মকান্ড শুধু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টই করছে না, বরং প্রাণিকুল এবং মানুষের জীবনে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় দ্রুত এর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
মানব বন্ধন কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট কলামিস্ট ও বাপা জামালপুর জেলা শাখার সহ সভাপতি মসিউল আলম, সহ সভাপতি অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক বাপা জামালপুর জেলা শাখা, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন ই-প্রেস ক্লাব এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রধান এবং মানবাধিকার ও গণমাধ্যম কর্মী ডা. মো. শফিকুল ইসলাম আজাদ খান,
সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপা জামালপুর জেলা শাখা ও গণমাধ্যম কর্মী মোঃ এমদাদুল হক সহ ভূমি দাস্যুদের দ্বারা নীজ ভূমি হতে বঞ্চিত বিতাড়িত ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসক, জামালপুর জেলা মহোদয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বরাবর বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা জামালপুর জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও জেলার পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সচেতন নাগরিকবৃন্দদের নিয়ে নিম্নে উল্লেখিত কিছু দাবী সম্বলিত এক স্মারক লিপি হস্তান্তর করা হয়।
দাবীগুলো-
১. পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসমুখের সংযোগ পুনঃস্থাপন। ২. ঝিনাইয়ের উৎসমুখ সংযোগ পুনঃস্থাপন এবং ঝিনাই নদীর প্রবাহ পুনঃস্থাপন। ৩. অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে নদের তীর নির্ধারণ এবং সিমানা পিলার স্থাপন। ৪. বেপারীপাড়ায় নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ রোধ করা। ৫. অপরিকল্পিত ড্রেজিং বন্ধ করে যথাযথ পরিকল্পনা অনুযাযী ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা। ৬. জেলা স্কুলের পশ্চিমপাশের ঐতিহাসিক মাঠের বৃক্ষ নিধন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। ৭. জাহেদা শফির মহিলা কলেজের পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মান রোধে পদক্ষেপ। ৮. নদীর তীরে বৃক্ষরোপণ এবং মনোরম পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা। ৯. পর্যটন মোটেল স্থাপন এবং পর্যটন স্থাপনাগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ।
১০. নদী ভরাট ও দখল রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ।
১১. নির্বিচারে বৃক্ষনিধন বন্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
১২. পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম জোরদারকরণ। ১৩. জলাভুমী ও পুকুর ভরাট রোধে নির্দিষ্ট নিয়ম ও আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন।