শনিবার ভোর রাতে উৎক্ষেপণ হওয়া বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সিগন্যাল পাওয়া গেছে। স্যাটেলাইটির সিগন্যাল এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশের গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশনে। এটি থেকে ‘টেলিমেট্রি’ সিগন্যাল পাওয়া গেছে। ‘টেলিমেট্রি’ হলো স্যাটেলাইটের প্রাথমিক সিগন্যাল। এরপর টেলিকমান্ডের মাধ্যমে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
গতকাল শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বঙ্গবন্ধু-১ এর টেলিমেট্রি সিগন্যাল প্রাপ্তির বিষয়ের নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশনের ব্যবস্থাপক (স্যাটেলাইট প্রকৌশলী) মো. নাসিরুজ্জামানও।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে টেলিমেট্রি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। টেলিকমান্ড পাঠাতে সময় লাগবে আগামী ৮ থেকে ১২ দিন।
মো. নাসিরুজ্জামান আরো জানান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টা পর এটি টেলিমেট্রি সিগন্যাল পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু গাজীপুরেরর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। ফ্রান্সের কান থেকে বিপিএনার মাধ্যমে গাজীপুরের গ্রাউন্ট স্টেশনে সিগন্যাল এসেছে। স্যাটেলাইটটি আগামী ১২ দিন ফ্রান্সের কান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ১২ দিন পর গাজীপুর ও বেতবুনিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
আগামী ১০ দিনে স্যাটেলাইটটি তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছাবে। আরও ২০ দিন পর স্যাটেলাইটটি পূর্ণাঙ্গ সিগন্যাল প্রেরণ করতে শুরু করবে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশের গাজীপুর ও বেতবুনিয়া থেকে। সেখানে রয়েছে এর কন্ট্রোল স্টেশন।
ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস নির্মিত ৩ দশমিক ৭০ টন ওজনের বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি সফলভাবে উৎক্ষিপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে মহাকাশ রাজত্বে অংশীদার হলো বাংলাদেশ। নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিজ কক্ষপথে পরিচালিত হওয়ার পর বাংলাদেশে সম্প্রচার যোগাযোগে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বিস্তৃত করতে ভূমিকা রাখবে এটি।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। বাংলাদেশের নিজস্ব কক্ষপথ নেই বলে রাশিয়া থেকে ১৫ বছরের জন্য কক্ষপথটি ভাড়া নেয়া হয়েছে। এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ এবং ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ এই স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে আজ স্যাটেলাইটটি যাত্রা করে মহাকাশে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি বিভিন্ন ধরনের মহাকাশ যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করা হবে। এ ধরনের স্যাটেলাইটকে বলা হয় ‘জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট’। পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে এ স্যাটেলাইট মহাকাশে ঘুরতে থাকে।