সর্বশেষ সংবাদ
Home / ধর্ম / গোনাহ ও পাপাচারিতা দেশ ও জাতির ওপর আজাব ডেকে আনে

গোনাহ ও পাপাচারিতা দেশ ও জাতির ওপর আজাব ডেকে আনে

ভূমিকম্প, ঝড়-তুফান, বন্যা, সুনামি ইত্যাদি মহাদুর্যোগ মানব জাতির ওপর নেমে আসে কেন? কোরআন পাকই এর উত্তর দিচ্ছে ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে।’ অর্থাৎ গোনাহ ও পাপাচারিতাই দেশ ও জাতির ওপর আজাব ডেকে আনে। নেক আমল হলো আলোর মতো। আলো চলে গেলে অন্ধকার আসবেই। হাদিস থেকে বোঝা যায়, যিনা-ব্যভিচার, মদ্যপান, তরকে সালাত, তরকে জাকাত ইত্যাদি মারাত্মক গোনাহের কারণে সমাজ ও দেশে কোনো কোনো সময় খরা, অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি গজব নাজিল হয়।

এক আজাব অন্য আজাবকে টেনে আনে। যেমন, অনাবৃষ্টি হলে উৎপাদন থাকবে না। কৃষি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর কৃষি ধ্বংস হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এলোমেলো হয়ে যাবে। যার ফলে দেশে চোর, লুটেরা, ছিনতাইকারীদের সংখ্যা অধিকহারে বেড়ে যাবে। সামাজিক শান্তি বলতে কিছুই থাকবে না। পারস্পরিক মায়া-মহব্বত, সাহায্য-সহযোগিতা থাকবে না। থাকবে শুধু হানাহানি, মারামারি। এসব অপরাধের গজব ও শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার দুটি দিক আছে। এক বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া। অর্থাৎ অতীতের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে নিজেকে নতশীর করে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

কেননা তিনি তো অতি দয়ালু ও ক্ষমাশীল। যখন আল্লাহর দরবারে কারও অপরাধের ফাইল পেশ করা হয়, তখন বলেন এটা রাখ, পরে দেখব। যেমন, দুনিয়াতে কোনো আসামির অপরাধের ফাইল যখন আদালতে হাকিমের দরবারে পেশ করা হয়, তখন আদর্শবান হাকিম চিন্তা করেন যে, কীভাবে বাদী ও বিবাদী উভয়ের মঙ্গল হয় এমন ফয়সালা দেওয়া যায়। যেন বাদী ইনসাফপূর্ণ ও সন্তোষজনক বিচার পায়, সঙ্গে সঙ্গে বিবাদীও যেন স্বীয় জীবনকে সংশোধন করে নিতে পারে। ফাঁসি থেকে বাঁচানোর উদ্দেশে আন্তর্জাতিক আইন হয়েছে যাবজ্জীবন কারাবরণ। কিন্তু পনেরো বিশ বছর পর আসামি জেল থেকে মুক্ত হয়ে যায়।

কারণ বিভিন্ন ছুটির দিনগুলোকে যোগ করে মূল জীবন থেকে বাদ দেওয়া হয়। আদালতে যখন ফাইল পেশ করা হয়, তখন বাদী খুশি হতে থাকে, আর অপরাধী ভয়ে কাঁপতে থাকে, কী জানি কী হয়ে যায়। বিচক্ষণ জজ ঘোষণা দেন, এটার বিচার দুই মাস পরে হবে। এতে আসামিকে সময় দেওয়া হয় যেন বাদীর সঙ্গে মিলেমিশে মামলাটি তুলে আনতে পারে।

যদি উভয়ে মিলে গিয়ে বলে, স্যার! আমরা মিলে গেছি। তাহলে আর মামলা থাকে না। অনেক সময় তারিখ চলতেই থাকে। এতে দয়া প্রদর্শন করা হয়। আর আল্লাহতায়ালা তো সব বিচারকের সেরা বিচারক এবং সব দয়ালুর চেয়ে সেরা দয়ালু। ফেরেশতা যখন আল্লাহর দরবারে ফাইল পেশ করে যে, এই লোকটি নামাজ পড়েনি, জাকাত দেয়নি, তখন আল্লাহ বলেন, রাখ পরে দেখব। তখন গুনাহগাররা খুশি হয়ে যায়। গুনাহ দুই প্রকার।

১. আল্লাহর হক নষ্ট করা, ২. বান্দার হক নষ্ট করা। আল্লাহ বলেছেন, আমার হক মাফ করে দিব, যদি তোমরা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাও। কিন্তু বান্দার হক তো আমি মাফ করতে পারি না। কারণ তোমাকে ক্ষমা করলে আরেক বান্দার ক্ষতি হয়ে যায়। এটা তো ইনসাফ হবে না। অতএব কোনো বান্দার হক যদি নষ্ট করে থাক তাহলে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

শুধু বলে বান্দার হক মাফ পাওয়া যাবে না। বান্দার কাছ থেকে ক্ষমা নিতে হবে, হাতে ধরে হোক বা পায়ে ধরে হোক নিতেই হবে। জান্নাতে যাওয়ার সব তরিকা আল্লাহ পাক বান্দাকে এভাবে যতেœর সঙ্গে শিখিয়েছেন। কোনো বান্দাই তার দরবারে সামান্যতম বেইনসাফি প্রত্যক্ষ করবে না। বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহের শেষ নেই। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তার শরীরের যাবতীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কী সুন্দররূপে বানিয়ে যথাস্থানে স্থাপন করেছেন।

কিছু অঙ্গ আমরা দেখতে পাই আর কিছু অঙ্গ দেখতে পাই না। হাত, পা, নাক দাঁত ইত্যাদি অঙ্গগুলো দেখতে পাই। বাহ্যিক অঙ্গগুলোকে যেমন বিশ্বাস করি তেমনি অভ্যন্তরীণ না দেখা অঙ্গসমূহের অস্তিত্বকেও বিশ্বাস করি। রুহ বা আত্মা, দেমাগ ইত্যাদি অঙ্গ দেখতে পাই না, তবে আছে বলে বিশ্বাস করি। হাত পায়ের নড়াচড়া দ্বারা বুঝে নেই যে, আত্মা আছে। এখন আমি যদি উল্টাপাল্টা কথা বলি তাহলে আপনারা বলবেন যে, হুজুরের দেমাগ ঠিক নাই। ঠিকঠাক মতো কথা বলাই প্রমাণ করে, বক্তার দেমাগ-আকল ঠিক আছে। আপনারা কি কখনো দেমাগ দেখেছেন? কখনো আকল দেখেছেন? কেউ দেখেননি। কিন্তু সবাই বিশ্বাস করেন। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের প্রতিটি মানুষই বিশ্বাস করে। বোঝা গেল আলামত দেখে অদৃশ্য তথা গায়েব জিনিসের প্রতিও মানুষের বিশ্বাস জন্মে।

আমাদের স্থায়ী জিন্দেগির পুরোটাই গায়েব। এই গায়েবের বিশ্বাসটাই ইসলামের মূল বিষয়। বলছিলাম আল্লাহর সৃষ্টি কুশলতা প্রসঙ্গে। তিনি আমাদের অতি সুন্দরভাবে সৃষ্টি করার পর শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে উপকৃত হওয়ার পদ্ধতিও শিখিয়েছেন। অঙ্গগুলোর সহযোগিতা নিয়েই আমি পূর্ণাঙ্গ মানুষ। জীবনের হাজারো প্রয়োজন পূরণে, উদ্দেশ্য সাধনে আমি আল্লাহর দেওয়া অঙ্গের স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা পাই। শরীরের একটা অঙ্গ যদি আমাকে সহযোগিতা না করে তাহলেই আমি অস্থির হয়ে পড়ি। চিন্তা করুন তো, আপনার চোখ আপনাকে সহযোগিতা না করলে দুনিয়ার জীবনটা আপনার কেমন হতো? আমরা কি কখনো চিন্তা করি যে, আল্লাহতায়ালা এতগুলো অঙ্গ কেন বানালেন? এক অঙ্গকে অন্য অঙ্গের মুখাপেক্ষী বানিয়েছেন কেন? আল্লাহ নিজেই এ চিন্তার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যদি আমার ব্যাপারে তোমাদের কোনো প্রশ্ন জাগে তাহলে তোমাদের শরীরে তালাশ কর, উত্তর পেয়ে যাবে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জু’মআর নামাযঃ  ফযিলত ও গুরুত্ব

মাওলানা সাইফুল ইসলামশি,ক্ষক: মাদরাসাতুল হিকমাহ,ঢাকা: ২৪ ফিট, রসূলবাগ, কদমতলী, ঢাকা   একজন ব্যক্তি ঈমান আনার ...