সর্বশেষ সংবাদ
Home / রাজনীতি / গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর এখন কোথায়?
Oplus_0

গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর এখন কোথায়?

 

স্টাফ রিপোর্টার:

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টিকিটিও মিলছে না গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের।

তিনি আত্মগোপনে না সেনা হেফাজতে অথবা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তা নিয়ে এলাকায় ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের ছয়দানার তিনতলা বাড়িটি সব সময় থাকত নেতাকর্মীদের পদচারণায় সরগরম। সেখানে এখন সুনসান নীরবতা।

কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া কাউকে দেখা যায় না। সাবেক এ মেয়রের বাসভবনে সরেজমিন দেখা তিন থেকে চারজন নিরাপত্তাকর্মী বাড়ির নিচে প্রবেশপথে বসে আছেন। কয়েকজন উৎসুক মানুষ বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করছে। প্রবেশদ্বারে দড়ি টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো গাড়ি বা মানুষ ভেতরে ঢুকতে না পারে।

বাড়ির ভেতরের দিকে ঢুকতে চাইলে একজন নিরাপত্তাকর্মী এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবেন? মেয়র বাড়িতে আছে কিনা-জানতে চাইলে উত্তর আসে অনেক সকালে বের হয়ে গেছে ঢাকার দিকে। প্রবেশদ্বারে দড়ি টানানো কেন-এমন প্রশ্নে নিরাপত্তাকর্মী জানান, স্যার (মেয়র) বাড়ির ভেতরে কাউকে ঢুকতে নিষেধ করেছেন।

গত ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের সংবাদে মেয়রবিরোধী নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে।

অপরদিকে মেয়রভক্ত শত শত নেতাকর্মী রাতেই তার বাসায় ভিড় জমায়। শনিবার সকালে তিনি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে গণমাধ্যমের সঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও পার্টির নেতাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং রিভিউ আবেদন করবেন বলে জানান। বহিষ্কার ও ক্ষমার রেকর্ড সৃষ্টি করে মেয়র জাহাঙ্গীর সারাদেশে বিশেষ আলোচনায় আসেন।

ঢাকায় বিএনপি বিরোধী অবস্থানে তার সক্রিয় উপস্থিতি,তার দেহরক্ষীর মৃত্যুর ঘটনা তাকে তার দলের বিশেষ দৃষ্টিতে এলেও সরকার পতনের পর তার অন্তধ্যান এলাকায় রহস্যের সৃষ্টি করেছে।

স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, সাবেক এ মেয়রকে দল থেকে বহিষ্কারের পর মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তৈরি হয় নতুন মেরুকরণ। রাতারাতি বদলে যায় অনেকেই। যারা এক সময় মেয়রের গাড়িতে ওঠার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করত তারা সেসময় উল্লাস করে।

মেয়রপন্থি অনেক নেতাকর্মী তাদের বাড়ির সামনে খিচুড়ি পাকিয়ে রাতভর আনন্দ-উল্লাস করে। তবে মেয়র সমর্থক হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত নেতাকর্মীরা থাকেনদ কিছুটা বিপাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রাজনৈতিকভাবে অনেক ঘনিষ্ঠজনরাও দূরে সরে যান। অনেকে আবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে কোণঠাসা হয়ে রীতিমতো নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন এক সময়ের দাপুটে মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ২০১৬ সালে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৫-২০ জন ছিল মেয়রের আস্থাভাজন। পরবর্তীকালে ৫৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে জাহাঙ্গীর আলম তার অনুসারীদের প্রাধান্য দেন।

এছাড়া মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে বাহ্যিকভাবে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার চেষ্টা করতেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে দুজনের মধ্যে ভেতরে ভেতরে দূরত্ব ছিল অনেক। উন্নয়ন ও সাংগঠনিক বিষয়ে মহানগরের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ছিল তার দূরত্ব।

প্রসঙ্গত, এক-দেড় বছর আগে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি অডিও-ভিডিও গত সেপ্টেম্বর মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

এ ঘটনায় ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের এক চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। তিনি সময়ের মধ্যে জবাবও দেন। জবাবে ভিডিওটি ‘সুপার এডিট’ করা ছিল বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম।

পরে (১৯ নভেম্বর) গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের সিদ্ধান্তে গাজীপুর আওয়ামী লীগ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর জাহাঙ্গীর আলম ক্ষমা পেলেও মহানগর আওয়ামী লীগের সকল পদ থেকে তিনি বঞ্চিত হন।তখনই তিনি কেন্দ্রিয় শক্তির আস্থা কুড়াতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঢাকায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে শুরু করেন।

কিন্তু হঠাৎ সরকার পতনের পর মেয়র জাহাঙ্গীর লাপাত্তা হয়ে যান।মামলা, বাড়িতে হামলা,অগ্নিসংযোগসহ নানাবিধ ঘটনায় দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যান জাহাঙ্গীর।তিনি কোথায় সে প্রশ্নের জবাব এখন না মিললেও অদুর ভবিষ্যতে হয়ত জানা যাবে তিনি গুম হয়েছিলেন,না কি আটক ছিলেন অথবা গ্রেফতার এড়াতে স্বেচ্চা অন্তধ্যানে চলে গিয়েছিলেন।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস২০২৪ পালিত

সদর প্রতিনিধি জামালপুর: অদ্য ৫ অক্টোবর ২৪ জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস ২০২৪ ...