সর্বশেষ সংবাদ
Home / সারাদেশ / কুড়িগ্রামে বিনা খরচে ‘আইনী সেবা’ পাচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ

কুড়িগ্রামে বিনা খরচে ‘আইনী সেবা’ পাচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিনা খরচে আইনী সেবা ও পরামর্শ পেয়ে সচেতনতা বেড়েছে কয়েক গুণ। এমন সব সেবা পেয়ে চর এলাকাগুলোতে অনেকাংশে কমেছে পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব। দুর্গম সেই চর গুলোতে বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে আইনী সেবা কেন্দ্রগুলো। প্রতিনিয়তই সেবা নিতে ছুটে আসেন স্থানীয় নারী-পুরুষেরা।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত অষ্টমীরচর, নয়ারহাট ও চিলমারী ইউনিয়নে একযুগেরও বেশি সময় ধরে এসব আইনী সেবা পাচ্ছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। এতে ওই অঞ্চলে অনেকাংশে কমেছে অপরাধ। স্বাভাবিকভাবে আইনী সেবা বা পরামর্শ নিতে যেতে হতো থানায়। নদ পড়ি দিয়ে থানায় যেতে সময় লাগে কয়েকঘন্টা, ফলে দেখা যেতো অনেকেই এই সেবাগুলো থেকে বঞ্চিত ছিলেন। বর্তমানে সহজেই এসব সেবা পাচ্ছেন তিন চরের প্রায় ১৫হাজার মানুষ।
জানা গেছে, ২০১২ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের উদ্যোগে উপজেলার তিন ইউনিয়নে চালু করে ‘আইনী সেবা কেন্দ্র’। বর্তমানে ১৭টি কেন্দ্র রয়েছে। এতে প্রতিটি কেন্দ্রে দুইজন করে প্যারালিগ্যাল রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে আসছেন। সংস্থাটি গত একমাসে তিন ইউনিয়নে ২০০ জনকে আইনী সেবা দিয়েছেন।
নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ার চর গ্রাম ঘুরে জানা যায়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি প্যারালিগ্যাল রেহেনা আক্তার ও ইরিনা খাতুন চরের মানুষদের আইনী পরামর্শ ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলেন, ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি গুড গভর্ননেন্স এইড গত আগষ্ট মাসে ১৭জনকে এবং চলতি মাসে প্রায় ১৫জনকে আইনী পরামর্শ ও সেবা প্রদান করেছেন।
সহ্য়াতা নিতে আসা মেহেরা বেগম বলেন, আমার বয়স হয়েছে। ছেলে-মেয়েরা ভরণপোষণ দিচ্ছে না। পরে আমি আইনী সহায়তা কেন্দ্রে এসে সহায়তা চাইলে তারা আমাকে সহযোগিতা করে। আমার সন্তানদের কাছে গিয়ে কথা বলে। এখন তারা আমার ভরণপোষণ দেয়।
অপর এক নারী সুফিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রায় আমাকে নির্যাতন করতেন। পরে কোনো উপায় না পেয়ে এখানে এসে কথা বললে, এখানকার আপারা গিয়ে আমার স্বামীকে বূঝিয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া কি কি হতে পারে। আমার স্বামী বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। এখন পারিবারিক এই সমস্যাটা আর নেই। আমি এখন ভালো আছি।
ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি প্যারালিগ্যাল (এফসিপি) রেহানা আক্তার জানান, সপ্তাহের তিন-চারদিন করে লোকজন আসেন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। তাদের সমস্যাগুলো শুনে এর আইনী কি কি পদক্ষেপ রয়েছে, সেগুলো তাদের জানিয়ে দেই। এছাড়াও আমরা অভিযোগগুলো নিয়ে বা সহায়তা দেয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে যে ঝামেলাগুলো থাকে, সেসব সমাধানের চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেন, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত আইনী সেবাসহ সবধরণের সেবা পেয়েছেন ১৫জন।
ফ্রেন্ডশিপের সুশাসন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আব্দুল মান্নান জানান, সংস্থার কমিউনিটি প্যারালিগ্যালের কর্মীগণ ইউনিয়নের পরিষদের বিভিন্ন সভায় যোগদান করে থাকেন। চরাঞ্চলের ১৭টি আইনী সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধ নিস্পত্তি করা হয়ে থাকে। ফলে দিন দিন চরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় ওঠছে এই আইনী সেবা কেন্দ্রগুলো। যে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব হয়না সেগুলো জেলা লিগ্যাল এইডে পাঠানো হয়।

About shakhawat khan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস২০২৪ পালিত

সদর প্রতিনিধি জামালপুর: অদ্য ৫ অক্টোবর ২৪ জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস ২০২৪ ...