সর্বশেষ সংবাদ
Home / ধর্ম / ইসলামে মানবসেবার গুরুত্ব

ইসলামে মানবসেবার গুরুত্ব

মাওলা: সাইফুল ইসলাম:

মানুষ পৃথিবীতে একাকি বসবাস করতে পারে না , একা একা বাস করা সম্ভব নয় । বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না । নানা বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে অন্যের সাহায্য গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে । কেননা মানুষ যখন বিপদের সক্সমুখীন হয় , সে তখন সবচেয়ে বেশি একাকিত্ব অনুভব করে । ঐসময় সে আন্তরিকভাবে অন্যের সাহায্য কামনা করে ।

 ইসলাম শান্তির ধর্ম , মানবতার ধর্ম । একে অপরকে সাহায্য করার ধর্ম । ইসলাম এমন এক ধর্ম যেখানে মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান আছে । ইসলাম এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা । ইসলাম বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে শিখায় । অন্যের বিপদে সাহায্য করতে শিখায় । ইসলামে নামায,রোযা , হজ¦, যাকাত এর মত  অন্যকে সাহায্য করাও  ইবাদত ।

বন্যা,ঘূর্ণিঝড়,অতিবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষকে প্রায় পড়তে হয় । এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকৃতির নিজস্ব কোনো সৃষ্টি নয় । বরং জল -স্থল ,চন্দ্র-সূর্য , আলো -বাতাস ,তথা প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানে যা কিছু ঘটে , সেগুলো মহান আল্লাহর সূ² পরিকল্পনারই অংশ। একটি গাছের পাতাও আল্লাহর হুকুম ছাড়া নড়তে পারে ন।  দুর্যোগ – দুর্ঘটনাও তার ই”ছারই বহিঃপ্রকাশ। বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মানুষের কৃতকর্ম । সমাজে অন্যায় -অনাচার দেখা দিলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা । তবে দুর্যোগ শুধু পাপের কারণেই হয়Ñ তা নয় , কখনো আল্লাহ তা আলা এর মাধ্যমে বান্দাদেরকে পরিক্ষা করেন । এ জন্য যেকোনো দুর্যোগে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কুরআন সে নির্দেশই দেয় , আল্লাহ তা আলা বলেন , আমি অবশ্য তোমাদের পরিক্ষা করব কিছুটা ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং ধন-সম্পদ দ্বারা ,জান-প্রাণ ও ফল- ফসলের ক্ষয় -ক্ষতি দ্বারা আর আপনি সুসংবাদ দিন সেই ধৈর্যশীলদের ,যারা তাদের উপর কোন বিপদ আসলে বলে, আমরা তো আল্লাহর এবং আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাব। ( সূরা বাকারা , আয়াতt ১৫৫-১৫৬)

অসুস্থ-দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে দেখতে যাওয়া , তাদেরকে সাধ্যমত সাহায্য করা , তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা এক মহান কাজ । তাদের কে সাহায্য করা আল্লাহ কে সাহায্য করার নামান্তর। যেমন  বর্ণিত হয়েছে ,  আবু হুরায়রা রা.  থেকে বর্ণিত ,  নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন,”  হে আদম সন্তান!  আমি অসুস্থ হয়েছিলাম তুমি আমাকে দেখতে আসোনি। আমার সেবা করনি।  বান্দা বলবে, হে  আমার পালনকর্তা!  আমি কিভাবে আপনার সেবা করব?  আপনি তো জগত সমূহের পালনকর্তা ।  আল্লাহ বলবেন,  তুমি কি জানো না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছে অথচ তাকে দেখতে যাওনি। তুমি  যদি তাকে দেখতে যেতে তাহলে সেখানে আমাকে ও  পেতে। “

হে আদম সন্তান ! তোমার কাছে আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম , কিš‘ তুমি আমাকে পানি পান করাওনি । বান্দা বলবে , হে আমার রব, আমি আপনাকে কিভাবে পান করাব , আপনি তো সকল সৃষ্টির রব ? তিনি বলবেন , আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল , তুমি তাকে পানি পান করাওনি । তুমি যদি তাকে পানি পান কারাতে তাহলে তার কাছে আমাকে পেতে । ( মুসলিম শরীফ, ২৫৬৮)

আমরা আল্লাহ তা আলা ইবাদত করি তাঁকে সš‘ষ্ট করার জন্য । আল্লাহ তা আলার ইবাদতের জন্যই আমাদের সৃষ্টি । আল্লাহ  জীন ও মানব জাতিকে তার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আমরা তার দাসত্ব স্বীকার করে তার প্রতি নতশির হই । তার দরবারে দরনা দেই প্রতিদিন পাঁচবার । আমাদের প্রত্যশা কেবলই আল্লাহর সন্তষ্টি । আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনই আমাদের জীবনের মাকসাদ । আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে গেলে দুনিয়াতে আর কি দরকার ! কি অর্জনই বা বাকি থাকে !

আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন করার অনেক মাধ্যম রেয়েছে , তন্মধ্যে একটি হল তাঁর  সৃষ্টির প্রতি দয়া করা , অনুগ্রহ করা । যে ব্যক্তি আল্লাহ তা আলর সৃষ্টির প্রতি দয়া করবে আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন ।  আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা . থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনে, দয়াদ্র ব্যক্তিদের প্রতি রহমান ( আল্লাহ ) দয়া করবেন ।  তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি দয়া কর , তাহলে আসমানওয়ালা ( আল্লাহ তা আলা ) তোমাদের প্রতি দয়া করবেন । ( আবু দাউদ , হাদীস নংt ৪৯৪১  , তিরমিযী , হাদীস নংt ১৯২৪  )

মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই । এক ভাইয়ের বিপদে, দুর্দশায় , সর্বক্ষেত্রে আরেক ভাই এগিয়ে আসবে এটাই ভ্রাতৃত্বের দাবী । এ দাবী যে পূরণ করবে হাদীসে তার জন্য অনেক বড় প্রতিদান এর কথা এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , আল্লাহ ঐ বান্দার  সাহায্যে ব্যস্ত থাকেন , যে তার ভাইয়ের সাহায্যে ব্যস্ত থাকে । ( মুসলিম , হাদীস নং ২৫৯৯ )

প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোনো বিপদে মানুষকে সাহায্য করা। তাদের আর্থিক সহায়তা , ত্রাণ ও পৃনর্বাসন ও চিকিৎসা সেবা দান সহ যেকোনো সাহায্য – সহযোগিতা করাও  অনেক বড় ইবাদত । সামর্থ্য অনুযায়ী ইখলাসের সাথে সাহায্য করা , যদি তা অল্প পরিমান হয় সেটা খাটো করে দেখা যাবে না । আল্লাহ তা আলা মানুষের আ্কৃতি বা তার সম্পদ দেখেন না , বরং তার অন্তর ও আমল দেখেন । এজন্য সবর্দা ইখলাসের সাথে আমল করার চেষ্টা কর। আল্লাহ তা আলা আমাদের সবাইকে বিপদগ্রস্ত ও অভাবী মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার এবং তাদের অভাবের দিনে হাত বাড়ানোর তাওফিক দান করুন । আমীন ।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জু’মআর নামাযঃ  ফযিলত ও গুরুত্ব

মাওলানা সাইফুল ইসলামশি,ক্ষক: মাদরাসাতুল হিকমাহ,ঢাকা: ২৪ ফিট, রসূলবাগ, কদমতলী, ঢাকা   একজন ব্যক্তি ঈমান আনার ...