সর্বশেষ সংবাদ
Home / সারাদেশ / ইউপি চেয়ারম্যানের নাতির নামে কার্ড, মৃত ব্যক্তিও তুলছেন চাল

ইউপি চেয়ারম্যানের নাতির নামে কার্ড, মৃত ব্যক্তিও তুলছেন চাল

 

আদমদীঘি (বগুড়া) সংবাদদাতা:

বগুড়ার আদমদীঘিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ও চাল বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের তীর চাঁপাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ডিলাদের দিকে।

প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করে ইউপি চেয়ারম্যানের নাতির নামে দেওয়া হয়েছে কার্ড। বছরজুড়ে মৃত ব্যক্তির নামে তোলা হচ্ছে চাল। জীবিত ব্যক্তিদের কার্ডের চাল আত্মসাৎ, অনেকের নামে কার্ড থাকলেও তারা সেটি জানেই না।

আবার পুরুষের নামের পাশে নারীর ছবি লাগিয়ে এবং প্রবাসীর নামে কার্ড বানিয়ে করা হচ্ছে চাল আত্মসাৎ।

জানা গেছে, উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নের বিহিগ্রাম সাহানাপাড়ার বাসিন্দা মোয়াজ্জিম হোসেন প্রায় এক বছর আগে মারা গেছেন। মৃত্যুর পরও একাধিকবার তার কার্ড দিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০ কেজি করে চাল ওঠানো হয়েছে।

মোয়াজ্জিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, তিনি (মোয়াজ্জিম) গত এক বছর আগে মারা গেছেন।

এই কর্মসূচির ডিলার মাজেদুর রহমান মাজেদের দাবি, নাম বাদ না যাওয়ায় তার (মোয়াজ্জিম) নামে তার কোনো এক আত্মীয় চাল উঠিয়ে নেন।

তবে সরেজমিনে গিয়ে ডিলারের কথার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় না। চাল বিতরণের সময় দেখা যায়, মোয়াজ্জিমের চাল তুলছেন ডিলারের লোকজন। এমনকি আঙুলের ছাপও দিচ্ছেন তারাই।

ওই ইউনিয়নের বেজার গ্রামের গৃহবধূ লাভলী আক্তারের নামেও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড রয়েছে। তবে তিনি জানেনই না তার নামে কার্ড রয়েছে। গৃহিণী হলেও তার পেশা দেওয়া আছে দিনমজুর।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, লাভলীর কার্ড দিয়ে একাধিকবার চাল ওঠানো হয়েছে। আর তা উঠিয়েছেন ডিলার নিজেই।

ভেনল্যা গ্রামের বাসিন্দা শাহিদুল ইসলামের নামেও রয়েছে একটি কার্ড। তবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডে শাহিদুল ইসলামের ছবির পরিবর্তে রয়েছে এক নারীর ছবি। স্থানীয়রা বলছেন, শাহিদুল ইসলাম প্রবাসে থাকেন এবং ছবিটি তার স্ত্রীর।

নামের সঙ্গে ছবির অমিল থাকলেও শাহিদুলের স্ত্রী চাল পাওয়ায় এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

চাঁপাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের নাতি সোহাগ পারভেজ। চাল বিতরণের দায়িত্বে দেখা যায় তাকে। তবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় রয়েছে সোহাগ পারভেজের নামও।

নাতির নামে কার্ড রয়েছে, তা জানেন না ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, কারা কারা কার্ড পাওয়ার যোগ্য তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের দায়িত্ব থাকে ইউপি সদস্যদের। তারা আমার নাতিকে কার্ড দেওয়ার যোগ্য মনে করেছে, তাই হয়তো কার্ড দিয়েছে। এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।

সম্প্রতি ইউনিয়নের বিহিগ্রাম এলাকায় অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, ডিলারের নিয়োগ করা লোকেরা চালের পরিবর্তে টাকা বিতরণ করছেন। আবার কয়েকজন চাল নিলেও সেই চাল ডিলারের লোকদের কাছেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার থাকার কথা থাকলেও সেখানে দেখা যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে ডিলার মাজেদ বলেন, যাদের কার্ড আছে, আমি তাদের বা তাদের কার্ড কেউ নিয়ে এলে চাল দিই। চালের বদলে টাকা দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।

চাঁপাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ইউপি সদস্যরা যাদের নাম দিয়েছেন, তাদের নামেই কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। ডিলার চাল দিচ্ছেন নাকি টাকা দিচ্ছেন এসব খতিয়ে দেখব। আর নাম একজনের, ছবি অন্যজনের এটা হতে পারে না। কার্ড করার সময় সবাইকে পরিষদে আসতে হয়েছিল। এমন কিছু হওয়ার কথা না।

আদমদিঘী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, বিষয়গুলো জানা ছিল না। তবে চাল বিতরণের সময় ওই এলাকায় একজন ট্যাগ অফিসার দেওয়া হয়। অনিয়মের অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস২০২৪ পালিত

সদর প্রতিনিধি জামালপুর: অদ্য ৫ অক্টোবর ২৪ জামালপুরে আন্তর্জাতিক নদী দিবস ২০২৪ ...