সর্বশেষ সংবাদ
Home / জাতীয় / আশুলিয়ায় ৪৫ পোশাক কারখানা বন্ধ, ২৫টিতে ছুটি ঘোষণা
Oplus_0

আশুলিয়ায় ৪৫ পোশাক কারখানা বন্ধ, ২৫টিতে ছুটি ঘোষণা

 

জাহিদুর রহমান:

ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া। বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল।

এ ছাড়া টানা কয়েকদিনের অসন্তোষের মুখে অনির্দিষ্টিকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ৪৫টি পোশাক কারখানা। একইসঙ্গে আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে আরও ২৫টি কারখানা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশের আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেতনের দাবিতে আজ বুধবার সকাল থেকেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা অবস্থান নেন নবীনগর কালিয়াকৈর মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায়। মঙ্গলবার প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে বেতন দিতে না পারায় পূর্ব ঘোষণা দিয়েই বুধবার বন্ধ রাখা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৩৩টি কারখানা।

এসব কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৪৮ হাজার শ্রমিক। তাদের মাসিক বেতন হিসেবে গুনতে হয় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মাসের প্রথম সপ্তাহে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)‌ বেক্সিমকোর প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট জব্দ করায় বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি।

মঙ্গলবার ভিন্ন একটি উৎস থেকে মাত্র ৪০০ জনের বেতন দেওয়া হলেও অবশিষ্টদের বেতন পরিশোধ করা যায়নি। যে কারণে এদিনও কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন তারা।

গত ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে। গত ২৯ আগস্ট তার ব্যক্তিগত ও মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)‌।

তবে গত ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়নি। সেটা যারই মালিকানা হোক না কেন, প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠান চলবে। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করবে।

বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এই বক্তব্যের পরিপত্র না পাওয়ায় জনতা ব্যাংক থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের অর্থ ছাড় করা হয়নি। যে কারণে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে পথে নেমেছেন।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আরও জানান, শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয় বিকাশের মাধ্যমে। মঙ্গলবার মাত্র ৪০০ জনকে ভিন্ন একটি উৎস থেকে তারা বেতন পরিশোধ করতে পেরেছেন। তবে আজ বুধবার বেক্সিমকোর কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন অবরুদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টগুলো অবমুক্ত করা হয়েছে। বিকেলের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছেন তারা।

এদিকে, শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার পরে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে রয়েছেন পুলিশ, শিল্প পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা। মহাসড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। ভোগান্তির মুখে পড়েছেন বহু মানুষ। আজ বুধবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে বিভিন্ন কারখানা গেটে বন্ধের নোটিশ দেখতে পান শ্রমিকরা। এ সময় বেশ কিছু কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।

শিল্প পুলিশ বলছে, প্রতিদিন একই অজুহাতে হাজিরা দিয়েই কাজ না করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। কাজ না করলেও ঠিকই বেতন দিতে হবে। আবার কাজ বন্ধ থাকায় বিদেশি ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন। অনেক রপ্তানি পণ্য আকাশপথে পাঠাতে হবে বলেও মালিককে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। সব মিলিয়ে সার্বিকভাবে নেতিবাচক পরিস্থিতিতে কোনো বিকল্প না পেয়ে কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা।

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কারখানা মধ্যে রয়েছে—ভার্চুয়াল বটয়ম, মন্ডল নিটওয়্যারস লিমিটেড, সিগমা ফ্যাশনস লিমিটেড, হা-মীম গ্রুপ, ক্রশওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিডেট, জিন্স প্রোডিউসার লিমিটেড, অরুণিমা গ্রুপের অরুনিমা স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড, ডিএমসি অ্যাপারেলস লিমিটেড, এস এম নিটওয়্যারস লিমিটেড, আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, মানতা অ্যাপারেলস লিমিটেডের মতো বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানা।

শ্রমিকরা বলছেন, কারখানা এভাবে বন্ধ রেখে কোনো সমাধান হবে না, বরং সমস্যাকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।

বিভিন্ন দাবিতে টানা কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করলেও অনেক কারখানার মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবিগুলোকে আমলে নিচ্ছেন না। দফায় দফায় বৈঠক হলেও কোনো ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে শ্রমিকদের পূঞ্জীভূত ক্ষোভ বাড়ছেই।

আশুলিয়ার ক্রশওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিডেট নামে একটি পোশাক কারখানায় গেটে ঝুলতে দেখা গেছে কারখানা বন্ধের নোটিশ। ওই নোটিশে বলা হয়, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্পে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও ভাঙচুর এবং বেআইনিভাবে ধর্মঘটের কারণে কারখানা পরিচালনার অনুকূল পরিবেশ না থাকায় এবং সার্বিক নিরাপত্তার বাংলাদেশ শ্রম আইনে ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কারখানা অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক টেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু জানান, সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসেছিল। কিন্তু কারখানার গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৩ (১) ধারায় বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়েছে। পরে অনেকগুলো কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে বলেও জানান তিনি।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ৪৫টি পোশাক কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়েছে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরও ২৫টি পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার পরে কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও বিশৃঙ্খলার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, অদৃশ্য শক্তি গোটা শিল্পাঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। তৈরি পোশাকশিল্প দেশের লাইফ লাইন। এই শিল্পের ক্ষতি হলে সেটা দেশের অর্থনীতিকেই মোটা দাগে ক্ষতি করবে। উৎপাদনের পরিবেশ বজায় আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

 

About shakhawat khan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ আজ : আলোচনায় সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ

  সদরুল আইন: অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ...