সর্বশেষ সংবাদ
Home / ধর্ম / আদর্শ পিতা-মাতা  ও কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য

আদর্শ পিতা-মাতা  ও কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য

মাওলানা সাইফুল ইসলাম শিক্ষক মাদরাসাতুল হিকমাহ রসূলবাগ চৌরাস্তা ( ২৪ ফিট ) মেরাজনগর , কদমতলী , ঢাকা:

পৃথিবীতে আসার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা হল পিতা-মাতার। যাদের অজস্র কাকুতি মিনুতির পর একটি সন্তান দুনিয়াতে আসে। বহু রজনীভর বিনিদ্র কাটাতে হয় একটি সন্তানের জন্য। কত অপেক্ষ!  কত আশা- ভরসার স্থল থাকে সন্তানের আগমন  নিয়ে। সন্তান হলো আল্লাহর রহমত, অনুগ্রহ,দান। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে ছেলে সন্তান দেন আর যাকে ইচ্ছা তাকে কণ্যা সন্তান দেন। আল্লাহ তা আলা বলেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদেরই থেকে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের স্ত্রীদের থেকে তোমাদের দিয়েছেন পুত্র ও পৌত্র। এবং তোমাদের রিযিকস্বরুপ দিয়েছেন পরিচ্ছন্ন বস্তুরাজি। তবুও কি ওরা মিথ্যাতে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে? (সুরা নাহলঃ আয়াতঃ ৭২) , অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ( সূরা শূরাঃ আয়াতঃ ৪৯)

সন্তান দুনিয়ায় আসার আগেই শুর হয় পিতা-মাতার দায়-দাযয়িত্ব। যেগুলো আঞ্জাম দিতে হয় খুব যত্ন সহকারে। তাদের দায়িত্ব পালনের কারণে যে ঋণ আমাদের উপর বর্তায়, সে ঋণ দুনিয়াতে পরিশোধ করা সম্ভব না। শুধু রাব্বে কারিমের কাছে দোয়া করি,” (হে আমাদের) পালনকর্তা! তাদের উভযয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪) একজন পিতা-মাতা  ‘ বাবা- মা ‘ ডাক শোনার জন্য যেদিন ইচ্ছে করেন, সেদিন থেকেই শুরু হয় দায়-দায়িত্ব। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- তাদেরকে আর্দশ সন্তান হিসাবে গড়ে তোলা। আল্লাহ তা আলা  ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও স্বীয় পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) হ’তে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে অত্যন্ত কর্কশ, রূঢ় ও নির্মম স্বভাবের ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে, যারা কখনই আল্লাহর কথা অমান্য করে না এবং নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে’  ( সূরা তাহরিমঃ আয়াতঃ ৬) এ আয়াতের ব্যখ্যায় হযরত  আলী রা. বলেন, সন্তানদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দাও, এবং ভদ্রতা- শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।  সে সুবাধে পিতা-মাতা উভযয়ের উপর অনেক  দাযয়িত্ব আসে। আমরা তাদের কিছু দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ।

পিতা মাতার উপর যে দায়িত্ব আসে, তার কিছু দায়িত্ব তো  সন্তান দুনিয়াতে আসার আগেই পালন করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলোঃ

উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী নির্বাচন

স্বামী স্ত্রীকে নির্বাচন করবে আর স্ত্রী নির্বাচন করবে স্বামী। যেসমস্ত গুণ দিয়ে একজন আরেজনকে বিচার করবে। এসম্পর্কে চমৎকার একটি হাদিস রয়েছে ,  হযরত আবু হুরাইরাহ রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটি গুণ দেখে নারীকে বিবাহ করা হয়; তার ধন-সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য এবং তার দ্বীন-ধর্ম দেখে। তুমি দ্বীনদার পাত্রী লাভ করে সফলকাম হও। (অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।) ( বুখারী শরীফঃ হাদিস নংঃ ৫০৯০)

বাঁচার অধিকার দেওয়া

ইসলাম আগমনের পূর্বে মানুষ কণ্যা সন্তান হলে হত্যা করে ফেলত। এটা নিজের অধিকার বলে সাব্যস্ত করতো। ইসলাম তাদের সেই  মন্দ স্বভাবকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। আল্লাহ তা আলা ইরশাদ করেন, ” দারিদ্র্যের ভয়ে নিজেদের সন্তান হত্যা কর না। আমি তাদেরও রিজিক দেব এবং তোমাদেরও। অবশ্যই তাদের হত্যা করা মহাপাপ। (সুরাঃ বনি ইসরাঈল, আয়াতঃ৩১)

পিতা মাতার কিছু দাযয়িত্ব সন্তান  জন্ম হওয়ার পর আসে

সন্তানের  সুন্দর নাম রাখা

সন্তানের জন্য সুন্দর নাম রাখা। এ নাম ই হবে তার পরিচায়ক। দুনিয়ার সকল ক্ষেত্রে প্রধানতম অনুষজ্ঞ। কেননা এই নামে মানুষ তাকে ডাকবে। আখেরাতে ও এ নামে তাকে ডাকা হবে। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, সাহাবীরা রাসূলকে বলল, আপনি তো পিতা- মাতা’র হক্ব বুঝালেন, ( এখন আমাদেরকে) সন্তানের হক্ব আলোচনা করেন। রাসূল সা. বললেন, তার সুন্দর নাম রাখা আর তাকে উত্তম আর্দশ শিক্ষা দেয়া। ( ইবনে মাজাহ) নাম রাখার ক্ষেত্রে নবীদের নাম, সৎ ব্যাক্তিদের নাম প্রাধান্য দেয়া উচিৎ। তাহলে নামের কারণে হয়ত তাদের আর্দশে চলার প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে। রাসূল সা. বলেন, আমার ছেলে সন্তান জন্ম হল, তখন তার নাম আমার পিতার ( আদি পিতা) নামের মত ইবরাহীম নাম রাখলাম। ( মুসলিম শরীফঃ হাদিস নংঃ ২৩১৫ )

ছেলে সন্তান, কন্যা সন্তান এভাবে  প্রভেদ রেখে না টানা। সন্তান ছেলে হোক মেয়ে হোক সবটাই আল্লাহর রহমত। তার হাতেই সবকিছুর  নিয়ন্ত্রণ। যাকে ইচ্ছা কণ্যা সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা তাকে ছেলে সন্তান দেন।  ছেলে মেয়ের প্রার্থক্য করা সেটা জাহেলী যুগের আচরণ। যাকে ইসলাম সম্পর্ণভাবে নাকচ করে দিয়েছে।

ছেলে মেয়েকে দ্বীনের ক্ষেত্রে উত্তম শিক্ষা দেয়া।  হাদিসে ছেলে সন্তান লালন- পালন সওয়াবের কথা যেমন বর্ণিত আছে,  কণ্যা সন্তান লালনের ক্ষেত্রেও বর্ণিত হয়েছে তারা জাহান্নামের পর্দা থেকে রক্ষাকবচ হবে। শীতকালে সন্তান শীত থেকে যেভাবে রক্ষা করা দরকার, গরমকালে গরম থেকে বাচাঁনোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার তেমনিভাবে সন্তান জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে  হবে। ঈমানী চেতনায় লালন পালন করতে হবে। তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে।

অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে, আজকাল অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত না করে দুনিয়াবী বিষয়ে শিক্ষা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।  আমারা দুনিয়ার পড়াশোনা কে অস্বীকৃতি জানাতে পারি না। আমাদের দুনিয়ার পড়াশোনা দরকার আছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আমাদের দরকার তবে প্রয়োজন অনুপাতে।  সবাই যেমন ইঞ্জিনিয়ার হবে না। তেমনি সবাইকে মাদরাাসায় পড়তে হবে এটা জরুরি না। তবে আমাদের উচিৎ দুনিয়াবী শিক্ষার পাশাপাশি দ্বীনী শিক্ষায় সন্তানদেরকে শিক্ষিত করা। কারণ এই দুনিয়া হলো আখেরাতের শপিংমল। শপিংমল এর পিছনে পরে আসল ঠিকানার কথা ভুলে গেলে চলবে না। কাজেই দুনিয়ার বিচারে ও তাকে বোঁকা বলা হবে।

তাদের জন্য উপযুক্ত সহপাঠী নির্বাচন করা। মুনাসিব স্কুল, মাদরাসা বাছাই করা। সন্তান  কাদের সাথে উঠাবসা করছে প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখা। সৎ লোকের সংস্পর্শে থাকার ব্যপারে চমৎকার একটি হাদিস। হযরত আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো আতর বহনকারী ও আগুনে ফুঁকদানকারী কামারের মতো। আতরওয়ালার কাছে গেলে সে হয়তো তোমাকে বিনামূল্যে কিছু আতর হাদিয়া দেবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি আতর ক্রয় করবে অথবা তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ পাবে। পক্ষান্তরে কামারের কাছে গেলে হয়তো তোমার কাপড় পুড়বে নতুবা তোমার নাকে দুর্গন্ধ লাগবে। ( বুখারী শরীফঃ হাদিস নং ৩৬৩)

সন্তানকে সুসন্তানে গড়ে তুলতে সব সময় তাদের খোঁজ খবর রাখতে হবে। তাদের প্রতিটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে পিতা মাতা। যেমনটি হাদিসে এসেছে এভাবে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোন ব্যাক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ( বুখারী শরীফ, হাদিস নংঃ ৩০০৫) ইবনে উমর রা. নিশ্চয়ই পিতা জিজ্ঞাসিত হবে তার ছেলে সম্পর্কে। আর ছেলে জিজ্ঞাসিত হবে তার পিতা সর্ম্পকে।

সন্তানের হক্ব পিতা মাতার উপর  আবার পিতা মাতার হক্ব সন্তানের উপর। বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন।

About shakhawat khan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

১৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

  নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের আকাশে আজ ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রবিউল আউয়াল ...