ইসলামিক ডেস্ক : ইসলাম প্রতিটি মানুষকে কথা ও আচরণে সংযত দেখতে চায়। অসংযত আচরণ মানব সমাজের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে। বিশেষ করে মুমিনরা বাক-সংযমী হবেন, কুৎসা ও মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকবেন- এমনটি পবিত্র কোরআন এবং রসুলুল্লাহ (সা.) এর পক্ষ থেকে মানব সমাজকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআন এবং রসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসে অপরের নামে কুৎসা রটনার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। কারোর চরিত্রের ওপর কেউ যাতে ভিত্তিহীন কলঙ্ক লেপন না করে সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে। দুঃখ জনক হলেও সত্য, সাধারণত অজ্ঞ-মূর্খদের অধিকাংশই নিরীহদের ব্যাপারে অহেতুক দুর্নাম ছড়িয়ে ইহকাল ও পরকালের অভিশপ্ত হয় এবং দুনিয়াতেও তারা শাস্তি ভোগ করে, আর পরকালেও ভোগ করবে কঠিন আজাব।
এ জন্যই রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেউ কেউ কথাচ্ছলে এমন কথাও বলে, যার কোনো প্রমাণিত ভিত্তি নেই। এ জন্য তারা জাহান্নামের এত গভীরে নিক্ষিপ্ত হবে, যার দূরত্ব পূর্ব থেকে পশ্চিমের দূরত্বের চেয়েও বেশি।’
এ কথা শুনে হজরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) বললেন : ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাদের (অসংযত) কথা বার্তার জন্যও কি আমরা বিচারের সম্মুখীন হব?
‘রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন : ‘হে মুয়ায! তিরস্কার তোমার বুদ্ধি-বিবেচনার। মানুষের জিহ্বা দিয়ে সংঘটিত পাপ ছাড়া এমন কোনো পাপ আছে কি যা তাকে নিম্নমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপের কারণ হবে।’- সহিহ বোখারি ও মুসলিম।
অপর এক হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘যে লোক আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে হয় ভালো কথা বলবে, নচেৎ নীরব থাকবে।’
মহান আল্লাহ পাক আপন কালামে পাকে বলেন : ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করুক না কেন, তাই লিখে (সংরক্ষণ করে) রাখার জন্য তার সঙ্গে রয়েছে সদা তৎপর প্রহরী।’
একবার হজরত ওকবা ইবনে আমের (রা.) আরজ করলেন : ‘হে আল্লাহর রসুল (সা.)! কীভাবে নাজাত পাওয়া যাবে?
রসুল (সা.) বললেন : ‘তোমার রসনা সংযত রাখ, তোমার বাড়িকে (পরিজনদের) সুরক্ষিত রাখ। তোমার ত্র“টি-বিচ্যুতির (পাপের) জন্য কাঁদো, আর মনে রেখ, পাষাণ চিত্তরা আল্লাহর নৈকট্য থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে।’ -আবু দাউদ, তিরমিজি।
আরেক হাদিসে রসুল (সা.) বলেন : ‘আল্লাহ পাকের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ হচ্ছে বাচাল, অশ্লীল ও অসংযত কথা বার্তায় অভ্যস্ত ব্যক্তি।’ হাদিসে আরও আছে, ‘অশ্লীল ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হারাম।- আবিদ্দুনইয়া, আবু নাঈম।
সদাচরণ কেবল যে উত্তম আমল তাই নয়, বরং একে পূর্ণ ইমানের পরিচয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একটি হাদিসে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, সবচেয়ে পরিপূর্ণ ইমান দারদের অন্তর্ভুক্ত ওই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে ভালো এবং যে আপন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি নম্র আচরণ কারী।
সদাচরণ নেকির পাল্লা ভারী করে দেয়। একটি হাদিসে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, মুমিনের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে বেশি ভারী কোনো জিনিস থাকবে না। (আবু দাউদ)।
সদাচরণের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় পাত্র হওয়া যায় এবং কিয়ামতের দিন তার নিকট বর্তী স্থানে বসার সৌভাগ্য লাভ হবে।
এই মর্মে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের সবার মধ্যে আমার কাছে অধিক প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার সর্বাপেক্ষা নিকট বর্তী স্থানে বসার সুযোগ লাভ করবে ওই সব লোক যারা তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবে। (তিরমিজি)।